ভাষা মানুষের মৌলিক অনুষঙ্গ। ভাষাকে কেন্দ্র করেই পৃথিবীতে বেড়ে উঠেছে অসংখ্য জনপদ ও মানবপল্লী। নদীর স্রোত যেমন সদা বহমান, ভাষার গতিও তেমনই অনিঃশেষ ধাবমান। কালের পরিক্রমায় ভাষার গতি কখনো ব্যাহত হয় না। হয়তো মোড় নেয় ভিন্ন দিকে। উন্নতির শিখরে নয়তো পরিবর্তনের গহ্বরে। পৃথিবীর প্রতিটি ভাষায় রয়েছে নিজস্ব মাধুর্য ও দ্যোতনা। ছন্দের মহিমা ও শব্দবৈভবের কারিশমা। নির্মাণশৈলী ও বর্ণনায়নের রূপময়তা। যে বর্ণনাভঙ্গি ও নির্মাণশৈলী হৃদয়াঙ্গনে সৃষ্টি করে নিসর্গের ব্যঞ্জনা। স্রোতস্বিনীর কল্লোলতা। এবং আরো যা কিছু ভাষাকে দেয় শ্রুতির মধুরতা ও পাঠের মনোহর সুখ। সেটিকে আমরা সাহিত্য বলতে পারি। ভাষা ও সাহিত্য একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অঙ্গাঙ্গিভাবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে জীবনযাত্রায় ভাষা ও সাহিত্যের আবেদন অত্যন্ত ব্যাপক ও বহুধাবিস্তৃত এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা।
কবি-সাহিত্যিকরা হলেন ভাষার সেবক। তাঁরা ভাষা-সাহিত্যের সেবা করে যান তাঁদের রচনাসম্ভার ও ভাষাশৈলী উপহার দিয়ে। ভাষার বসনে তাঁরা পরিয়ে দেন সৌকর্যের মণিহার ও অলংকার। তাঁদের অবদান পুঁজি করে এগিয়ে চলে নিজ নিজ জাতির বহুমাত্রিক ও সুদীর্ঘ অভিযাত্রা।
সাহিত্যের রয়েছে রকমফের ও বহু প্রকারভেদ। ইসলামী সাহিত্য ও অনৈসলামী সাহিত্যকে প্রধানতম হিসেবে ধরা যায় এবং আলোচনার অবকাঠামো দাঁড় করানো যায়।
ইসলামী সাহিত্যের রয়েছে আদিগন্ত বিস্তীর্ণ কথকতা। যা নাতিদীর্ঘ ও বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। তবে আমরা এ প্রবন্ধে শুধু ইসলামী সাহিত্যের সূচনাপর্বে সাহাবায়ে কেরামের আলোচনা-সমালোচনা কেমন ছিল, সে সম্পর্কে অতিসংক্ষেপে আলোচনার প্রয়াস পাব।
রাসুল (সা.)-এর সাহাবিদের প্রত্যেকেই ছিলেন নিজস্ব ভাষা (আরবিতে) অত্যন্ত পারদর্শী ও সাহিত্যপ্রতিভার অধিকারী। কবিতার ক্ষেত্রে রাসুলের সাহাবিখ্যাত ‘ত্রয়ী’ হাসসান ইবনে সাবিত, আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ও কাব ইবনে মালিক (রা.)-এর পারঙ্গমতা সাহিত্যমহলে সুবিদিত। প্রধান চার খলিফার তিনজনই সাহিত্যাকাশে চৌদ্দশির মতো আলো ঝলমলে। ইতিহাসের বিভিন্ন বর্ণনানুযায়ী তাঁদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা প্রচুর কবিতা রয়েছে। প্রসিদ্ধ কিছুসংখ্যক সাহাবির শের বা কবিতা নিয়ে বৃহৎ কলেবরে অনেক বইও বের হয়েছে। বাংলাদেশের মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ সাহেবের সংকলনে এমন একটি কিতাব ‘রাওয়ায়ে মিন আশআরিস সাহাবা’ নামে মিসর থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত আলী (রা.)-এর অসাধারণ পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তব্য সংকলন ‘নাহজুল বালাগা’র মৌলিক ও অনূদিত কপি বিশ্বের উচ্চশ্রেণির সাহিত্যপ্রতিষ্ঠান ও পাঠকদের কাছে বেশ আদৃত।