রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংক
নন-ফান্ডেড ঋণ নির্দিষ্ট মেয়াদে শোধ না করায় ফান্ডেড বা নগদ দায়ে পরিণত হচ্ছে।
এরপরও এ ঋণগুলো ধীরে ধীরে খেলাপি হয়ে পড়ছে।কারখানার জন্য বিদেশ থেকে মূলধনি যন্ত্র ও কাঁচামাল আনেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এ জন্য ব্যাংক তাঁদের ঋণপত্র সুবিধা দেয়, যা নন-ফান্ডেড ঋণ নামে পরিচিত। নগদ টাকার পরিবর্তে অন্য যেসব সুবিধা মিলে, তার সবই নন-ফান্ডেড। তবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে ঋণপত্র, গ্যারান্টিসহ বিভিন্ন নামে নেওয়া নন-ফান্ডেড ঋণ নির্দিষ্ট মেয়াদে শোধ করছেন না অনেকে। ফলে এসব ঋণ ফান্ডেড বা নগদ দায়ে পরিণত হচ্ছে। এরপরও শোধ না করায় এ ঋণগুলো ধীরে ধীরে খেলাপি হয়ে পড়ছে। তাতে এসব ব্যাংকের জন্য নন-ফান্ডেড দায় এখন বড় যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী—রাষ্ট্রমালিকানাধীন এ চার ব্যাংকে ২০১৭ সালে ১৮ হাজার ৮৯১ কোটি টাকার নন-ফান্ডেড ঋণ বর্তমানে ফান্ডেড দায়ে পরিণত হয়েছে। আবার এর মধ্যে ৪ হাজার ১৪২ কোটি টাকার ঋণ ২০১৭ সালে খেলাপির খাতায় নাম লিখিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি মাসে এ চার ব্যাংকের সঙ্গে এক সভা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলোর ২০১৭ সালের আর্থিক চিত্র উপস্থাপন করা হয়। এতেও উঠে আসে নতুন করে নন-ফান্ডেড ঋণ খেলাপি হওয়ার তথ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ চার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার নন-ফান্ডেড ঋণ ফান্ডেড ঋণে পরিণত হয়। এর মধ্যে আবার ১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে গত বছরই। ফলে ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে যা ছিল ১০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।
খেলাপির পরিমাণ বাড়ার পরও ২০১৭ সালে ৭০৯ কোটি টাকা প্রকৃত বা নিট মুনাফা করেছে সোনালী ব্যাংক। কারণ, রাষ্ট্রমালিকানাধীন এ ব্যাংককে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুবিধার কারণে ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির যে ঘাটতি দেখা দেয়, ২০১৭ সালের আর্থিক হিসাবে তা পূরণ করতে হয়নি। এমনকি এ সঞ্চিতি সংরক্ষণ থেকে ব্যাংকটিকে পুরোপুরি অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খেলাপি ঋণ কমাতে না পেরে এ কৌশলের আশ্রয় নেয় সোনালী ব্যাংক।
এদিকে অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের মতো বড় ধরনের ঋণ অনিয়ম নিয়ে আলোচনায় থাকা জনতা ব্যাংকের ২০১৭ সালে ১৩ হাজার ২৬ কোটি টাকার নন-ফান্ডেড ঋণ ফান্ডেড দায়ে পরিণত হয়েছে। আবার এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। ফলে ২০১৭ সাল শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ৭ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। আগের বছরই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। এরপরও ব্যাংকটি গত বছর ২৭৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে বিশেষ সুবিধা পাওয়ায় ব্যাংকটি মুনাফা দেখানোর সুযোগ পেয়েছে।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু নন-ফান্ডেড ঋণ ফান্ডেড হয়ে গেছে। তবে তা খুব বড় অঙ্কের নয়। আমরা নতুন করে ঋণপত্র খোলায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছি। যাচাই-বাছাই করেই নন-ফান্ডেড দায় তৈরি করা হচ্ছে।’
অগ্রণী ব্যাংকে ২০১৭ সালে ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার নন-ফান্ডেড ঋণ ফান্ডেড দায়ে পরিণত হয়। আর এর মধ্যে ৩৬৩ কোটি টাকার ফান্ডেড ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৬ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা, তবে গত বছর তা কমে হয়েছে ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এদিকে গত বছর ব্যাংকটি ৬৯৩ কোটি টাকা প্রকৃত মুনাফা করে। ২০১৬ সালেও ব্যাংকটি ৬৯৭ কোটি টাকা লোকসান গুনেছিল।
এদিকে রূপালী ব্যাংকে গত বছর ৫১৯ কোটি টাকার নন-ফান্ডেড ঋণ ফান্ডেড দায়ে পরিণত হয়। ফান্ডেড হওয়া ৭৬১ কোটি টাকা ২০১৭ সালে খেলাপি হয়ে পড়ে। ফলে গত বছর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। বিশেষ সুবিধা নিয়ে গত বছর ৬০ কোটি টাকা মুনাফা করে ব্যাংকটি। যদিও ২০১৬ সালে ১২১ কোটি টাকা লোকসান করেছিল।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যবসায়ীদের বিলম্ব ঋণপত্র সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। কম সুদ হওয়ায় অনেকেই এ সুবিধা নিয়েছেন। তাঁদের অনেকে খেলাপি হয়ে গেছেন।’
হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর রাষ্ট্রমালিকানাধীন এই চার ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী কমিটি ও নিরীক্ষা কমিটির সভায় উপস্থিত থেকে মতামত দেন। এরপরও ব্যাংকগুলোর পর্ষদে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হচ্ছে। অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট, যে দুই বড় গ্রাহক নিয়ে জনতা ব্যাংক বিপদে পড়েছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধির উপস্থিতিতেই অনুমোদিত হয়।
Source:
http://www.prothomalo.com/economy/article/1494081/%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%8B%E0%A6%A3%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%93-%E0%A6%8F%E0%A6%96%E0%A6%A8-%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BF