বাড়িতে নতুন শিশু অতিথিটি হয়ে ওঠে সবার মধ্যমণি। আদরের ধনটিকে কোলে নিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দেন বাবা-মা, আত্মীয়েরা। সবাই চান মায়া-ভালোবাসায় শিশুটিকে জড়িয়ে রাখতে। তবে আত্মীয়স্বজন, এমনকি বাবা-মায়ের উষ্ণ ভালোবাসা শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
জন্মের প্রথম কয়েক দিন সাধারণত বাড়িতে বা হাসপাতালে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অনেক লোক শিশুকে দেখতে আসেন, অনেকে অপরিচ্ছন্ন অবস্থাতেই শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করে বা চুমু খায়, যা নবজাতকের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
অনেক বাবা-মা অভিযোগ করেন, শিশুকে আত্মীয়স্বজনের কোলে দিতে না চাইলে রাগ হন। দেখা যায়, বাসায় কোনো আত্মীয় এসেই শিশুটিকে কোলে নিতে চান। অনেকে ঘুম থেকে উঠিয়েও আদর করতে শুরু করেন বাচ্চাকে। টেনে ধরেন গাল। তবে এই আদর প্রদর্শন কখনো কখনো ক্ষতিই বয়ে আনে।
চিকিৎসকেরা বলেন, শিশুরা খুবই নাজুক হয়, বিশেষ করে নবজাতক। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যখন নবজাতককে বাসায় আনা হয়, তখন তার পরিচর্যার ক্ষেত্রে পরিবারের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। শিশুকে পরিচর্যার ক্ষেত্রে বেশি মানুষের হাত না লাগালেই ভালো।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) মহাসচিব চিকিৎসক রুহুল আমিন বলেন, নবজাতকের ক্ষেত্রে ইনফেকশন বা সংক্রমণ বেশি হয় অপরিষ্কার হাত থেকে। বাইরে থেকে এসে পরিষ্কার না হয়ে শিশুকে ধরলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। কারও হাঁচি-কাশি থাকলে তা শিশুর শরীরে ছড়িয়ে যায়। তাই এই বিষয়গুলোতে বাবা-মায়ের একটু কড়া হওয়াই উচিত।
শিশুর জন্য মায়ের কোল বা মায়ের স্পর্শ সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করেন চিকিৎসক রুহুল আমিন। তিনি বলেন, নবজাতককে যত কম নাড়াচাড়া করা যায়, তত ভালো। মায়ের কোলই শিশুর জন্য সেরা। মা ও বাবাকেই সন্তানের পরিচর্যায় লক্ষ রাখতে হবে।
সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। বার্তা সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আত্মীয়স্বজন কারও মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মৃত্যু হয়েছে ১৮ দিনের শিশু মারিয়ানার। মারিয়ানার মা নিকোল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়ের মৃত্যু সংবাদ জানান। তিনি লেখেন, এইচএসভি-১ নামের একটি ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল মারিয়ানা। কারও চুমু থেকেই ভাইরাসটি বাসা বেঁধেছিল ছোট্ট শরীরে। দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ে। জন্মের কয়েক দিন পরই মারাত্মক সর্দি হয় মারিয়ানার। সেখান থেকে ভাইরাস আক্রমণ করে মস্তিষ্কের কোষে। এরপর মেরুদণ্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত দেহে। মাত্র ১৮ দিন বয়সে মৃত্যু হয় মারিয়ানার।
ক্যালিফোর্নিয়ার শিশু বিশেষজ্ঞ তানিয়া অল্টম্যান জানালেন, কারও শরীরে এই ভাইরাস থাকলে শিশুর সংস্পর্শে এলে তা ছড়ানো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বিশেষত, প্রথম দুই মাস বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বেশি থাকে। মারিয়ানার ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল।
তবে মারিয়ার মা-বাবা নিকোল ও শেনের শরীরে এই ভাইরাস ছিল না বলে জানা গিয়েছে। কীভাবে বা কার কাছ থেকে ওই ভয়ংকর ভাইরাস মারিয়ানার দেহে ঢুকেছিল, তা অবশ্য এখনো জানা যায়নি।
(COPIED)