সংবাদমাধ্যমগুলোয় হোয়াটসঅ্যাপের প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক গবেষণার তথ্যমতে জনসাধারণের মাঝে সংবাদ আদান-প্রদান এবং তা নিয়ে আলোচনা করার এক শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে দাঁড়াচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ। তবে ভিন্ন ভিন্ন দেশে মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারে তারতম্য রয়েছে। গবেষণাটিতে চালানো জরিপ অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় শতকরা ৫০ জনের বেশি সপ্তাহে অন্তত একবার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন সংবাদের জন্য। যেখানে সংখ্যাটি যুক্তরাজ্যে ৫ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩ শতাংশ। এ দুই দেশে সংবাদের জন্য এত কমসংখ্যক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর কারণ হিসেবে ব্রেক্সিট বিতর্কে জনগণের মাঝে ভুল-বোঝাবুঝির ইঙ্গিত করেছে ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট।
‘রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজম’ এই গবেষণাটি করেছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার ৩৬টি দেশে এই গবেষণা চালানো হয়। যেখানে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইন্টারনেটভিত্তিক বাজার গবেষণা সংস্থা ইউগভ ৭১ হাজার ৮০৫ জনকে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহের জন্য। গবেষণার জন্য অর্থ সহায়তা করেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি এবং অন্যদের মধ্যে গুগল উল্লেখযোগ্য।
রয়টার্স ইনস্টিটিউটের ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট ২০১৭ অনুসারে সংবাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মেসেজিং সেবার জন্য ফেসবুক এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। সংবাদের জন্য শতকরা ৪৭ জন সপ্তাহে অন্তত একবার ফেসবুক ব্যবহার করে। তবে এ ক্ষেত্রে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যথাক্রমে ইউটিউব এবং কাকাও টক প্রাধান্য বিস্তার করছে। অন্যদিকে হোয়াটসঅ্যাপের ভূমিকাও কম নয়। গোপনে সংবাদ আদান-প্রদান এবং সে বিষয়ে আলোচনার জন্য হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী হোয়াটসঅ্যাপ ৩৬টি দেশের মধ্যে ৯টি দেশে সংবাদের জন্য দ্বিতীয় জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম। আর পাঁচটি দেশে হোয়াটসঅ্যাপের অবস্থান তৃতীয়।
হোয়াটসঅ্যাপের এমন উত্থানের পেছনে গবেষণাকারীরা বেশ জোরালো ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। অ্যাপটিতে ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে বার্তার প্রেরক ও গ্রাহক বাদে অন্য কেউ জানতে পারবে না অ্যাপটির মাধ্যমে কী আদান-প্রদান করা হলো। এমনকি নিরাপত্তা সংস্থাসহ হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষও নজরদারি করতে পারবে না। ফলে তাদের বার্তার গোপনীয়তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে। গবেষক নিক নিউম্যান এভাবে বিশ্লেষণ করেন, ‘তুরস্কসহ কিছু দেশে আমরা হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারে বড় ধরনের বৃদ্ধি দেখেছি, যেখানে ফেসবুকের মতো খোলামেলাভাবে সরকারবিরোধী মত প্রকাশ করা বেশ বিপজ্জনক। সে জন্য জনগণ সেখানে ক্লোজড গ্রুপ ব্যবহার করছে এবং আরও দ্বিধাহীনভাবে তাঁদের মত প্রকাশ করছে।
কিছু জায়গায় রেডিও স্টেশন থেকে শ্রোতাদের বলা হয় ছোট করে অডিও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠাতে। আর কিছু পত্রিকার ওয়েবসাইটে হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করার জন্য আলাদা বোতাম যোগ করা হয়েছে। সংবাদ আদান-প্রদান ও গোপনীয়তা বজায় রেখে সে বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার মতো বড় ধরনের সুবিধা থাকলেও এর খারাপ দিকও রয়েছে। তা হলো মিথ্যা বা ভুয়া সংবাদ। যা সাধারণত অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবহারকারীরা মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর নিয়ম-নীতির দুর্বলতা ও ত্রুটিপূর্ণ অ্যালগরিদম ব্যবহারের জন্যই এমন হয়ে থাকে।