এই নির্দেশ পালিত হোক অক্ষরে অক্ষরে

Author Topic: এই নির্দেশ পালিত হোক অক্ষরে অক্ষরে  (Read 1075 times)

Offline kekbabu

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 78
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/
এই নির্দেশ পালিত হোক অক্ষরে অক্ষরে (The daily Ittefaq)
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ইং
গত ২৯ ডিসেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাতটি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চিকিত্সকদের কর্মক্ষেত্রে থেকে যথাযথভাবে মানুষকে সেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় তাঁরা চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা যখন উপজেলা পর্যায়ে চিকিত্সকদের নিয়োগ  দেই, তখন অনেকেই আছেন যাঁরা কর্মক্ষেত্রে থাকতে চান না। বরং তাঁরা যেকোনো উপায়েই ঢাকায় থাকেন। যদি চিকিত্সকদের ঢাকাতেই থাকার ইচ্ছা হয়, তাহলে তাঁদের সরকারি চাকরি করার প্রয়োজন নেই। রাজধানীতে বসে প্রাইভেট রোগী দেখে তাঁরা অনেক টাকা উপার্জন করতে পারেন। তাই তাঁদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে যাওয়াই ভালো। আমরা তাঁদের স্থানে নতুন নিয়োগ দেব।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যের মাধ্যমে মফস্বল পর্যায়ে চিকিত্সকদের না থাকতে চাওয়ার প্রবণতা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। বলা বাহুল্য, মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিত্সা অন্যতম। আর এই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে দেশের জনগণকে অনেক সময় হয়রানির শিকার হতে হয় যা কাম্য নয়। মফস্বল পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সকদের নিয়মিত উপস্থিতি না থাকা, হাসপাতালের অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল রোগী ও তাদের স্বজনদের দালাল কর্তৃক প্রতারিত হওয়া, চিকিত্সা সরঞ্জামাদির অভাব, ডাক্তার সংকট, ঔষধ ও চিকিত্সা সরাঞ্জামাদি গায়েব করা, অধিক অর্থের লোভে সরকারি হাসপাতালের চেয়ে চিকিত্সকদের প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখতে অধিক মনোযোগী ও যত্নবান হওয়া, সরকারি হাসপাতালে রোগীর সেবার ক্ষেত্রে চিকিত্সকদের অবহেলা ও আন্তরিকতার অভাব, ভুল চিকিত্সা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আর এসব খবরের মধ্যে চিকিত্সকের অবহেলা বা ভুল চিকিত্সার ফলে রোগীর ক্ষতি বা মৃত্যু হওয়া সবচেয়ে দুঃখজনক। চিকিত্সকের অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু ঘটলে বা আঘাত পেলে তার জন্য আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, চিকিত্সকের অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু ঘটা বা ক্ষতি হওয়ার ক্ষেত্রে এদেশে আইনের তেমন একটা প্রসার ঘটেনি। তাছাড়া চিকিত্সার ক্ষেত্রে চিকিত্সকদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতাও খুব কম। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তির অবহেলাজনিত কারণে যদি কারো মৃত্যু ঘটে, তবে ওই ব্যক্তিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা দুটোই একসঙ্গে শাস্তি হিসেবে দেওয়া যাবে। চিকিত্সকের অবহেলার জন্য দণ্ডবিধির আওতায় এবং টর্ট (দেওয়ানি প্রতিকার) আইনের আওতায় মামলা করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অধিকাংশ জনগণই সচেতন নন।

২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী  জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ডাক্তার ধরে রাখার জন্য এমপিদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছিলেন। এরপূর্বে ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বে অবহেলাকারী চিকিত্সকদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘চিকিত্সকদের দায়িত্বে অবহেলাজনিত অপরাধের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। জনগণকে সেবা দিতে সব চিকিত্সককে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব সতর্ক ও নির্দেশ কতটুকু কাজে এসেছে এবং চিকিত্সকেরা কতটুটু সতর্ক হয়েছেন, তা জনগণই ভালো বলতে পারবেন। জনগণের চিকিত্সাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চিকিত্সকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী ইতিপূর্বেও অনেকবার নির্দেশ দিয়েছেন, সতর্ক করেছেন। আশা করি, এবার এর ব্যত্যয় হবে না। আসলে জনগণের চিকিত্সাসেবা নিশ্চিত করতে কার্যকর আইন প্রণয়নসহ তার বাস্তবায়ন যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি চিকিত্সকদের মন-মানসিকতায় ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন ঘটানো।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক সদস্য
ই-মেইল: kekbabu@yahoo.com
Link: http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/sub-editorial/2017/12/30
Dr. Kudrat-E-Khuda (Babu).
Associate Professor (Dept. of Law), Daffodil International University;
International Member of Amnesty International;
Climate Activist of Greenpeace International; Column Writer;
Mobile Phone: +8801716472306
E-mail: kekbabu.law@diu.edu.bd