সোনালি আঁশে রঙিন
শুরু হয়ে গেছে নববর্ষ। বাঙালির নতুন বছর। পোশাক থেকে শুরু করে অন্দর—সবকিছুতেই যেন ছড়িয়ে যায় বৈশাখী আমেজ, এমনটাই চান অনেকে। থাকা চাই বাঙালিয়ানা। তাই তো অন্দরে মাটি, কাঠ কিংবা বেতের তৈরি বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করেন অনেকে। এবারে চাইলে বৈচিত্র্য আনতে পারেন ঘর সাজানোর উপকরণে। আর তা সোনালি আঁশ, মানে পাটজাত পণ্য দিয়ে।
অন্দরের নানা কিছু
আপনার শোবার ঘরের বিছানা চাদর, পর্দা থেকে শুরু করে ম্যাট্রেস, টি-কোজি, হট প্লেস ম্যাট, টেবিল ম্যাট, ছোট ও বড় ঝুড়ি, টিস্যু বক্স, ঢাকনা, টেবিল ল্যাম্প, রানার, গোলাকৃতির বাতি, কুশন কাভার, ডিভান, পাপস—সবকিছুই মিলবে। শুধু আগেকার সেই এক রঙেরই নয়, বরং এর প্রতিটিতেই রয়েছে নানা ফুল-পাতা, কলকির কাজ। যেমন পাটের তৈরি টেবিল ক্লথেই রয়েছে এমব্রয়ডারির কাজ। পুঁতি, লেস, বোতাম বসানো কুশন কভার। আবার লাল-সাদা কিংবা কালোর মধ্যে গাড় নীলের নকশা করা আছে কোনোটায়। পাটের তৈরি পর্দায় রয়েছে ফুলেল মোটিফ।
সোনালি আঁশের শুরুর কথা
হাঁটি হাঁটি পা পা করে শিশুর বেড়ে ওঠা। তারপরে একটা সময় সে হয়ে ওঠে স্বাবলম্বী। তেমনি আমাদের এই সোনালি আঁশ। কথাগুলো বলছিলেন জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের পরিচালক মো. মঈনুল হক। শুরুটা সেই ১৫৯০-এর দিকে। তখনকার সম্রাট আকবরের শাসনামলে পাট দিয়ে তৈরি হতো চট। মো. মঈনুল হক বলেন, ‘কিন্তু ১৮৯০ সালের পর বাজারে সিনথেটিক এবং তারপর প্লাস্টিকের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি এই সোনালি আঁশ। সম্প্রতি আবার এই চিত্র অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে।’
নববর্ষে পুরো অন্দরটাই সাজিয়ে তোলা সম্ভব পাটের জিনিস দিয়ে। এ তালিকায় রাখতে পারেন পাটের তৈরি পুতুল (যেমন খরগোশ, প্যাঁচা) যেকোনো আকৃতির ফুলদানি, দোরঘণ্টি, ওয়াল হ্যাঙ্গিং, ট্যাসেল, শোপিস, ঝুলিয়ে রাখার জন্য বড় আকৃতির ল্যাম্পশেড, ফটোফ্রেম, ছোট বাক্স, কার্ড হোল্ডার ইত্যাদি। লোকাজ মোটিফে তৈরি করা হয়েছে দোরঘণ্টি। কয়েকটি প্রজাপতি তার সঙ্গে টুংটাং মাটির ঘণ্টা। কিংবা সোনালি আঁশের তৈরি ময়ূরে বসানো গ্লাস ও বিভিন্ন পুঁতি। এমনকি আপনার দাবা খেলার বোর্ডটিও হতে পারে পাটের।
কথা হলো ব্যাগিচ্যুডের চেয়ারপারসন সাব্বির রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে পাটের তৈরি সব ধরনের ব্যাগই রয়েছে। এর সঙ্গে সুতি কাপড়ও ব্যবহার করা হয়। আমরা বিভিন্ন প্রিন্ট এবং নকশার কাজ করে থাকি এই সব ব্যাগে।’ চাইলে লিভিং রুমে রাখতে পারেন পাটের জমিনে আঁকা ছবি। কৃষক, ইলিশ, দোয়েল আঁকা ছবিগুলো মানিয়ে যাবে নববর্ষে। এ ছাড়া তালিকায় রাখতে পারেন পাটের তৈরি অন্যান্য জিনিস। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে পারেন পাটের তৈরি কার্ড দিয়ে। একই সঙ্গে নববর্ষে উপহার হিসেবে প্রিয়জনকে দিতে পারেন পাটের তৈরি নোটবুক, ল্যাপটপ ব্যাগ, ফোল্ডারও।
যেখানে পাবেন
পাটের তৈরি বিভিন্ন জিনিস পাবেন ঢাকার ফার্মগেটের জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের শোরুমে। এখানেই মিলবে পাটের প্রতিটি জিনিস। এ ছাড়া দোয়েল চত্বর, মৌচাক, ফ্যাশন হাউস আড়ংয়েও পাওয়া যাবে। বিভিন্ন ব্যাগ কিনতে পারেন ব্যাগিচ্যুড থেকে। চাইলে নিজ পছন্দের কোনো কথা কিংবা প্রিন্ট অর্ডার করে তৈরি করে নিতে পারেন এখান থেকে।
দরদাম
পাটের বিভিন্ন শিল্পের দামটাও পড়বে বিভিন্ন। যেমন টি-কোজি ৩০০ টাকা, হাতলসহ কিংবা হাতল ছাড়া ঝুড়ি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেবিল ম্যাট ১০০ টাকা, এমব্রয়ডারি টেবিল ক্লথ ১৪০০ থেকে ২০০০ টাকা, বাটি ২১০ টাকা।
এ ছাড়া চাদর, কুশন কাভার, ছোট ডিভাইন, পর্দা, পাপোশ, ম্যাট্রেস, টেবিল ল্যাম্প, দেয়ালে রাখার শিক্কার দাম পড়বে ৮০ থেকে ২০০০ টাকা।
অন্দরসজ্জার দোরঘণ্টি, ট্যাসেল, পুতুল, ফুলদানি, টিস্যু বক্সের দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা।