অ্যাপল, অ্যালফাবেট, আমাজন যা করছে

Author Topic: অ্যাপল, অ্যালফাবেট, আমাজন যা করছে  (Read 1223 times)

Offline Md. Abul Bashar

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 177
  • Test
    • View Profile
সৃষ্টির পর থেকে মানবদেহের অসুস্থতা ও তা নিরাময়ের পথ মানুষ নিজেই খুঁজে নিয়েছে। ধাপে ধাপে নানা বাঁকে এগিয়ে চিকিৎসাব্যবস্থা আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে। কী সেই বাঁকগুলো, কত দূরই বা এগিয়েছে আধুনিক চিকিৎসা-লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে আজ থাকছে প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব গত দশক থেকে মানুষের নিত্যদিনের যাপনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন। লোকজন এখন তাদের পকেটে থাকা এই ছোট কম্পিউটারেই সারছে ব্যাংকের লেনদেন, বাজার-সদাইসহ অনেক কিছুই। আর ‘যদি বন্ধু হও হাতটা বাড়াও’ স্লোগানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো রয়েছেই। শুধু স্মার্টফোনই বা কেন, ক্রমেই মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠছে স্মার্ট ওয়াচসহ নানা ধরনের প্রযুক্তি নির্ভর পণ্য। স্মার্ট প্রযুক্তির এই বিপুল সক্ষমতায় এখন যুক্ত হচ্ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের পালক।

স্মার্টফোনে সারতে পারা বারোয়ারি কাজের ভিড়ে এবারের সাফল্যটি বিশ্বের আমজনতার জীবনে সত্যি গুরুত্বপূর্ণ অবদানই রাখতে যাচ্ছে। আর এই পথে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে গেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। স্বাস্থ্যসেবা জগতে ডিজিটাল পরিষেবার জন্য দুটি সুযোগ খোলা। প্রথমটি, বিদ্যমান ব্যবস্থায় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডিজিটাল সেবা দেওয়া। এ পথে অ্যালফাবেট ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলোতে সফটওয়্যার পরিষেবা দিতে শুরু করেছে। আর দ্বিতীয় ধাপে বিদ্যমান ব্যবস্থার বাইরে নিজেদের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থা তৈরির দিকে এগোচ্ছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। এ রকম অভিনব ব্যবস্থার একটি হচ্ছে অ্যাপলের স্মার্টওয়াচ, যার পর্দায় ভেসে উঠছে ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যের হাল হকিকত। এই স্মার্টওয়াচ রক্তে অক্সিজেন ও গ্লুকোজের পরিমাণ সেন্সরের মাধ্যমে নির্ণয় করতে সক্ষম হচ্ছে। এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারে ডায়াবেটিসের মতো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে এমন রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়া সম্ভব।
তিন বছর গবেষণার পর স্বাস্থ্য তথ্য প্রক্রিয়াকরণের উপযোগী করে নিজের ডিভাইস ও সফটওয়্যারগুলোকে প্রস্তুত করেছে অ্যাপল। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি আইফোনের সফটওয়্যারে বড় ধরনের একটি সংযোজন ঘটেছে। নতুন যুক্ত হওয়া এই সুবিধায় ব্যবহারকারীরা নিজের স্বাস্থ্য তথ্য ডিজিটালভাবে নির্ণয় করতে পারবেন। পাশাপাশি প্যাথলজিক্যাল স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন তথ্যও এতে যুক্ত করা যাবে। শুধু তা-ই নয়, নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা যাবে ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রতিবেদন, যা নিজে ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যের কাছেও পাঠাতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। ‘হেলথ অ্যাপ’ নামের এই ডিজিটাল ব্যবস্থায় এই প্রথম একজন রোগী চিকিৎসকের কাছে না গিয়েও শরীরের রোগবালাই জানতে পারবেন। সার্বিকভাবে অ্যাপলের প্রযুক্তি পণ্যগুলো ব্যবহার করে রোগনির্ণয়ে দ্রুততা নিশ্চিত করতে পারবেন গবেষক ও চিকিৎসকেরা। রীতিমতো বিপ্লবই বলা যায় একে।
অন্য প্রযুক্তি জায়ান্টরাও পিছিয়ে নেই। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হাথওয়ে ও জেপি মরগ্যান চেসের সঙ্গে একটি যৌথ কোম্পানি গঠন করেছে আমাজন। প্রাথমিকভাবে নিজেদের কর্মীদের জন্য এ নতুন যৌথ ব্যবস্থার ঘোষণা গত ৩০ জানুয়ারি দেয় অনলাইন কেনাকাটার সবচেয়ে বড় এ প্রতিষ্ঠান। আমাজনের নেওয়া নতুন এই পদক্ষেপের লক্ষ্য মুনাফা নয়, বরং প্রথাগত ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর চেয়ে অনেক কম খরচে কর্মীদের মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে এই প্রথমবারের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহের প্রকল্প হাতে নিয়েছে এই ই-কমার্স জায়ান্ট।
মাত্র কিছুদিন আগেই গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট নিয়ে এসেছে সিটিব্লক হেলথ নামের নতুন প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যসেবায় এটি অ্যালফাবেটের তৃতীয় প্রতিষ্ঠান। এর আগে সানফ্রান্সিসকোতে ‘ভেরিলি’ ও লন্ডনে ‘ডিপমাইন্ড হেলথ’ নামের দুটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান গড়েছিল অ্যালফাবেট। এর মধ্যে ‘ডিপমাইন্ড হেলথ’ গবেষণা করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। একই ধরায় মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির গবেষণায় কাজ করছে অ্যালফাবেটেরই আরেক প্রতিষ্ঠান ‘ক্যালিকো’। এ ছাড়া হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীদের মৃত্যুর দুদিন আগেই মৃত্যুঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দাবি করেছে অ্যালফাবেট। পিছিয়ে নেই ফেসবুক ও মাইক্রোসফট। সামাজিক যোগাযোগ ও সফটওয়্যার নির্মাতা এই দুই প্রতিষ্ঠান মূল ব্যবসার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চালুর প্রস্তুতিও নিচ্ছে। মোদ্দাকথা প্রতিটি ব্যক্তিকে আলাদা করে চিকিৎসা সেবা জোগানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে মেডিকেল পরিষেবা নিয়ে গোপনে কাজ করছে বড় পাঁচ প্রযুক্তি কোম্পানি।
স্বাস্থ্যসেবায় স্মার্ট প্রযুক্তির এই সংযুক্তি নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, টেক জায়ান্টদের যন্ত্রগুলো মানসিক স্বাস্থ্যে ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এসব প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে তা মানুষের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে, যা এক ধরনের নির্ভরতা তৈরি করতে পারে। এই সমালোচনার একটি কারণ হতে পারে স্বাস্থ্য খাতের রাজস্বে প্রযুক্তি কোম্পানির ক্রমবর্ধমান অংশীদারত্ব। কারণ এসব সমালোচনা মূলত প্রথাগত স্বাস্থ্য খাত থেকেই আসছে।
প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবা খাতের রাজস্বে নতুন ডিজিটাল সেবাগুলো যে ভাগ বসাচ্ছে, তা নেহাত ছোট অঙ্কের নয়। স্বাস্থ্য খাত থেকে আসা রাজস্ব গড়ে যেকোনো দেশের জিডিপির এক দশমাংশ হয়ে থাকে। গবেষণা সংস্থা ডেলয়েটের মতে, ২০১৫ সালে আমেরিকায় স্বাস্থ্য খাতের রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ কোটি ডলার (৫ কোটি ৮৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা)। ২০১৬ সালে আমেরিকার শীর্ষ দুই ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপ ও সিভিএস-এর রাজস্বের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার (১৫ লাখ ৪১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা) ও ১৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা)। অর্থাৎ আমেরিকার স্বাস্থ্য খাতে এই দুই কোম্পানির অবস্থান বেশ দৃঢ়। কিন্তু আমাজনের নতুন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের খবরে এই দৃঢ় ভিতেও চিড় ধরেছে। খবরটি প্রকাশের পর এই দুই পুরোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ নেমে গেছে। তাহলেই বুঝুন!
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অ্যাপল ও অ্যালফাবেট আগামী দিনের স্বাস্থ্য খাতে বিরাট প্রভাব রাখতে যাচ্ছে। আমাজনের ত্রিমুখী স্বাস্থ্যসেবার প্রথম ধাপে, প্রতিষ্ঠানটি এই সেবা নিজেদের প্রায় ১০ লাখ কর্মীর জন্য চালু করবে। এটি পরে সম্প্রসারিত হবে নিশ্চিতভাবেই। কিন্তু অ্যাপল ও অ্যালফাবেট এ ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে। কারণ এই দুই প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের মাধ্যমে আমাজনের চেয়ে এক শ গুণ বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব। আর এ ক্ষেত্রে সবারই মূল চিন্তা মুনাফা নয়, বরং সহজ ও স্বল্প মূল্যে গ্রাহকদের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। আর প্রযুক্তিই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে।

Offline Anuz

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 1988
  • জীবনে আনন্দের সময় বড় কম, তাই সুযোগ পেলেই আনন্দ কর
    • View Profile
Informative one.
Anuz Kumar Chakrabarty
Assistant Professor
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University