নীড় ছোট, তো...?
শহরে বাসাবাড়ি মানেই এখন সাড়ে নয় শ বা এগার শ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট৷ এসব ফ্ল্যাটবাড়ির ছোট ছোট ঘরে মাথা গুঁজে থাকাটাই দায়, সেখানে নান্দনিক অন্দরসাজের বিষয়টি অনেকের কাছে বিলাসিতা বলে মনে হয়৷ তবে এখন অন্দরসাজ মানেই দামি আসবাব কিংবা অযাচিত অনুষঙ্গের ব্যবহার নয়, বরং ঘরের পরিসরটার যথাযথ ব্যবহার করে দেশীয় উপকরণে অন্দরে আনা যায় নান্দনিকতা।
অন্দরসজ্জা প্রতিষ্ঠান লুক লাইকের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার রাহেলা খাতুন জানালেন, ছোট বাসাবাড়ির অন্দরসাজে এখন জায়গার ব্যবস্থাপনা বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এভাবে ঘরের প্রতিটি জায়গাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়৷ ছোট ফ্ল্যাটের অন্দরসাজের বেলায় কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সে পরামর্শ দিয়েছেন এই অন্দরসজ্জাবিদ৷
হালকা নকশার আসবাব
ছোট বাসাবাড়িতে আসবাব সাধারণত হালকা নকশার এবং নিচু (লো-হাইট) হলে ভালো৷ কারণ জমকালো নকশার আসবাব ঘরকে জবরজং করে তোলে৷ ঘর সাজাতে রড আয়রনের আসবাব ব্যবহার করতে পারেন৷ আসবাব যদি কাঠের হয় তাহলে নকশাটা ফ্ল্যাট বা হালকা হলো ভালো দেখাবে৷ এই ধরনের নকশার আসবাব ঘরকে খোলামেলা রাখতে সাহায্য করে৷
আয়নায় সাজুক ঘর
ছোট পরিসরের ঘরকে বড় দেখাতে অন্দরসজ্জায় আয়নার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়৷ আয়নায় প্রতিচ্ছবি ঘরের আয়তনকে বড় দেখাতে সাহায্য করে৷ আয়নার নকশা আর আয়তনটা নির্ভর করবে কোন ঘরের দেয়ালে তা লাগাচ্ছেন তার ওপর৷ যেমন প্রবেশপথের দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে পারেন আয়তাকার নকশার আয়না৷ ঘরের যেকোনো একটা সুবিধাজনক দেয়ালকে ডেকোরেটিভ করে তুলতে একটা বর্গাকৃতি আয়না ঝুলিয়ে দিন। এর নিচে একটি তাকে মাটির তৈজসপত্র আর গাছ রাখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে গাছ রাখতে বাঁশের তৈরি পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। এদিকে বসার ঘরের দেয়ালে দেশীয় মোটিফের আয়নাটা ভালো লাগবে বলে জানালেন এই অন্দরসজ্জাবিদ৷
দেয়াল তাক
ছোট বাসাবাড়িতে খুব বেশি আসবাবের ব্যবহার না করে দেয়ালজুড়ে বসিয়ে দিতে পারেন নানা ধরনের হ্যাঙ্গিং র্যা ক৷ বৈঠকখানা বা শোবার ঘরে এসব র্যা কের মধ্যে সাজিয়ে রাখতে পারেন শোপিস৷ রান্নাঘরে টুকিটাকি জিনিস রাখতে কর্নারে বানিয়ে নিতে পারেন এমন তাক৷
সবুজের স্নিগ্ধতায়
অন্দরসজ্জায় গাছ এখন বহুল ব্যবহৃত৷ তবে বারান্দা, সিঁড়ি বা ঘরের দেয়াল তো গাছ দিয়ে সাজানো হয়৷ চাইলে ঘরের ভেতরেও তৈরি করতে পারেন গাছের বাগান৷ এ জন্য লাগবে মাটির পটারি, কলস, টব আর নকশা করা প্ল্যান্টস পট। এবার পটারির ওপর মাটির টবগুলো বসিয়ে তার মধ্যে গাছগুলো রেখে দিন। বাগানের একপাশে কিছু পটারির ওপর টব রেখে তার ওপর কলসিগুলো কাত করে দিন। এর মাঝে বসিয়ে দিতে পারেন কৃত্রিম ফোয়ারা। এবার গাছগুলো পাথর দিয়ে ঘিরে রেখে মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া আর হাঁস বসিয়ে দিন।
মেঝেতেই আয়োজন
বিভিন্ন উৎসবের আমন্ত্রণে মেঝেতেই চলতে পারে অতিথি আপ্যায়নের আয়োজন৷ এ জন্য ঘরের মেঝেতে বড় দুটি কুশন বিছিয়ে নিন৷ এক পাশে রেখে দিন কিছু গাছ৷ আরেক পাশে ছোট টেবিল সাজাতে রাখতে পারেন নানা ধরনের শোপিস৷ এমন আয়োজনকে আলোকিত করতে ব্যবহার করুন মোম৷
সাজুক দেয়াল
হোক না ঘরগুলো ছোট, তাই বলে কিন্তু ঘরের দেয়ালগুলোকে ফাঁকা রাখলে চলবে না৷ নানা শৈল্পিক জিনিসের ব্যবহারে ঘরের দেয়ালগুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারেন৷ বসার ঘরের দেয়াল সাজাতে দেয়ালঘড়ির পাশাপাশি ঝুলিয়ে দিতে পারেন কুলা আর মাটির সরা। প্রবেশপথের দেয়ালে রাখতে পারেন মাথাল। এ ছাড়া নকশিকাঁথার ওয়াল ম্যাট, বিভিন্ন ধরনের পেইন্টিং ঘরের দেয়ালে এনে দেয় নতুন ভাষা৷
শৌখিন অনুষঙ্গে
ছোট ফ্ল্যাটের অন্দরসাজে নান্দনিক আবহ আনতে ব্যবহার করতে পারেন শৈল্পিক কিছু অনুষঙ্গ৷ যেমন খাবার টেবিলে বসিয়ে দিতে পারেন রানার, ডাইনিংয়ের বেসিনের ওপর থাকতে পারে গাছ আর মোম৷ বসার ঘরের টেবিলে কাচের ছোট জারে কিছু শুকনো রঙিন পাতা রেখে তার ওপর তাজা ফুল ছড়িয়ে দিন৷ বাথরুমের বেসিনের সাইডে তাক বসিয়ে তাতে প্রয়োজনীয় প্রসাধনীর পাশাপাশি রেখে দিন তাজা ফুল৷
আর এভাবেই ছোট ছোট জিনিসের ব্যবহারে ছোট ফ্ল্যাটের ঘরগুলোকে পরিপাটী করে সাজিয়ে তুলুন৷ নীড় ছোট হলেও ক্ষতি নেই।