প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অসামান্য এক নিদর্শন গিজার পিরামিড। কী করে মিশরীয়রা প্রায় নিখুঁত এই স্থাপত্য তৈরি করে, তা নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা হয়ে এসেছে যুগে যুগে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম বরাবর প্রায় নিখুঁতভাবে এই পিরামিড বসানোর পেছনে আছে দারুণ সহজ একটি কৌশল।
এই বিষয়ে গবেষণাপত্র দি জার্নাল অফ এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ান আর্কিটেকচারে প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে, তবে তা গণমাধ্যমে আসে সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি।
গিজা পিরামিড নিয়ে গবেষণা করছেন প্রকৌশলী গ্লেন ড্যাশ, তারই লেখা এই গবেষণাপত্র। তিনি দেখেন, ফল ইকুইনক্স বা শারদ বিষুবকে ব্যবহার করে এত নিখুঁত হিসাব করে মিশরীয়রা। এই হিসাবের ফলাফল হিসেবে পিরামিডের চারটি কোণ উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে প্রায় নিখুঁতভাবে অবস্থান করছে।
উত্তর মেরুতে শারদ বিষুব হলো ২২ সেপ্টেম্বর। এই তারিখে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান হয়। এই দিনে একটি কাঠের পৃষ্ঠের ওপর গ্লেন ড্যাশ একটি লাঠি দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং সারাদিনে এর ছায়ার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন। এর ছায়া যেসব জায়গায় পড়ে, সেগুলো যোগ দিলে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর প্রায় নিখুঁত একটি রেখা পাওয়া যায়।
এই পদ্ধতিতে যে রেখা পাওয়া যায়, তা ঠিক নিখুঁত নয়। তবে এতে যেটুকু ভুল পাওয়া যায়, গিজার গ্রেট পিরামিডেও ভুলের পরিমাণ তেমনই! এ থেকে ধরে নেওয়া যায় এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে দিক বের করেছিল মিশরীয়রা।
গ্লেন ড্যাশ এই পদ্ধতিতে দিক নির্ণয় করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটে। কিন্তু মিশরেও এই একই পদ্ধতি কাজ করে। মিশরীয় জরিপকারীরা সম্ভবত পরিষ্কার, মেঘমুক্ত দিনে এই পদ্ধতিতে দিক নির্ণয় করেন।
তবে একদম নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না যে, এই পদ্ধতিটাই মিশরীয়রা ব্যবহার করেছিল। কারণ সূর্য ও তারকা ব্যবহার করে দিক নির্ণয়ের অনেক পদ্ধতিই আছে। তারা পিরামিড তৈরিতে কী পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছিল তার ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। তবে শারদ বিষুবের ব্যবহারটি অন্যান্য় উপায়ের চাইতে অনেক সহজ।
প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে মিশরীয় ফারাও খুফুর নির্দেশে নির্মাণ হয় গিজার গ্রেট পিরামিড। অন্য তিনটি পিরামিডের চাইতে তা উঁচু। এটির উচ্চতা ৪৫৫ ফুট বা ১৩৮ মিটার। এই পিরামিড যেমন নিখুঁত, তেমনই নিখুঁত খাফ্রের পিরামিড ও রেড পিরামিড।