আম পছন্দ করেন না কে? এখন জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। মধু মাস জৈষ্ঠও যাই যাই করছে। বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল হলেও বর্তমানে মানুষের নিত্য দিনের পছন্দ, উৎপাদন ও বাণিজ্যের তালিকায় সম্ভবত আম-ই রয়েছে প্রথমে।
এই আমের মৌসুম আসলে মোট পাঁচ মাস। এর মধ্যে জুন থেকে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হচ্ছে সবচেয়ে রমরমা। এখন আমাদের দেশে বাণিজ্যক ভিত্তিতে প্রায় ২৫ জাতের আম উৎপাদন হয়। কিন্তু তার মধ্যে উন্নত জাতের আম আছে মাত্র ১০টির মত।
প্রতিদিনের খাবার টেবিলে পছন্দের তালিকায় আম; বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের প্রথম সারিতে থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। ছেলে-বুড়ো, কার না পছন্দ এই রসালো ফলটি! বাংলাদেশের সকল বয়সের প্রায় ৯৯% জন মানুষই কিন্তু আম পছন্দ করেন। কিন্তু কতজন মানুষ আমের সঠিক সময় সম্পর্কে সচেতন? নিজে যেমন সচেতন নন তেমনি অন্যকেও সচেতন করতে সচেতন করতে সহায়তা করতে পারছেন না।
সঠিক সময়ে সঠিক জাতের আম খাওয়ার বিষয়ে তাঁদের সচেতনতা যথেষ্ট নয়। এই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ফল ব্যবসায়ীরা। নিজের স্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা অনেকটাই নির্ভর করে ক্রয়সংক্রান্ত সতর্কতা ও সচেতনতার উপর।
সাধারন মানুষকে সাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো আম থেকে রক্ষা করর উদ্দেশ্যে আম গবেষক জনাব মাহবুব সিদ্দিকী ‘কোন আমটি কখন খাবেন’ নামের একটি বই লিখেছেন। সেখানে তিনি কিছু নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়েছেন।
জাতের দিক থেকে তিন ভাগে বিভক্ত বাংলাদেশের আম যথা- আগাম জাত, মধ্য মৌসুমি জাত এবং নাবি জাত।মে মাসের মধ্য থেকে জুনের মাঝামাঝি সময়ে পাকে আগাম জাতের আম।এগুলোর মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, রাণী-পছন্দ, বৃন্দাবনি, গুলাবখাশ ও বারি-১(বাংলাদেশ কৃষি গবেষণগারে উদ্ভাবিত)।
জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পাকতে শুরু করে মধ্য-মৌসুমি আম। এগুলোর মধ্যে প্রধান হলো ল্যাংড়া।এর সাথেই আছে লক্ষণভোগ, হিমসাগর, ক্ষীরসাভোগ(ক্ষীরশাপাতও বলে), খুদিক্ষীরসা, হাঁড়িভাঙ্গা, বোম্বাই, বারি-২(বাংলাদেশ কৃষি গবেষণগারে উদ্ভাবিত)ইত্যাদি।
আর জুলাইয় মাসের প্রথম থেকে সেপ্টেম্বর মাসর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পাকে পাওয়া যায় নাবি জাতের আম যথা ফজলি, আম্রপালি, মোহনভোগ, গৌড়মতি, বারি-৪(বাংলাদেশ কৃষি গবেষণগারে উদ্ভাবিত), আশ্বিনী’সহ আরে কয়েক জাতের আম।
যে আমগুলো বাজারে দেখা যাচ্ছে সেগুলো প্রাকৃতিক নিয়মেই নির্দিষ্ট সময়ে পুষ্ট হচ্ছে, পাকছে। আমচাষিরা এটা জেনে এবং মেনে যদি গাছ থেকে আম পাড়েন তাহলে ভোক্তা সাধারণ নিশ্চিন্ত থাকতে পারতেন।দেশটা তো বাংলাদেশ! বাজারে পাওয়া মাত্রই বিচার বিচার-বিবেচনা না করে খাওয়ার লোভ, বাণিজ্যিক প্রতিযোগতা এবং অতি মুনাফা লোভের আশায় তা আর হচ্ছে কই। ফলে সচেতন হতে হবে ভোক্তাদেরকেই। তাঁরা যদি সময়টা জেনে-বুঝে আম কেনেন, তাহলে বদলে যেতে পারে বর্তমান বাজারচিত্র।
আমাদের দেশের স্থানীয় জাতের আম ছাড়া উন্নত জাতের আমগুলো পাকলে লাল, হলুদ বা কমলা রঙ ধারণ করে না। স্বাভাবিক সবুজের সাথে লাল/হলুদ/কমলা রঙের আভাযুক্ত হয়। আশ্বিনী জাতের আম গাড় সবুজ বা কালচিটে সবুজ রঙ ধারণ করে।
জেনে নিন বিশেষ কয়েকটি জাতের আম কেনার সঠিক সময়-
*গোবিন্দভোগ – মে মাসের ১৫ থেকে ৩০ তারিখ পর্য্ন্ত।
*গোপালভোগ – মে মাসের ২৫ থেকে জুন মাসের ১০ তারিখ পর্য্ন্ত।
*ক্ষীরসাভোগ ও হিমসাগর – জুন মাসের ১০ থেকে ৩০ তারিক পর্য্ন্ত।
*ল্যাংড়া, বারি–২, লক্ষণভোগ, বোম্বাই – জুনে মাসের ১৫ থেকে জুলাইয়ের ১৫ তারখ পর্য্ন্ত।
*আম্রপালি – জুন মাসের ২৮তারিখ থেকে জুলাইয়ের২৫ তারিক পর্য্ন্ত।
*ফজলি – জুলাই মাসের ৫ তারিখ থেকে আগস্টের ১৫ তারিক পর্য্ন্ত।
*আশ্বিনী – জুলাই মাসের ৭ তারিথ থেকে সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ পর্য্ন্ত। দিনাজপুরের সূ্র্যপুরি আমও এসময়ে পাকে।
নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন হতে সহায়তা করুন। সকলের সম্মিলিত সচেতনতা ও প্রচেষ্টাই পারে অসাধু চক্রকে রুখতে।