আজকাল জীবন এতই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে, মনে হতে পারে একসাথে অনেক দিক না সামলালে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। বলতে গেলে সবাই মাল্টিটাস্কিং করছে। বাচ্চারা যেন সামনে টিভি বা মোবাইল না রেখে খেতেই পারছে না। প্রাপ্তবয়স্করা ফেইসবুকে বসে থেকে জরুরী ইমেইল লিখছে। শহরের রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় মানুষ একই সাথে হাঁটছে আর ফোন টিপছে।
মাল্টিটাস্কিং একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। আমরা খুব গর্ব করেই বলি, আমরা একসাথে কতগুলি কাজ করি। যে যত কাজ একসাথে সামলাচ্ছে, সে ততই সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন, যতবার মাল্টিটাস্কিং করেছেন, আপনার অর্জন কি বেশি ছিল? কাজগুলোর মান কি ভাল হয়েছে?
মাল্টিটাস্কিং একটা অভ্যাস, কোন দক্ষতা নয় :
দিনশেষে চেকলিস্টের সব কয়টা কাজে টিক পড়েছে, এটা একটা অতুলনীয় অনুভূতি। দেখলেই মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। কিন্তু এটা কারো কারো জন্য একটা অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। আমাদের থেকে এটাই আশা করা হয় এবং আমরাও একগাদা কাজ হাতে নিতে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখি না।
অভ্যাস গড়ে ওঠে তিনটি জিনিস দিয়ে। সূত্র, নির্দিষ্ট ধারা এবং পুরষ্কার। সূত্র দিয়ে কাজটার শুরু হয়, রুটিনের নির্দিষ্ট ধারায় কাজটা পরিচালনা হয় এবং পুরষ্কার হল যেটা আমরা রুটিন মাফিক কাজ করে পাই। সফলভাবে রুটিনের কাজ শেষ করলে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামক হরমোন নিঃসরিত হয়। এটা আমাদের চমৎকার অনুভূতি দেয়। রুটিনের কাজ যতবার শেষ হবে, ততবেশি ডোপামিন নিঃসৃত হবে। এইজন্য এই পুরষ্কারের লোভে মাল্টিটাস্কিং এর অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা কষ্টকর।
বেশি মানেই ভাল না :
গবেষণায় দেখা গিয়েছে আমরা যতটা মনে করি, মাল্টিটাস্কিং এ আমরা ততটাও ভালো না। মানুষের মস্তিষ্ক নানাদিকে একবারে মনোযোগ দেওয়ার মত করে তৈরি হয়নি।
যখন আমাদের দুটি কাজ একসাথে দেওয়া হয়, আমরা কোনটাতেই আমাদের শতভাগ দিতে পারি না, বরং মস্তিষ্ক দ্রুত দুইটা কাজে আলাদাভাবে মনযোগ দিতে থাকে। তখন আমাদের মনে হয় আমরা বোধহয় একই সাথে দুইটা কাজ করতে পারছি।
আমাদের মস্তিষ্ক যখন টানা দুইটা কাজে মনযোগ ভাগ করে দিতে থাকে, তখন কাজের মান খুবই নেমে যায়। কারণ, আমরা মস্তিষ্কের কাজের গতিতে বারবার বাঁধা দিচ্ছি। প্রতিবারই নতুন করে মনযোগ দিতে হচ্ছে এতে মাথায় চাপ সৃষ্টি হতে থাকে।
আপনি যদি আপনার সবটুকু মনযোগ একটা কাজে দিতে পারেন তবেই কাজটার মান ভাল হবে।
সবচেয়ে ভাল ফলাফলের জন্য একটা একটা করে কাজে মনোযোগ দিন. একটা করে কাজে মনোযোগ আনার জন্য কিছু পরামর্শ :
১। একটা করে ট্যাব খুলবেন
২। ছোট ছোট পা ফেলে শুরু করুন
৩। জীবনকে বাড়তি আবর্জনামুক্ত করুন
৪। বাকিদের জানিয়ে দিন আপনার নতুন পরিবর্তনের কথা
Collected.