৪০ বছরের নীচে ১০ তরুণ গবেষক: তালিকায় বাংলাদেশি গবেষক ড. এহসান হক
প্রখ্যাত বিজ্ঞান ভিত্তিক ম্যাগাজিন সায়েন্স নিউজের ৪০ বছরের নীচের সেরা ১০ তরুণ গবেষকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাঙালি তরুণ এহসান হক। এর আগে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) জার্নাল টেকনোলজি রিভিউ ঘোষিত ৩৫ বছরের কম বয়সী সেরা ৩৫ জন উদ্ভাবকের সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।‘টিআর ৩৫’ নামের সে তালিকায় স্থান পাওয়া এ তরুন সম্প্রতি চলতি বছরের জন্য মধ্য ক্যারিয়ারে থাকা ৪০ বছরের নীচে কাজ করা সফল ১০ তরুণ গবেষকের তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছেন। গত দুই বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছর তৃতীয়বারের মতো এ ধরনের তালিকা প্রকাশ করে ম্যাগাজিনটি। ‘এসএন ১০’ নামের এ তালিকায় মূলত সেই সব তরুণ গবেষকদের নাম যুক্ত করা হয়েছে, যারা ইতিমধ্যে গবেষণা ও নতুন উদ্ভাবনে নিজেদের সফলতা দেখাতে পেরেছেন এবং ভবিষ্যৎতের দারুন সব গবেষণাভিত্তিক উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিতে পারেন। এ তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে যুক্ত ছিলেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী এবং ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের নির্বাচিত সদস্যরা।
এহসান হকের ধারাবাহিক এমন সাফল্যের বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন,‘৪০ বছরের কম বয়সী তরুণ গবেষকদের মধ্যে এহসান হকের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বেশ উৎসাহজনক। তিনি এমন কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছেন যা আসলে বেশ নতুন। বিশেষ করে মানুষের চেহারা দেখে তার মানসিক অবস্থা নির্ণয় করা, এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করা যা আমাদের মুদ্রা দোষ, আমতা আমতা করা বা বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ার বিষয়গুলোর সহজ সমাধান দেবে। এ পদ্ধতিগুলো নিজেকে তৈরির ক্ষেত্রে বেশ সহায়তা করবে। আমরা বিশ্বাস তিনি এ ধরনের গবেষনায় আরো দারুন কিছু করবেন।’
নিজের সাম্প্রতিক কাজ সম্পর্কে এহসান হক জানান, অনেকেই কথা বলার সময় বা আলাপ করার সময় প্রচুর কথা বলতে থাকেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে কাউকে বলার সুযোগও কম দেন! কম্পিউটার কি এ অবস্থাকে সহায়তা করতে পারে? এমন চিন্তা থেকে আমরা কোলাবোরেশন কোচ (কোকো) নামের একটি ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছি যা স্বয়ংক্রিয় ভাবে একসাথে কথা বলা ব্যক্তিদের জানিয়ে দেবে কে কার কথায় বেশি বাধা দিচ্ছে বা কে বেশি কথা বলে অন্যকে বলার কম সুযোগ দিচ্ছেন। এটা মূলত কথা বলার ক্ষেত্রে সকলকে সমান সুযোগ দেওয়ার জন্য একটি ব্যবস্থা।
ক্যান্সার রোগীদের ক্যামোথেরাপির আরেকটি বিষয় নিয়েও কাজ করছেন উল্লেখ করে এহসান হক জানান, ক্যান্সার রোগী যারা লাস্ট স্টেজ বা চিকিৎসার শেষ পর্যায়ে থাকেন তারা চান শেষ সময়টা যতটা সম্ভব পরিবারের সাথে কাটাতে। কিন্তু সে সময়ে বেশির ভাগ সময় কাটাতে হয় হাসপাতালে বা ক্যামোথেরাপি দেয়ার কাজে। ২০০৮ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা হারানো এহসান বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন এবং নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে যৌথভাবে কাজ করছেন কিভাবে এ পদ্ধতিটি পরিবর্তন করা যায়। খুব শিগগিরই পুরো বিষয়টি অ্যাফেক্টিভ কম্পিউটিং অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্ট ইন্টারঅ্যাকশন (এসিআইআই) নামের আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রকাশ করা হবে।
গত বছর এমআইটির ‘টিআর ৩৫’ প্রকাশিত তালিকার যুক্ত হওয়া এহসান হক অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন মানুষের কথা ও শারীরিক ভাষার গাণিতিক মডেল বের করে সেটাকে কাজে লাগানোর বিষয় নিয়ে।এর মাধ্যমে তৈরি যন্ত্রটি অটিজম বা ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের আলাপচারিতায়, চাকরিপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতিতে, এমনকি বিতার্কিকদের তাঁদের বক্তৃতার ভুলগুলো সংশোধন করতে সহায়তা করবে। এরই মধ্যে বানানো হয়েছে একটি বিশেষ চশমা, যা বক্তৃতা দেওয়ার সময় বক্তাকে আরও সাবলীল হতে সাহায্য করে।
মূলত কাজটি হচ্ছে মাই অটোমেটেড কনভার্সেশন কোচ (মাক) এবং লাইভ ইন্টারঅ্যাকটিভ সোশ্যাল স্কিলস অ্যাসিসটেন্ট (লিসা) প্রোগ্রাম নিয়ে। এ দুটি প্রোগ্রাম তাৎক্ষণিকভাবে বলে দিতে পারে একজন মানুষ কথার মধ্যে কতবার আমতা আমতা করেছেন বা কথা বলার ক্ষেত্রে আটকে গেছেন। এছাড়াও যন্ত্রটি বলতে পারবে কথা বলার সময় তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গি স্বাভাবিক ছিল কিনা বা তার শব্দ প্রক্ষেপণ কী যথাযথ ছিল কিনা? এমআইটি মিডিয়া ল্যাবে কাজ করার সময় এহসান প্রথমে বানান মাক, যা এমআইটির শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারে দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। পরে সেটিকে বিকশিত করে ভিন্নভাবে সক্ষম কিংবা অটিস্টিক ব্যক্তিদের সহায়তা করার জন্য তৈরি করেছেন লিসা।
এহসান হক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রসেস্টার’র সহকারী অধ্যাপক। ঢাকা কলেজে পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর এবং এমআইটি থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
এমআইটি ল্যাবে ২০০৮ সাল থেকেই মানুষের মুখাবয়ব ও কন্ঠ বিশ্লেষণ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন এহসান হক। পরবর্তীতে ওয়াল্ট ডিজনির গবেষণাগারে এমন এক স্বয়ংক্রিয় রোবট নিয়ে কাজ করেন যা দেখতে, শুনতে ও নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে আইবিএমের গবেষণাগারে বুদ্ধিমান বিজ্ঞাপন যন্ত্র তৈরি করেন যা পথে চলতে থাকা মানুষের গতিবিধি, বয়স, পরনের কাপড়ের রং ইত্যাদি বুঝে বিজ্ঞাপন করতে পারে!
Source:
http://www.bigganprojukti.com/ehsanhoque/