এক দেশ এক দাম - বাংলাদেশে ইন্টারনেট মূল্য

Author Topic: এক দেশ এক দাম - বাংলাদেশে ইন্টারনেট মূল্য  (Read 882 times)

Offline sisyphus

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 424
  • RAM
    • View Profile
দেশে বেসরকারিভাবে দুই লাখ ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি (সংযোগ) তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কানেক্টিভিটি বা সংযোগ তৈরি করা হলে দেশের দুই লাখ স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিস, ইউডিসি (ডিজিটাল সেন্টার), পাঠাগারসহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনা খরচে সংশ্লিষ্টরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু জেলা বা উপজেলা নয়, ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানও এই সুবিধার আওতায় আসবে বলে জানা গেছে।
দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্যোগটির ‘পরিকল্পনাপত্র’ সম্প্রতি সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে জমাও পড়েছে। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চগতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে দেশে ইন্টারনেট ঘনত্বও (ব্যবহারের হার) বাড়বে। সেই সঙ্গে দেশজুড়ে ইন্টারনেটের এক দাম বাস্তবায়ন করা যাবে।
এর আগে সরকার ঘোষণা দিয়েছিল— জেলা, উপজেলা হয়ে ইউনিয়ন পর্যন্ত ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হবে। এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হলে জেলায় ১০০, উপজেলায় ৪০ এবং ইউনিয়নে ১ গিগাবাইট গতির ইন্টারনেট পৌঁছে যাবে। সম্প্রতি প্রকল্পটি একনেকে পাসও হয়েছে।
এর আগে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রকল্পটির তৃতীয় ফেজ ‘ইনফো সরকার-৩’ প্রকল্পে ১ হাজার ২০০ ইউনিয়নকে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের আওতায় আনা, ৫৫৪টি মিনি বিপিও সেন্টার গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
সম্প্রতি একনেক অনুমোদিত বর্তমান প্রকল্পের ব্যাপ্তি বেড়েছে। আইএসপিএবি বলছে, সরকার যে টাকা খরচ করে কাজটি সম্পন্ন করবে সেটি তারা (আইএসপিএবি) করতে আগ্রহী। এর ফলে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে।
অন্যদিকে দুই লাখ কানেক্টিভিটিতে যে সংযোগগুলো দেওয়া হবে, সেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। সেই সংযোগ তৈরি, চালু, ব্যান্ডউইথ পরিবহন, মেরামত, এককালীন চার্জ, ডাটা কানেক্টিভিটি চার্জ ইত্যাদির জন্য সংগঠনটি কোনও চার্জ নেবে না। কেবল মাসিকভিত্তিক বাজারমূল্যে (আইআইজি থেকে কেনা দামে) ব্যান্ডউইথের খরচটাই নেবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই কাজ সরকারই করতে চায়। তবে সংযোগ দেওয়ার পরে তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোকে (নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তথা মাটির নিচ দিয়ে তৈরি ক্যাবল সংযোগ)। যাদের কাজ হবে রাজধানী থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সরকারের তৈরি ক্যাবলের মাধ্যমে সেবা দেওয়া। এই সেবাদানের মাধ্যমে সেবা চার্জও দিতে হবে এনটিটিএনকে। ওই সেবা চার্জ আবার নেওয়া হবে আইএসপিগুলোর কাছে থেকে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইএসপিএবি বলছে, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো ইউনিয়নের ‘পিওপি’ পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ নিশ্চিত করা। যেহেতু সরকার ফাইবার অপটিক ব্যাকবোন তৈরি করে রাখছে সেহেতু এনটিটিএন-এর কোনও ধরনের মধ্যস্থতা ছাড়াই আইএসপিগুলো সরকারি ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুযোগ পেতে চায়।

আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আমাদের ব্যবসায়িক কেসটা হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। দুই লাখ সংযোগ তৈরির পরে যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ উদ্বৃত্ত থাকবে তা স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করার সুযোগ থাকবে। ওটা দিয়েই আমরা খরচ তুলে নিতে পারবো।’

তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এনটিটিএন যদি এই সেবাদানে মধ্যস্থতা করে তাহলে গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ আরও বাড়বে। কারণ হিসেবে আইএসপিএবির সভাপতি উল্লেখ করেন, ‘এনটিটিএন যে সেবা চার্জ ধরবে, তা দিতে হবে আমাদের। আইএসপিগুলো কোথা থেকে দেবে? গ্রাহকের কাছ থেকেই তো! তাই আইএসপিগুলো যদি সরাসরি সেবাদান শুরু করে, তাহলে ইন্টারনেটের চার্জ বেশি হবে না।’

রাজধানীর চেয়ে ঢাকার বাইরে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বেশি উল্লেখ করে আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকার বাইরে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ কমানো সম্ভব। তাহলে সরকারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ইন্টারনেটের দামও কমানো যাবে। তা না হলে ঢাকার বাইরে ইন্টারনেটের দাম আরও বাড়বে।’

জানা গেছে, দেশে এখন শতাধিক জাতীয় পর্যায়ের লাইসেন্সধারী ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আইএসপিএবির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে, কারা এই সেবাদানের সঙ্গে যুক্ত তা পর্যবেক্ষণ করা সহজ হবে। ফলে সাইবার নিরাপত্তাও জোরদার করা যাবে।

আইএসপিএবির সভাপতি আরও বলেন, “এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দেশে ‘এক দেশ এক দাম’-এ ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যাবে। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে জনসম্পদ উন্নয়ন ও বেকার সমস্যার সমাধান করা যাবে।” তিনি মনে করেন, এতে নতুন ২৫-৩০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এছাড়া ইন্টারনেট সেবায় প্রতিযোগিতা আসার মাধ্যমে সেবার মানও বৃদ্ধি পাবে।

আশা করা হচ্ছে, উদ্যোগটি সফল হলে দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের হারও বাড়বে। বর্তমানে দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ গ্রাহক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। যদিও জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা-২০০৯ -এ ২০১৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ছিল ৩০ শতাংশ।

তথ্যসূত্রঃ বাংলাট্রিবিউন
Mr. Rafi Al Mahmud
Sr. Lecturer
Department of Development Studies
Daffodil International University