Faculty of Allied Health Sciences > Pharmacy

মানসিক রোগ

(1/2) > >>

Sultan Mahmud Sujon:
মানসিক রোগ

মানসিক রোগ হলো মস্তিষ্কের এক ধরনের রোগ৷ এ ধরনের অসুস্থতায় মানুষের আচার আচরণ কথা-বার্তা চিন্তা-ভাবনা অস্বাভাবিক হয়ে যায়৷
মানসিক রোগ দু ধরনের হতে পারে:

    * মৃদু ধরনের মানসিক রোগ
    * তীব্র ধরনের মানসিক রোগ

মৃদু ধরনের মানসিক রোগ
এ ক্ষেত্রে জীবনের স্বাভাবিক অনুভূতিগুলো (দুঃখবোধ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি) প্রকট আকার ধারণ করে৷ এ ক্ষেত্রে যে সকল লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো: অহেতুক মানসিক অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা-ভয়ভীতি, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, বুক ধরফর করা, একই চিন্তা বা কাজ বারবার করা (শুচিবাই), মানসিক অবসাদ, বিষণত্না, অশান্তি, বিরক্তি, অসহায় বোধ, কাজে মন না বসা, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, আত্মহত্যার করার প্রবণতা বেড়ে যায় ইত্যাদি৷

তীব্র ধরনের মানসিক রোগ
এ ক্ষেত্রে আচার আচরণ কথাবার্তা স্পষ্টভাবে অস্বাভাবিক হয় ফলে আশেপাশের মানুষরা এটা বুঝতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে যে সকল লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো: অহেতুক মারামারি, ভাঙচুর করা, গভীর রাতে বাড়ির বাইরে চলে যাওয়া, আবোল-তাবোল বলা, সন্দেহ প্রবণতা, একা একা হাসা ও কথা বলা, নিজেকে বড় মনে করা, বেশি বেশি খরচ করা, স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়া, ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, খাওয়া-দাওয়া  ঠিকমতো করে না৷

সাধারণ কিছু মানসিক রোগের নাম নিচে দেওয়া হলো-
১.     সিজোফ্রেনিয়া
২.     মৃগী রোগ
৩.     হিসটেরিয়া
৪.     বিষন্নত
৫.     মাদকাসক্তি

 

ঔষুধ সেবন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷

Sultan Mahmud Sujon:
সিজোফ্রেনিয়া

সিজোফ্রেনিয়া একটি মারাত্মক মস্তিকের রোগ৷ এতে মনের স্বাভাবিকতা হারিয়ে যায় এবং মস্তিস্কের বিঘ্ন ঘটে৷মূল কারণ জানা না গেলেও সিজোফ্রেনিয়ার জন্য নিম্নলিখিত কারণগুলো দায়ী বলে মনে করা হয় -

    * পারিবারিক এবং বংশগত হতে পারে ( মা, বাবার কারো থাকলে তাদের বাচ্চাদের হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে)৷
    * গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে অনেক সময় দেখা দেয়৷
    * পুষ্টিহীনতার কারণে হতে পারে৷
    * রোগজীবাণু দ্বারা মস্তিস্কের সংক্রমণ ঘটলে হতে পারে৷ যেমন-ভাইরাস
    * বিভিন্ন ঔষুধের কারণে হতে পারে৷যেমন-ডায়ইউরেটিস
    * মাথায় আঘাতজনিত কারণে হতে পারে৷

লক্ষণ:

    * রোগীর চিন্তাশক্তি নষ্ট হয়ে যায়৷
    * রোগী সামাজিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে না এবং সমাজ থেকে পৃথক হয়ে যায়৷
    * মানসিক জীবন খণ্ডিত হয়ে যায়৷
    * মানসিকভাবে অস্থিতিশীল হয়৷
    * রোগীর মনে হয় অন্যেরা তার চিন্তাভাবনা টের পেয়ে যাচ্ছে৷
    * রোগী মনে করে তার কর্মব্যস্ততা অন্যের দ্বারা পরিচালিত হয়৷
    * রোগীর দৃষ্টিভ্রম হয়৷
    * রোগী মনে করে তার চারপাশের সবাই তার প্রতি ষড়যন্ত্র করছে এবং গোপনে তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে৷

চিকিত্‌সা:

দ্রত রোগীকে মানসিক ডাক্তার দেখাতে হবে৷

প্রতিরোধ :

    * মানসিক চাপ কমাতে হবে৷
    * মদ এবং নেশাজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে৷
    * ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষুধ সেবন করবেন৷

Sultan Mahmud Sujon:
মৃগীরোগ

মৃগী রোগ আমাদের দেশে একটি অতি পরিচিত রোগ৷ মৃগী রোগ যে কোনো বয়সে হতে পারে৷ এটা কোনো সংক্রামক রোগ নয়৷ মৃগী রোগ একটি গুরুতর স্নায়ু রোগ৷ মস্তিস্ক মানুষের শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে৷ মস্তিস্কের কোষগুলি যদি হঠাত্‌ করে অতিমাত্রায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে তখন মৃগী রোগ দেখা যায়৷ মৃগী রোগের খিঁচুনি হয় এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়৷ মৃগী রোগের একটি বৈশিষ্ট হলো রোগী বার বার আক্রান্ত হয় কিন্তু আক্রান্তের পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়৷

কারণ:

মৃগী রোগের প্রাথমিক কারণ জানা যায়নি তবে নিম্নলিখিত কিছু কারণে মৃগী রোগ হতে পারে৷

    * মাথায় আঘাত পেলে
    * জটিল ও দেরিতে প্রসব হলে
    * মস্তিস্কের প্রদাহ হলে যেমন-মেনিনজাইটিস
    * মস্তিস্কের টিউমার হলে
    * বেশি পরিমান মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে

মৃগী রোগের শ্রেণী বিভাগ

১. সাধারণ
ক) বড় ধরনের মৃগী রোগ
খ) মৃদু ধরনের মৃগী রোগ
২. শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশে

বড় ধরনের মৃগী রোগের লক্ষণ

    * এই রোগ সাধারণত কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে৷ এসময় রোগীর আচরণে পরিবর্তন আসে৷
    * ফিট বা খিঁচুনি হবার পূর্বে রোগী বুঝতে পারে৷
    * রোগী জ্ঞান হারায় ও মাটিতে পড়ে যায়৷ সবগুলো মাংশ পেশী টান টান হয়ে যায় তখন কান্নার মত চিত্‌কার করে এবং রোগী নীল বর্ণ হতে পারে৷ সাধারণত ২০-৩০ সেকেন্ড রোগীর এ অবস্থা স্থায়ী হয়৷
    * ঝঁাকুনির মত খিঁচুনি শুরু হয়৷ মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়৷ রোগী জিহ্বা কামড় দিয়ে রাখতে পারে৷ রোগীর অজান্তেই প্রস্রাব, পায়খানা বেরিয়ে আসতে পারে৷ রোগীর এ অবস্থা প্রায় ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়৷
    * রোগীর শরীর আস্তে আস্তে শীথিল হয়ে আসে৷ রোগী মুর্ছিত অবস্থায় থাকে ও আস্তে আস্তে গভীরঘুমে ঘুমিযে যায়৷ রোগী জেগে উঠার পর কিছু সময়ের জন্য সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না এবং কি ঘটেছে সে ব্যাপারে কিছুই মনে করতে পারে না৷ মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা করে৷

মৃদু ধরনের মৃগী রোগের লক্ষণ :

    * হঠাত্‌ করে অজ্ঞান হয়ে যায়৷ এটা ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী থাকে৷
    * কখনও অজ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে খিঁচুনি শুরু হয়৷
    * খুব কম রোগী অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়৷ আবার সাথে সাথে জ্ঞান ফিরে দাঁড়িয়ে যায়৷

শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশে খিঁচুনি

এটা বিভন্ন রকমের হতে পারে৷ এখানে জ্ঞান হারানোর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই৷ শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় খিঁচুনি হতে পারে৷ বিভিন্ন রকমের মতিভ্রম হতে পারে৷ খিঁচুনি এক অঙ্গ থেকে বাড়তে বাড়তে পুরো শরীরে হতে পারে৷ রোগী অজ্ঞান হতে পারে আবার নাও হতে পারে৷ খিচুনি বন্ধ হওয়ার পর ঐ অঙ্গে প্যারালাইসিস হতে পারে৷

যে সকল কারণে মৃগী রোগীর খিঁচুনি হতে পারে

    * ঠিকমতো ঘুমাতে না পারলে ৷
    * মানসিক চাপের কারণে হতে পারে৷
    * শারীরিক মানসিক অতিরিক্ত খঁাটুনী করলে হয়৷
    * সংক্রমণ রোগ এবং জ্বরের কারণে হতে পারে৷
    * কিছু ঔষুধ, মদ অথবা নেশা জাতীয় কিছু পান করলে হতে পারে৷
    * আলোর ঝলকানি, টিভির খুব সামনা সামনি বসে টিভি দেখলে হতে পারে৷
    * এছাড়াও উচ্চ শব্দ, গরম পানিতে গোসল করলে, জোরে গান বাজনা শুনলে হতে পারে৷

চিকিত্সা :

    * ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে৷

    * রোগীকে নিউরো মেডিসিন (স্নায়ু) বিশেষজ্ঞের সাথে যোগযোগ করতে হবে৷
    * ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ খেতে হবে৷

রোগী যখন ফিট হয়ে যাবে তখন করণীয়

    *     রোগীকে বিপদজনক জায়গা থেকে সরিয়ে আনতে হবে৷ যেমন-আগুন, পানি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি৷
    *     রোগী যাতে অন্য কোনো প্রকার আঘাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷
    *     মাথাটি পাশ ফিরিয়ে এবং সামান্য নিচের দিকে হেলান দিয়ে রাখতে হবে৷ যেন ভালোভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে ও মুখের ফেনা বা লালা গড়িয়ে পড়ে যেতে পারে৷
    *     রোগীর চারিদিকে মানুষের ভীড় করা যাবে না৷
    *     রোগীকে ঘুমাতে দিতে হবে৷ প্রয়োজনে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে৷

পরামর্শ

    *     যে সকল কাজ জীবনের প্রতি ঝঁুকিপূর্ণ সে সকল কাজ মৃগী রোগীদের করা উচিত নয়৷ যেমন-গাড়ী চালানো, আগুনের পাশে কাজ করা, যন্ত্রপাতি চালানো, উঁচুতে কাজ করা ইত্যাদি৷
    *     সঁাতার কাটা, গাড়ী চালানো, সাইকেল চালানো ইত্যাদি পুরোপুরি বাদ দিতে হবে৷
    *     সাধারণ কাজ কর্ম যেমন- স্কুলে যাওয়া  চালিয়ে যেতে হবে৷ রোগীদের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে৷
    *      যে সমস্ত জিনিস মৃগী রোগের ঝঁুকি বাড়িয়ে দেয় সেগুলো বাদ দিতে হবে৷

Sultan Mahmud Sujon:
হিসটেরিয়া

হিসটেরিয়া এমন একটি রোগ যেখানে স্নায়ুবিক কার্য নষ্ট হয় যার সঙ্গে কোনো দৃশ্যমান রোগের সংস্পর্শ থাকে না৷ এই রোগ রোগীর অজান্তেই হয়ে থাকে৷

কারণ:

    * কখনো কখনো পারিবারিক ইতিহাস থাকে
    * মানসিক চাপের কারণে হতে পারে
    * ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন রোগীর ক্ষেত্রে ঘটে

লক্ষণ:

    * সাধারণত যুবক বয়সে বেশি দেখা যায়
    * ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেশি হয়
    * হাত ও পা শক্ত হয়ে যায়
    * মুখ শক্ত হয়ে যায়
    * কঁাপুনি থাকতে পারে
    * কথা বলতে পারে না
    * চোখে অন্ধকার লাগে
    * কানে কম শোনে
    * কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ শোনা যায়
    * মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হয়
    * বমি হতে পারে৷

চিকিত্‌সা:
দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে  যোগাযোগ করতে হবে৷

পরামর্শ

    * রোগীর সঙ্গে আন্তরিকভাবে চলতে হবে৷
    * দুশ্চিন্তা-হতাশা কমাতে হবে৷
    * ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে৷

Sultan Mahmud Sujon:
বিষণত্না বা ডিপ্রেশন

বিষণত্না একটি অসুখ যা কখনো কখনো শারীরিক সমস্যার জন্যও হয়ে থাকে আবার কখনো অন্য কোনো কারণেও হয়ে থাকে৷ আত্মহত্যার প্রধান কারণ বিষণত্না৷ বিষণ্নরোগী নেতিবাচক চিন্তায় জড়িয়ে যায়৷ সে নিজেকে সব ধরনের ক্ষেত্রে পরাজিত ভাবে৷ কোনোভাবেই আত্মবিশ্বাস খঁুজে পায় না৷

কারণ

    *      বিষণত্না পারিবারিক বংশপরম্পরায় চলতে পারে৷ মা-বাবা উভয়ে বিষণত্না রোগে ভুগলে সন্তানদের বিষণত্না হবার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ পুরুষের তুলনায় নারী বেশি পরিমাণ বিষণত্নায় ভোগে৷ নারীদের সামাজিক প্রেক্ষাপটকে এই হারের জন্য দায়ী করা হয়৷ বয়স একটি ফ্যাক্টর৷ বিষণত্নার গড় বয়স ২০-৪০ বছর৷ ইদানীং গবেষণায় দেখা যাচেছ শিশুরাও বিষণত্নায় ভোগে৷ সোস্যাল স্ট্রেস বা পারিপাw©র্শ্বক কাজের চাপ বিষণত্নার একটি ফ্যাক্টর৷
       

উপসর্গ

    *     ওজন কমে যায়
    *     কাজে উত্‌সাহ থাকে না
    *     মন ভালো থাকে না
    *     অপরাধ বোধ জণ্মায়
    *     কিছুতে আগ্রহ পায় না
    *     কোনো কিছুতে আনন্দ পায় না
    *     ঘুমে সমস্যা হয়
    *     প্রায় প্রতিদিন ক্লান্তি, অবসাদে ভোগে
    *     চিন্তা করার সামর্থ্য কমে যায়
    *     মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়
    *     প্রায় প্রতিদিন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে
    *     ক্ষুধা কমে যায়
    *     পেটের সমস্যা দেখা দেয়
    *     শরীর দুর্বল লাগে
    *     শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভূত হয়
    *     আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়, বেঁচে থাকার ইচ্ছা কমে যায়৷  শারীরিক সমস্যার জন্য যখন বিষণত্না দেখা দেয় তা বুঝার উপায়:
    *     বেশি বয়সে বিষণত্না দেখা যায়
    *      অতীতে কখনো মানসিক কোনো সমস্যা ছিল না
    *      পারিবারিক কোনো মানসিক সমস্যা নাই৷

করণীয়
বিষণত্না একটি অসুখ এজন্য দেরী না করে চিকিত্‌সকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে৷

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version