Faculty of Allied Health Sciences > Pharmacy

মানসিক রোগ

<< < (2/2)

Sultan Mahmud Sujon:
মাদকাসক্তি

মাদকাসক্তি বা নেশা এমনই জিনিস তা মদ, গঁাজা, বিড়ি, সিগারেট, চরস, তামাক এবং ইদানীংকালের হেরোইন ইত্যাদি যাই হোক তা একবার ধরলে বা তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে চট করে ছাড়া মুশকিল হয়ে যায়৷ শেষে এমন একটা সময় আসে যখন মানুষ আর নেশার জিনিস খায় না৷ নেশার জিনিসই মানুষকে খেতে থাকে৷ আর এই সর্বনাশা নেশার খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব এমনকি জীবনটা পর্যন্ত হারাতে হয়৷ ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নেশার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া মাদকাসক্তির ব্যাখ্যাটি অনেকটা এরকম -
একজন মাদকাসক্তের মন মাদক গ্রহণের ইচ্ছায় আচ্ছন্ন থাকে৷ মাদক গ্রহণের মাত্রা বাড়ানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে দিন দিন৷ ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিধ্বস্ত হয়ে যায়৷ বাড়তে থাকে সামাজিক সংকটও৷ মাদকের জন্য তীব্র একটি আকা•ক্ষা মাদকসেবীর মস্তিস্কে আসন গেড়ে বসে৷ মাদক গ্রহণের বিশেষ সময়ে, বিশেষ স্থানে গেলে, বিশেষ বন্ধুদের দেখলে এবং সিরিঞ্জ হাতে পেলে মাদক গ্রহণের ইচ্ছেটি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে৷

মাদকাসক্তির কারণ:
এই দেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী আজ মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্ত৷ মানুষ কেন মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে তার সঠিক ধারণা দেয়া কঠিন৷ এই ব্যাপারে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা ৫টি বিষয়কে দায়ী করেন সেগুলো হ�ল - সামাজিক শৃঙ্খলার অভাব, বিচু্যত আচরণ, মূল্যবোধ, সংঘাত এবং অতৃপ্তি৷ এই কথা সত্য যে, মানুষের নিজস্ব কর্মকাণ্ডে, যেসব সঙ্গীর সঙ্গে সে মেলামেশা করে এবং যে পরিবেশে সে বসবাস করে সেগুলোই তাকে মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্ত করে৷ তাছাড়া শহর সমাজে পারিবারিক ভাঙন, সমঝোতার অভাব, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শিথিল সম্পর্ক এবং হতাশার কারণে মানুষ মাদকের প্রতি আসক্ত হচ্ছে৷ বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব, সন্তানের ওপর মাতা-পিতার উদাসীনতাও ছেলে-মেয়েদের মাদকের প্রতি আসক্ত করে৷

মাদকাসক্তির কারণ অনেক, যেমন -

    * মাদকের সহজলভ্যতা (মাদকের কাছে থাকা, সামনে থাকা)
    * মাদকাসক্ত সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশা করা কিংবা অতীতের মাদক গ্রহনের স্মৃতি মধ্যে ডুবে থাকা৷
    * নেতিবাচক অনুভূতি, যেমন - ক্রোধ, বিষাদ, একাকিত্ব, অপরাধবোধ, ভীতি কিংবা উদ্বেগের জালে সেঁটে থাকা৷
    * উত্‌সব উদযাপনের নামে দু-এক দিনের জন্য মাদক গ্রহণ করা৷
    * দৈহিক উপসর্গ, যেমন- ব্যথা, জ্বালা-যন্ত্রনায় ভোগা৷
    * হঠাত্‌ হাতে প্রচুর টাকা-পয়সা চলে আসা৷
    * মাদকাসক্তির চিকিত্‌সা শেষে পুরো ভালো হয়ে গেছি, এখন এক-দুবার মাদক নিলে এমন আর কি হবে - এ ধরনের আত্মবিশ্বাসের ফঁাদে পা দেওয়া৷

কীভাবে বুঝবেন কেউ নেশা করছে
অধিকাংশ সময়ই বাবা-মা বুঝতে পারেন না তাদের সন্তান কখন কী অবস্থায় মাদকনির্ভর হয়ে যাচ্ছে৷ একেবারে শেষ পর্যায়ে যখন তীব্র শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয় তখনই কেবল বুঝতে পারেন৷ অথচ একটু সচেতনভাবে লক্ষ্য রাখলেই বাবা-মা বা পরিবারের লোকজন প্রাথমিক অবস্থায়ই বুঝে ফেলতে পারবেন তাদের সন্তান নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে কি না? মাদকনির্ভরতার লক্ষণ এবং নমুনাগুলো যদি প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলা যায় তাহলে খুব সহজেই সন্তানকে স্নেহ ভালোবাসা এবং প্রয়োজনীয় চিকিত্‌সা ও পরিচর্যা দিয়ে সুস্থ করে তোলা যায়৷

পরিবারের কোনো সদস্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ শুরু করছে কি না তা বোঝার জন্য কতগুলো আচরণগত পরিবর্তন খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, যেমন -

    * হঠাত্‌ করেই স্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তন আসতে পারে৷ অন্যমনস্ক থাকা, একা থাকতে পছন্দ করা৷
    * অস্থিরতা প্রকাশ, চিত্‌কার, চেঁচামেচি করা৷
    * অসময়ে ঘুমানো, ঝিমানো কিংবা হঠাত্‌ চুপ হয়ে যাওয়া৷
    * কারণে-অকারণে মন খারাপ ব্যবহার করা এবং অসংলগ্ন ও অস্পষ্ট কথাবার্তা বলা৷
    * কোথায় যায়, কার সঙ্গে থাকে - এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিরক্ত হওয়া, গোপন করা কিংবা মিথ্যা বলা৷
    * ঘর অন্ধকার করে জোরে মিউজিক শোনা৷
    * নির্জন স্থানে বিশেষত বাথরুম বা টয়লেটে আগের চেয়ে বেশি সময় কাটানো৷
    * রাত করে বাড়ি ফেরা, রাতজাগা, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা৷
    * হঠাত্‌ নতুন অপরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করা৷
    * বিভিন্ন অজুহাতে ঘন ঘন টাকা-পয়সা চাওয়া৷
    * স্বাভাবিক খাবার-দাওয়া কমিয়ে দেওয়া৷
    * অভিভাবক এবং পরিচিতদের এড়িয়ে চলা৷
    * স্বাভাবিক বিনোদন মাধ্যমে ক্রমশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলা৷
    * বাড়ির বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রমাগত টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়া৷
    * ঋণ করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া৷

মাদকাসক্তির চিকিত্‌সা ও পুনর্বাসন
যদি আপনার সন্তান বা পরিচিতজন অতিমাত্রায় মাদকনির্ভর হয়ে পড়ে এবং পারিবারিকভাবে তাকে আর কোনোমতেই নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে তার চিকিত্‌সার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সকদের শরণাপন্ন হোন৷ সামাজিক দুর্নাম কিংবা সম্মানহানির গ্লানিতে না ভুগে হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে চিকিত্‌সাধীন রাখুন৷ একটা কথা মনে রাখতে হবে, নেশা ছাড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, মানসিক জোর৷ মন থেকে নেশার জন্য গভীর অনুতাপ ও অনুশোচনা এবং নেশা করার জন্য নিজের ওপর বাস্তবিক ধিক্কার না এলে কিন্তু শত ওষুধেও বা হাজার পরামর্শেও নেশা ছাড়া সম্ভব হবে না৷

দমিয়ে রাখুন মাদক গ্রহণের ইচ্ছে

    *      যে প্রেক্ষাপটগুলো মাদক গ্রহণের তীব্র ইচ্ছেটি জাগিয়ে তোলে, ধীরে ধীরে সেগুলোর মুখোমুখি হতে হবে৷ সুষ্ঠ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে ধীরে ধীরে ইচ্ছেটির তীব্রতা কমানো যায়৷
    *     নিজেকে বিনোদনমূলক, সৃজনশীল কিংবা উত্‌পাদনশীল কাজে নিয়োজিত করে এক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া যায়৷
    *     নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কিংবা শাসনের যথাযথ শক্তি ধীরে ধীরে অর্জিত হয়৷ এ সময় প্রয়োজন বন্ধু ও পরিবারের সমর্থন এবং পরামর্শ৷

প্রয়োজন বন্ধু ও পরিবারের সমর্থন
মাদকাসক্ত ব্যক্তি মাদকাসক্তিকে কীভাবে মোকাবিলা করবে তা বুঝে উঠতে পারে না তারা৷ এ ক্ষেত্রে প্রথম বাধা হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ ও অবিশ্বাস৷ পরিবারের সদস্যদের মাদকাসক্তি থেকে সেরে ওঠতে থাকা  ব্যক্তির ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে৷মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে মতামত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে৷ আলাপচারিতার পরিবেশ সহজ রাখতে হবে৷ কোনো ভালো কাজের দায়িত্ব তাকে দিতে হবে৷ মন খুলে তার কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে৷ এ অবস্থায় তার সঠিক খাবারের প্রতি নজর দিতে হবে৷ সুষম খাবার, পানি এবং মনোচিকিত্‌সকের পরামর্শমতো নিয়মিত ওষুধ সেবনের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় দিতে হবে৷ তার ব্যক্তিগত দাবি পূরণের ব্যাপারে সংযত হতে হবে৷ তার হাতে যেন টাকা-পয়সা সহজে চলে না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷

শিক্ষকদের ভূমিকা
মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের পরিস্কার ধারণা দিয়ে সতর্ক করে দিতে পারেন৷ কারণ এ বয়সে অনেকরই মাদকের কুফল সম্পর্কে ধারনা থাকে না৷ মাদকাসক্তি থেকে সদ্য সেরে ওঠা ব্যক্তিকে সামাজিক দক্ষতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং চাপ সামলানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে পুনরায় আসক্ত হওয়ার পথ বন্ধ করতে হবে৷প্রতিবছর ২৬ জুন বিশ্বমাদক বিরোধী দিবস পালন করা হয়৷ ১ঌ৮৭ সাল থেকে শুরু করে ২৩টি দেশকে সঙ্গে নিয়ে এই দিনের যাত্রা শুরু হয়েছিল৷ আজ বিশ্বব্যাপী এই দিনটিকে মাদকবিরোধী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে৷ আমাদের দেশেও বেশ ঘটা করে এই দিনটিকে পালন করা হচ্ছে৷এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের এই দেশে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ এবং প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে৷ এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হচ্ছে নারী৷ প্রতি বছর আমাদের দেশে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য বেচা-কেনা হয়৷ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের তরুণ সমাজ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশ৷ তাই অবিলম্বে মাদকের সর্বনাশা ছোবল থেকে বঁাচাতে হবে আমাদের তরুণ সমাজকে৷ তাহলেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে৷ তাই শুধু বছরের একটি দিন নয়৷ প্রতিটি দিনই হবে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলনের দিন এবং এই কাজটি করতে পরিবার, সমাজ, জাতি তথা গোটা দেশকে এবং এটি করতে হবে আমাদের নিজের স্বার্থেই৷ তবেই সুফল পাবে গোটা জাতি৷

sethy:
We should be aware for our mental health. Thank you

Arif:
counseling is important for the mental health such as insomnia, anxiety, apasia.....we should aware from all type of mental health

Sultan Mahmud Sujon:
 :)

Navigation

[0] Message Index

[*] Previous page

Go to full version