'ইতিবাচক পদক্ষেপে বাজার ঘুরছে'
ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর খবরে সপ্তাহের শেষ দিনে দেশের দুই পুঁজিবাজারে লেনদেনের গতি বেড়েছে। আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে সূচক ও বেশিরভাগ শেয়ারের দামও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের 'ইতিবাচক' পদক্ষেপের কারণেই বাজার 'ঘুরে দাঁড়াতে' শুরু করেছে বলে মনে করেন মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ।
পুঁজিবাজারের স্বার্থে এই 'ইতিবাচক' ভূমিকায় কোনো ছেদ না ঘটানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক ২৮৬ পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৫৪৪ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বাছাই সূচক (সিএসসিএক্স) ৪২৩ পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৯০০ পয়েন্ট।
টানা দরপতনের মুখে চলতি সপ্তাহের শুরুতে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা আন্দোলন শুরু করলে অর্থ মন্ত্রণালয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিভিন্ন প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সোমবার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সহ- সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে এবিবিকে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
ব্যাংকগুলো কীভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে- সেই পথের নির্দেশনা দিয়ে বুধবার একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে মার্জিন ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত শিথিল করারও আশ্বাস দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে এবিবির এক জরুরি বৈঠকের পর সংগঠনের সভাপতি ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে মাহমুদ সাত্তার জানান, আগামী সপ্তাহ থেকেই ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগ শুরু করবে।
এ খবর প্রচার হওয়ার পর সূচকে ঊর্ধ্বগামী প্রবণতা দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত হাতবদল হয় ৪০২ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ১২৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেশি।
মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, "বাজারে দুটো জিনিসের অভাব ছিল। একটা আস্থা, আর অন্যটি তারল্য। এ দুটো দূর করতেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে দায়িত্বশীল কোনো জায়গা থেকে মন্তব্যের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা যাতে নষ্ট না হয়, সে দিকেও খেয়ালর রাখতে হবে।"
বৃহস্পতিবারের লেনদেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এ লেনদেন কিছুই না। কেন্দ্রীয় বাংক যদি এই ইতিবাচক ধারায় কোনো ছেদ না ঘটায় তাহলে শিগগিরই লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে।"
সূচক বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, "সূচক টানা কয়েকদিন বৃদ্ধির ধারায় থাকা উচিৎ। তাহলে আস্থা ফিরবে। আর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরলেই বাজার স্থিতিশীল হবে।"
বৃহস্পতিবার লেনদেন ও দাম বাড়ার শীর্ষে ছিলো 'শক্ত' মৌলভিত্তির শেয়ারগুলো। এই তালিকার শীর্ষ ১০ কোম্পানিই ব্যাংক খাতের। আর সবচে বেশি লেনদেন হওয়া শেয়ারের তালিকার প্রথম ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৭টিই ব্যাংক।
বেশ কয়েকটি ব্যাংক দাম বৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছে বিক্রেতাশূণ্য অবস্থায় লেনদেন শেষ করে। একই অবস্থা হয় প্রকৌশল, ব্যাংক বহির্র্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খাদ্য ও আনুসঙ্গিক, পাট, বিবিধ, মিউচুয়াল ফান্ড, ওষুধ ও রসায়ন এবং বস্ত্র খাতের বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারও।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া শেয়ারের সংখ্যাও গতদিনের চেয়ে বেড়েছে। এদিন লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ২৭ লাখ শেয়ার। বুধবার দিনশেষে হাতবদল হওয়া শেয়ারের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সের অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমামের মতে, "আমাদের বাজারের যে আকার তাতে দৈনিক গড় লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে না হলে বাজার স্থিতিশীল হবে না।"
গত মঙ্গলবার লেনদেন কমে ৯ মাস আগের অবস্থায় চলে আসে। ওইদিন লেনদেন হয় 'মাত্র' ২০৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার। এর চেয়েও কম লেনদেন হয়েছিল গত ২৫ জানুয়ারি। ওইদিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
ডিএসই জনসংযোগ বিভাগ জানায়, ২০১০ সালে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। ২০১১ সালে তা কমতে থাকে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক গড় লেনদেন কমে ৩৫২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
গত ৫ ডিসেম্বর ডিএসই সাধারণ সূচক ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্টে পৌঁছে রেকর্ড গড়লে এরপর থেকে শুরু হয় অস্থিরতা। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি জুড়ে চলে ব্যাপক দরপতন।
গত জুনে বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় একমাস চাঙ্গাভাব দেখা দেয়। এরপর জুলাইয়ের শেষ থেকে আবার পতন শুরু হয়।
বুধবার সাধারণ সূচক কমে প্রায় নয় মাস আগের অবস্থায় চলে আসে। গত তিন মাসের ব্যবধানে সূচক কমেছে প্রায় ১ হাজার ৪৫২ পয়েন্ট।
Source :
http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?cid=54&id=174770&hb=top