খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। এ প্রক্রিয়ায় আর্থিক অবস্থা ভালো দেখানোর চেষ্টা করেছে ব্যাংকটি। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় কম সঞ্চিতি সংরক্ষণ (প্রভিশন) করে ব্যাংকটি মুনাফাও দেখিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব অনিয়ম বেরিয়ে আসার পর নতুন করে খেলাপি ঋণের হিসাব করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সাল শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত বছর শেষে ব্যাংকটি নিট মুনাফা দেখিয়েছে ৬০ কোটি টাকা।
অগ্রণী ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বিধি মোতাবেক প্রতিটি ঋণের ক্ষেত্রে বস্তুগত মাপকাঠি ও গুণগত মান উভয় ভিত্তিতে প্রাথমিক শ্রেণিমান নির্ধারণ করার নিয়ম ছিল। কিন্তু ব্যাংকটি এ নিয়ম না মেনে আর্থিক বিবরণী তৈরি করেছে। ফলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ বিবরণীতে উঠে আসেনি বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে।
এ ছাড়া পুনঃ তফসিল করার ক্ষেত্রেও নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। অনেক ঋণের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ হয়নি, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি মেলেনি ও প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ঋণ নিয়মিত না করারও নজির রয়েছে মিলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে আদায়যোগ্য প্রথম ত্রৈমাসিক কিস্তি আদায় না হওয়ার পরও তা হিসাবে দেখানো হয়নি। অগ্রণী ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় এসব অনিয়ম পাওয়ায় ব্যাংকটির মোট ৯২৫টি শাখায়ও নানা অনিয়ম ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অগ্রণী ব্যাংকের ২০১৬ সালের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ২০১৬ সালে ব্যাংকটির দুই হাজার সাত কোটি টাকা সুদ আয় দেখানো হয়েছে। একই সময়ে আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। এর ফলে সব মিলিয়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা দেখানো হয় ২ হাজার ১১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর্মীদের পেছনে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৬ কোটি। খেলাপি ঋণের জন্য সঞ্চিতি সংরক্ষণ করা হয়েছে ৭৩১ কোটি টাকা।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সভার পরই আমাদের আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত হবে। কোনো বিষয়ে ভুল-বোঝাবুঝি হয়ে থাকলেও আশা করছি তা ঠিক হয়ে যাবে।