বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আজ বুধবার শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে শততম টেস্ট ম্যাচটি খেলতে মাঠে নামবে। ২০০০ সালের ১০ই নভেম্বর ঢাকার মাঠে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই অভিষেক টেস্ট দলের অধিনায়ক ছিলেন, নাইমুর রহমান দুর্জয়।
বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে যারা খেলেছিলেন, তারা এখন কে কোথায়? কেউ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত, কেউ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত আবার কেউবা এমপি-ব্যাংকার। বুধবার এক জাতীয় দৈনিক তাদের ১১ জনের হদিস তুলে ধরেছেন-
অভিষেক টেস্টে সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন নাইমুর রহমান দুর্জয়
অভিষেক টেস্টে সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন নাইমুর রহমান দুর্জয়
নাঈমুর রহমান দুর্জয় (বিসিবির পরিচালক ও সংসদ সদস্য)
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক তিনি। নাঈমুর রহমান এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একজন পরিচালক। এছাড়া তার বড় পরিচয়- তিনি এখন জাতীয় সংসদ সদস্য। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অভিষেক টেস্টে ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে প্রথম মুদ্রা নিক্ষেপে অংশ নেন দুর্জয়। তবে খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তার টেস্ট ক্যারিয়ার। আটটি টেস্ট ম্যাচে ১৫.০০ গড়ে করেছেন ২১০ রান। বোলিংয়ে এই অলরাউন্ডার নিয়েছেন ১২ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে নিয়েছিলেন ১৩২ রানে ছয় উইকেট।
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ (ব্যবসায়ী)
বাংলাদেশের প্রথম ওপেনার হিসেবে অভিষেক টেস্টে প্রথম বল মোকাবেলা করেছিলেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ। ভারতের পক্ষে প্রথম ওভার করেছিলেন জাভাগাল শ্রীনাথ। শাহরিয়ার প্রথম ইনিংসে ৫০ বল খেলে করেছিলেন ১২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন সাত রান। সব মিলিয়ে তিনটি টেস্টে ১৯.৮০ গড়ে তার রান ৯৯। এই সাবেক ডান-হাতি ব্যাটসম্যান এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। বিদ্যুৎ আজ বিদ্যুতের তারের ব্যবসা করেন। নারায়ণগঞ্জে সুখেই কাটছে তার দিন।
মেহরাব হোসেন অপি (গার্মেন্ট ব্যবসায়ী)
প্রথম টেস্টে ওপেন করার সময় মেহরাব হোসেনের বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। ডান-হাতি এই ব্যাটসম্যান খেলেছেন ৯টি টেস্ট। ১৩.৩৮ গড়ে রান ২৪১। সর্বোচ্চ ৭১। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে বিদায় নেয়ার পর এখন ক্রিকেট কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান তিনি। গত বছর কোচিংয়ের ওপর একটি কোর্স করেছেন অপি। ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ বিসিবির কাছে জুনিয়র নির্বাচক হওয়ার জন্য তিনি আবেদন করেন। এখন তিনি একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী।
হাবিবুল বাশার সুমন (জাতীয় দলের নির্বাচক)
অভিষেক টেস্টে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান হাবিবুল বাশার সুমন। ‘মি. ফিফটি’খ্যাত হাবিবুল বাশার খেলেছেন ৫০টি টেস্ট। তিনটি সেঞ্চুরি ও ২৪টি হাফ সেঞ্চুরিতে ৩০.৮৭ গড়ে করেছেন ৩০২৬ রান। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে তার ব্যাট থেকে আসে ৭১ রান। বাংলাদেশ দলের এই সফল ব্যাটসম্যান এখন বিসিবির সঙ্গে যুক্ত। জাতীয় দলের অন্যতম নির্বাচক। ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সঙ্গে নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করছেন।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল (এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের ক্রিকেট উন্নয়নের দায়িত্বে)
অভিষেকেই সবচেয়ে বড় চমকটা দিয়েছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। প্রথম ম্যাচেই ১৪৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান। অবসর নেয়ার পর বিভিন্ন দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) তাকে নির্বাচন করেছে। তিনি এখন এসিসির ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করছেন। চীন, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড, চাইনিজ তাইপে এবং আরও বেশ ক’টি আইসিসির সহযোগী দেশ তার কাজের ক্ষেত্র। স্থায়ীভাবে তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। আমিনুল ইসলাম ক্যারিয়ারে ১৩টি টেস্ট খেলে করেছেন ৫৩০ রান। বোলিংয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট।
আকরাম খান (বিসিবির পরিচালক)
খেলোয়াড়ি জীবন অনেক আগে শেষ করলেও এখনও ক্রিকেটের সঙ্গেই রয়েছেন বাংলাদেশ দলের এই সাবেক অধিনায়ক। প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করার পর হয়েছেন ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক। এখন তিনি বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের আকরাম খান। অভিষেকে আকরাম প্রথম ইনিংসে ৬৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি করেন দুই রান। দু’বারই তাকে আউট করেন সুনীল জোশি। সব মিলিয়ে আট টেস্টে ১৬.১৮ গড়ে তার রান ২৫৯।
আল শাহরিয়ার রোকন (নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী)
ডান-হাতি এই সাবেক ব্যাটসম্যান এখন নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী। সর্বশেষ বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড সফরে গেলে খেলা দেখতে মাঠে এসেছিলেন তিনি। বাংলাদেশী সাংবাদিকদের শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি নিউজিল্যান্ডে থাকলেও মনটা পড়ে থাকে বাংলাদেশে। নিয়মিত বাংলাদেশের ক্রিকেটের খোঁজখবর রাখি।’ ক্যারিয়ারে ১৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২২.৭৬ গড়ে রান ৬৮৩। রয়েছে চারটি হাফ সেঞ্চুরি।
খালেদ মাসুদ পাইলট (কোচ)
দু’বছর আগে কোচিংয়ের দায়িত্ব পালন করার মধ্যেও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন খালেদ মাসুদ। এখন পুরোপুরি কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন এই সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। অভিষেক টেস্টে ৩২ ও ২১* রান করা খালেদ মাসুদ খেলেছেন ৪৪টি টেস্ট। মুশফিকুর রহিমের আগে টানা উইকেটকিপিংয়ের রেকর্ড ছিল তারই। ২০০৭ সালে অবসরের আগে ৮৪ ইনিংসে ১৯.০৪ গড়ে করেন ১৪০৯ রান। উইকেটের পেছনে ৭৮টি ক্যাচ ও ৯টি স্টাম্পিং করেছেন।
মোহাম্মদ রফিক (ব্যবসায়ী)
একসময় বাংলাদেশের সেরা বাঁ-হাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক এখন ব্যবসায়ী। রফিক ২০১৩ সালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে বোলিং কোচের দায়িত্ব পালনের সময় তার নামে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে। গত বছর হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের খেলোয়াড়দের পরামর্শক হিসেবে তাকে ডেকেছিল বিসিবি। এখন তিনি ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫১ ওভার বোলিং করে ১২ মেডেন দিয়ে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। ৩৩টি ম্যাচ খেলে ছুঁয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ১০০ উইকেট নেয়ার মাইলফলক। ব্যাটিংয়েও তার পারফরম্যান্স ভালো। চারটি হাফ সেঞ্চুরি ও একটি সেঞ্চুরিতে করেছেন ১০৫৯ রান।
হাসিবুল হোসেন শান্ত (জুনিয়র নির্বাচক ও মৎস্য ব্যবসায়ী)
ক্রিকেটীয় জীবনের পর ব্যতিক্রমী পেশাই বেছে নিয়েছেন ডান-হাতি পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত। নিজের খামারের বড় বড় মাছের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। এখন আবার বিসিবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। জুনিয়র নির্বাচক দলের সদস্য তিনি। অভিষেক টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের একমাত্র উইকেট পেয়েছিলেন। পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ খেলা শান্ত পেয়েছেন মাত্র ছয়টি উইকেট। ব্যাটিংয়ে ৯৭ রান।
রঞ্জন দাস (বর্তমান নাম মাহমুদুর রহমান, ব্যাংকার)
বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র রঞ্জন দাসেরই ওই একটি টেস্ট খেলে ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে। অভিষেক টেস্টে দুই রান করেছিলেন। নিয়েছিলেন একটি উইকেট। রঞ্জন দাস এখন ব্যাংকার। ধর্মান্তরিত হয়ে একটি ব্যাংকের বড় পদে চাকরি করছেন।