শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন হলো ভিটামিন-ই। এটি শারীরিক বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ থাকতে ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, চোখের ছানি, মাংসপেশির ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ও আন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন-ই গ্রহণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। শুধু শারীরিক সুস্থতায় নয়, বরং ত্বক এবং চুলের জন্যও উপকারী এই ভিটামিন। এর অভাবে চুল পড়ে যাওয়া, পেশি দুর্বল হওয়া, ভারসাম্যহীনতা, চোখে ঝাপসা দেখাসহ প্রভৃতি নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ খাবার রাখা জরুরি।
ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ কিছু খাবার
বাদাম, খাদ্যশস্য, ভুট্টার ভ্রুণ এবং গাঢ় সবুজ শাকসবজি ভিটামিন-ই এর চমৎকার উৎস। এছাড়া লাল মরিচের গুঁড়া, সূর্যমুখীর বীজ, কচুর মূল, জলপাই প্রভৃতি খাবারেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-ই রয়েছে। এছাড়া শরীরে ভিটামিন-ই এর চাহিদা পূরণে খাবারের পাশাপাশি আপনি ভিটামিন-ই সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করতে পারেন।
ভিটামিন-ই গ্রহণের সুবিধা
কোষকে সুরক্ষা দেয়
ভিটামিন ই- তে এমন এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। সাধারণত দূষণ এবং ধূমপান থেকে শরীরে যে ক্ষতিকারক মুক্তমৌল তৈরি হয় তার বিরুদ্ধে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুদ্ধ করে। এতে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন-ই’ সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার শরীরে ‘ইমিউন সেল’ বা রোগ প্রতিরোধকারী কোষ তৈরিতে সহায়ক। এর ফলে সহজেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ক্ষত সারাতে সাহায্য করে
বাজারে ভিটামিন-ই যুক্ত তেল পাওয়া যায়। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর নানা উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল কাটাছেড়ার ক্ষত ও ব্রণ সারানো।
বয়সের ছাপ দূর করে
কোষ পুণর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য ভিটামিন-ই উপকারী হওয়ায় এটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম।
অকালে পাকা চুল রোধ
চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-ই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুপ পড়া, অল্প বয়সে চুল সাদা বা ধুসর হওয়া থেকে বাঁচতে চাই ভিটামিন-ই।
ভিটামিন-ই গ্রহণের অসুবিধা
অ্যালার্জির সমস্যা
ভিটামিন-ই গ্রহণের পর কারও কারও ক্ষেত্রে কোনো অস্বাভাবিকতা কিংবা অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থায় ক্ষতি
গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের বিকাশ এবং বৃদ্ধি নির্ভর করে মায়ের সঠিক পুষ্টি গ্রহণের ওপর। এ সময় অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করলে আবার ভ্রুণের ক্ষতি হতে পারে। কাজেই গর্ভাবস্থায় ভিটামিন গ্রহণে সাবধান থাকুন।
বুকের দুধ খাওয়ালে
শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য স্তনদানরত মহিলার সঠিকমাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ জরুরী। এ সময় অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণে আপনার ও শিশুর অনেক ক্ষতি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণকারী শিশুর শরীরে ভিটামিন-ই এর মাত্রা কম থাকে। তখনও নানা সমস্যা হতে পারে। কাজেই ভিটামিন গ্রহণে এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অন্য ওষুধ গ্রহণ
আপনি যদি ভিটামিন-ই গ্রহণের সময় অন্য কোনো ওষুধ খেতে থাকেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাবেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দুটি ওষুধের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ঘটে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা
চিকিৎসাগত বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা উপস্থিত থাকলে ভিটামিন-ই গ্রহণের ফলে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
ভিটামিন-ই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
শরীরে ভিটামিন-ই এর যদিও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তবু সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে কিছু অবাঞ্ছিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। তবে অল্প সময়ের জন্য অনুমোদিত মাত্রায় ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে সাধারণত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। কিন্তু দৈনিক ৪০০ ইউনিটের বেশি এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে নানা ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এগুলো হলো- চোখে ঝাপসা দেখা, ডায়রিয়া, মাথাঘোরা, মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব, পেট কামড়ানো, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা প্রভৃতি। এক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন-ই গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।