সূচক কমলেও বেড়েছে লেনদেন
গত সপ্তাহজুড়ে (৯-১৩ অক্টোবর) দেশের দুই পুঁজিবাজারে সূচক কমলেও সাপ্তাহিক মোট লেনদেন বেড়েছে। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক কমেছে ২.৭৮ শতাংশ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ০.৩৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে (২-৫ অক্টোবর) উভয় বাজারে যথাক্রমে ৩.০৯ শতাংশ ও ৩.১৫ শতাংশ কমেছিল। গত সপ্তাহে এর আগের সপ্তাহের চেয়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন বেড়েছে ২৬৩ কোটি ৩১ লাখ ৬২ হাজার ১৫১ টাকা ও সিএসইতে ৭২ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার ৩০১ টাকা। এছাড়া ডিএসইর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম কমলেও সিএসইর বেড়েছে।
গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ডিএসইর সাধারণ সূচক ১৯৪ ও সিএসইর ৩৩৫ পয়েন্ট কমে। এর পরদিন সোমবারও উভয় বাজারে যথাক্রমে ১৪ ও ৫০ পয়েন্ট কমে। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও সূচকের ব্যাপক পতন হয়। এদিন ডিএসইর সূচক কমে ২২৫ ও সিএসইর ৩৮৭ পয়েন্ট।
অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীরা গত সপ্তাহজুড়ে লাগাতার বিক্ষোভ ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেন। এর মধ্যে বুধবার লেনদেনের শুরুতেই ডিএসইর সূচক ১৫৪ পয়েন্ট পড়ে গেলে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারা। গত ২ বছরের মধ্যে ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি ডিএসইর সাধারণ সূচক সর্বনিম্ন ৫০৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করার পর এদিন সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৫ হাজার ১৩৯ পয়েন্টে নেমে এসেছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার দুপুরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি। এতে বাজার স্থিতিশীলতায় বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন। এরপরই বাজার ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। বুধবার ডিএসই ও সিএসইতে ৬৬ পয়েন্ট করে সূচক বেড়ে লেনদেন শেষ হয়। যার ধারা বজায় ছিল সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারও। এদিন ডিএসইর সূচক বাড়ে ২০৮ ও সিএসইতে ৩৩৩ পয়েন্ট।
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ২৭১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬৬টির লেনদেন হয়। লেনদেন হওয়া প্র্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ২২৩টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১২টি প্রতিষ্ঠানের দাম। বাকি ৫টি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়নি।
একই সঙ্গে গত সপ্তাহে ডিএসইর সাধারণ সূচক কমে নেমে যায় ৫ হাজার ৫৬৮.৩৬ পয়েন্টে যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ২.৭৮ শতাংশ বা ১৫৯.৪৪ পয়েন্ট কম। সার্বিক সূচক ২.৭৬ শতাংশ বা ১৩২.৪৯ পয়েন্ট কমে পৌঁছে ৪ হাজার ৬৭১.৬৮ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৫৯৫ কোটি ২১ লাখ ২৯ হাজার ৫৭৮ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩৩১ কোটি ৮৯ লাখ ৬৭ হাজার ৪২৭ টাকা। অর্থাৎ সাপ্তাহিক মোট লেনদেন বেড়েছে ১৯.৭৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে ৩৬.৩৩ শতাংশ কমেছিল।
সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় ২ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৭ কোটি ৭৯ লাখ ৩ হাজার ১৮৩ টাকা যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ২.১১ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৪১৬ টাকা।
গত সপ্তাহে দাম বাড়ার দিক দিয়ে ডিএসইর শীর্ষ প্র্রতিষ্ঠান ছিল রূপালী ইন্স্যুরেন্স। এরপরে ছিল যথাক্রমে দ্বিতীয় আইসিবি মি.ফা., বার্জার পেইন্টস, পঞ্চম আইসিবি মি.ফা., বাটা সু, ঢাকা ব্যাংক, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মি.ফা., আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় এনআরবি মি.ফা., এমবিএল ফার্স্ট মি.ফা. ও গ্রামীণ ওয়ান স্কিম টু।
দাম কমার শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠান ছিল- প্রিমিয়ার লিজিং, ফার্মা এইডস, তাল্লু স্পিনিং, বিডি অটোকারস, জুট স্পিনার্স, ইমাম বাটন, বঙ্গজ, ন্যাশনাল টিউবস, বিএসসি ও সমরিতা হাসপাতাল।
এছাড়া লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) সাপ্তাহিক শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠান ছিল- লাফার্জ সুরমা, বেক্সিমকো, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, তিতাস গ্যাস, এনবিএল, সামিট পাওয়ার, এমআই সিমেন্ট, ইউনাইটেড এয়ার ও মবিল যমুনা।
গত সপ্তাহে ওষুধ ও রসায়ন খাতের ফার্মা এইডস ৩০ জুন, ২০১১ সমাপ্ত অর্থ বছরের জন্য ২১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে। আগের সপ্তাহে কোম্পানিটি ৩০ শতাংশ নগদ ও ৫০০ ভাগ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।
অপরদিকে সিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১১২টির, কমেছে ৯৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৬টি প্রতিষ্ঠানের দাম।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইর সাধারণ সূচক ০.৩৭ শতাংশ কমে নেমে আসে ৯ হাজার ৯৫৫.৬৪ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক ০.৩৩ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৫৭৮.৭৩ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয় মোট ২৫৯ কোটি ৫২ লাখ ২৪ হাজার ৪৩৪ টাকা। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৮৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪৪ হাজার ১৩৩ টাকা।
গত সপ্তাহে সিএসইর দাম বৃদ্ধির শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠান ছিল- আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় এনআরবি মি.ফা., প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মি.ফা., সাউথইস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মি.ফা. ওয়ান, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি এমপ্লোয়িজ প্রভিডেন্ড ফান্ড, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রি, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও আইবিএন সিনা ফার্মা।
সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠান ছিল- প্রিমিয়ার লিজিং, মিথুন নিটিং, তাল্লু স্পিনিং, বঙ্গজ, মাইডাস ফিন্যান্সিং লি., রংপুর ফাউন্ড্রি, ফিনিক্স ফিন্যান্স, আনলিমা ইয়ার্ন, আইসিবি এএমসিএল ইসলামিক মি.ফা. ও আজিজ পাইপ ।
ওদিকে লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) সিএসইর সাপ্তাহিক শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠান ছিল- বেক্সিমকো, আফতাব অটো, ইউসিবিএল, লাফার্জ সুরমা, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, পিপলস লিজিং, গ্রামীণফোন, সাউথইস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক।
Source :
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=e12c9aadb7207afe9615fd2feb6344d7&nttl=2011101411482663004&toppos=1