তুরস্কের ‘গণিত গ্রাম’

Author Topic: তুরস্কের ‘গণিত গ্রাম’  (Read 1014 times)

Offline Fatema Tuz - Zohora

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 460
  • The power of imagination makes us infinite.
    • View Profile
প্রায় ১১ বছর হলো এই ‘গ্রাম’-এর। বিশ্বে এই রকম গ্রাম এখনো কেবল একটিই। তুরস্কের এই ‘গ্রাম’-এর কথা আন্তর্জাতিক কিছু প্রচারমাধ্যমে এলেও বাংলাদেশে বেশি প্রচারিত নয়।

এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আলী নেসিন। বর্তমানে ৬১ বছর বয়সী এই গণিতবিদ ইস্তাম্বুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। পিএইচডি করেছিলেন ইয়েল থেকে গাণিতিক যুক্তিবিদ্যার ওপর। ২০০৭ সালে গণিত গ্রামের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেই হিসাবে বিকল্প ধারার সবুজে ঘেরা এই গণিতকেন্দ্রের বয়স ইতিমধ্যে দ্বিতীয় দশকে পড়েছে।

গণিতভীতি দূর করা এবং একে বিশ্বজুড়ে আনন্দদায়ক এক চর্চার বিষয় করে তোলাই আলী নেসিনের উদ্দেশ্য। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, ‘আয় থেকে দায় শোধ’ ভিত্তিতে এমন এক শিক্ষা পরিমণ্ডল গড়ে তোলা, যা কেবল গণিতের জন্য নিবেদিত হবে।

বর্তমানে গ্রামটি পরিচালিত হয় একটি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এবং তার পরিচালনায় রয়েছে একটি উপদেষ্টামণ্ডলী। এই মণ্ডলীর সবাই শিক্ষাবিদ। যুক্ত হয়েছেন তাঁরা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে। আলী নেসিন এখনো তাঁর পুরানো কর্মস্থলে যুক্ত রয়েছেন। পাশাপাশি চলছে তাঁর গণিত গ্রাম বিকশিত করার সাধনাও।

তুরস্কের ইজমির প্রদেশের সিরিঞ্চ নামে পাহাড়ি এলাকার ঢালুতে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটা গ্রাম এটি। ইস্তাম্বুল থেকে বিমানে ইজমির এক ঘণ্টার দূরত্ব। সেখান থেকে বাসে এক ঘণ্টায় গণিত গ্রামে পৌঁছানো যায়।

এটি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনে ভরা একটি অঞ্চল। আছে প্রচুর জলপাইগাছ। এর মাঝেই গণিত কার্যক্রমের জন্য প্রথমে একটি ভবন গড়ে তোলা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের চাপ বাড়তে থাকায় এ মুহূর্তে প্রায় ৩০টি ভবন রয়েছে এখানে। আরও রয়েছে ছোট ছোট নানা স্থাপনা। সবই শিক্ষার্থীদের বিবিধ প্রয়োজনকে মাথায় রেখে নির্মিত। প্রতিটি স্থাপনার গায়ে লেখা রয়েছে কাদের অর্থ সহায়তায় তা নির্মিত।

শুরু থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে একে। আলী নেসিনের নামের সূত্রেই এটি এখন ‘নেসিন গণিত গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়ে গেছে। আলী নেসিনের প্রয়াত বাবা আজিজ নেসিন ছিলেন লেখক ও শিক্ষাব্রতী ব্যক্তি। তুরস্কে তাঁকে নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে। বিশেষ করে প্রভাবশালী ইসলামপন্থীদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। ছেলে আলী নেসিন রাজনীতি থেকে দূরের মানুষ। তবে বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ দিয়েই গণিত গ্রামের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছিলেন।

বিকল্প ধারার বিশ্বমানের এক বিদ্যাপীঠ
কল্পনায় যেমনটি আসে, ‘নেসিন গণিত গ্রাম’ অনেকটাই তা-ই। একদল স্বেচ্ছাসেবী গণিতবিদ গ্রামের প্রাণ। যাদের অনেকেই বিশ্বমানের গণিতজ্ঞ। ছাত্র-শিক্ষক সবাই এখানে বন্ধু। কখনো কাঠের চৌকিতে বসে, কোথাও আবার ঘাসে পা ছড়িয়ে গণিত বিষয়ে আড্ডা হচ্ছে। চলছে সেমিনার। ‘সমস্যা’র সমাধান নিয়ে ভাবিত সবাই। এখানে কোনো পরীক্ষা নেই, মার্কিং নেই, পাস-ফেল নেই। নেই সাজার ব্যবস্থাও। শুরুতে উদ্যোগটি ছিল মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। পরে কম বয়সীদের জন্যও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন আছে সব বয়সী; মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত। এমনকি অনেক প্রবীণও।

গ্রামটির বসবাসগত ব্যবস্থাপনাও শিক্ষার্থীরাই চালায়। বিভিন্ন গ্রুপ বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছে। যারা একটু পুরোনো, তাদের গ্রুপপ্রধান করে দেওয়া হয়। থাকা ও বসার জায়গাগুলো ছোট ছোট পাথরখণ্ড দিয়ে খোলামেলাভাবে তৈরি করা হয়েছে এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলিয়ে; যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস খেলা করতে পারে। স্থাপনামাত্রই অনেকটা উন্মুক্ত থিয়েটারের মতো। শব্দদূষণকে এখানে খুবই খারাপ চোখে দেখা হয়। টেলিভিশন তাই এখানে নিষিদ্ধ।

‘গণিত গ্রামে’ বর্তমানে বছরজুড়ে বিভিন্ন সময় মেয়াদে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী আসে। সম্পূর্ণ মাল্টি কালচারাল একটা পরিবেশে প্রতিনিয়ত একত্র হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গণিত-আগ্রহীরা। আবেদনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গণিত গ্রামের উদ্যোক্তরা এখন আগ্রহীদের মধ্যে গণিতের প্রতি অতিনিবেদিতদেরই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গণিতপ্রেমের গভীরতা বুঝতে আবেদনের সঙ্গে আগ্রহের কারণ-সংবলিত একটা রচনাও চাওয়া হয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।

অর্থের জন্য কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না
থাকার জন্য গণিত গ্রামে কিছু খরচপাতি আছে বটে (দৈনিক ১৫-২০ ডলার) তবে যারা দিতে অসমর্থ, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থাও আছে। নেসিন গণিত গ্রামের একটা নীতি হলো, অর্থের জন্য কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। চার বেলা খাবারের আয়োজন আছে এখানে। লেকচারগুলোর মতোই চা ও পানি ফ্রি। কেউ তাঁবুতে থাকে, কেউবা কক্ষে। তবে সবাই সকাল সাতটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে যায়। আটটা থেকে বিভিন্ন স্থানে লেকচার শুরু হয়। বিকেলেও এক দফা লেকচার হয়। রাতে যে যার মতো একা কিংবা দল বেঁধে সমস্যা সমাধানে চিন্তার আসরে বসে।

বৃহস্পতিবার কোনো শিক্ষা কার্যক্রম নেই। সেদিন সবাই গ্রামটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করে দল বেঁধে। থালা-বাসন থেকে বাগান পর্যন্ত সব সেদিন সাফসুতরো করা হয়। খাবার তৈরি ও পরিবেশনেও হাত লাগায় অনেকেই। মূল উদ্যোক্তা অধ্যাপক নেসিনের ভাষায়, ‘শুধু গণিতের জন্য নয়, সহযোগিতা, শ্রদ্ধা ও জীবনের সঙ্গে গণিতের সুষমাকে মেশাতেই এত সব আয়োজন।’

বর্তমানে প্রায় সব মহাদেশ থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ তাদের শিক্ষার্থীদের এখানে অন্তত একটা ম্যাথ-ক্যাম্প পাঠাচ্ছে। সেই অর্থে এই গণিত গ্রাম প্রকৃতই এক ‘বিশ্ব বিদ্যাপীঠ’।

অধ্যাপক নেসিনের শিক্ষাদর্শন খানিকটা প্রথাবিরোধী। তিনি মনে করেন, সব শিক্ষার্থীর ওপর কেন্দ্রীভূত একক পরিকল্পনার কোন মডেল চাপিয়ে দেওয়া ভুল। সবাই একই সিলেবাস, একই সময়ে, একই শিক্ষক দ্বারা সমস্যার সমাধান করতে পারবে, এমন ভাবাও পদ্ধতিগত ভুল। প্রতিটি দেশেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয়তা, ভাষাগত দক্ষতা এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতা এক রকম থাকে না। ফলে দরকার হলো বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষা পরিবেশ।

প্রথম জীবনে নেসিন যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন, তখন তাঁর লক্ষ্য ছিল তুরস্কের জন্য বছরে অন্তত ১০ জন করে উচ্চমানের গণিতবিদ তৈরি করা। এভাবে ৩০ বছর শিক্ষকতা করতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগের জন্য নিজেই বিশ্বমানের একটা সিলেবাস তৈরি করেন। কিন্তু তাঁর তৈরি সিলেবাস শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছিল। এই সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের বাড়তি সময় দিয়ে সাহায্য করতে গিয়েই তাঁর কল্পনায় একটি স্থায়ী অনানুষ্ঠানিক গণিত সেন্টারের কথা। তাঁর বিবেচনায় মূলত ভীতি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষা পরিবেশের অভাব গণিত মেধার স্ফূরণে বাধা দেয়।

নতুন উদ্যোগ
গণিত গ্রামে গণিত শিখতে আসা মানুষদের সঙ্গে কৌতূহলী এমন মানুষও আসছেন, যাঁদের আগ্রহের বিষয় ভিন্ন। বিশেষ করে শিল্পী ও ভাবুকদের উপস্থিতি বাড়ছে এখানে। সেই সূত্রে বর্তমানে এখানে শিল্পকলা ও দর্শনচর্চারও বিকাশ ঘটছে। ফলে শিল্পকলা ও দর্শনচর্চার জন্য আরও কিছু এলাকা নিয়ে নতুন দুটি শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়েছে। নিশ্চিতভাবেই এতে তুরস্কের এই গ্রাম নিয়ে বৈশ্বিক কৌতূহল আরও বাড়বে।

  -প্রথমআলো।

Offline Mousumi Rahaman

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 827
  • Only u can change ur life,No one can do it for u..
    • View Profile
Re: তুরস্কের ‘গণিত গ্রাম’
« Reply #1 on: July 07, 2018, 03:50:31 PM »
Nice Post.. :)
Mousumi Rahaman
Senior Lecturer
Dept. Textile Engineering
Faculty of Engineering
Daffodil International University

Offline Abdus Sattar

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 483
  • Only the brave teach.
    • View Profile
    • https://sites.google.com/diu.edu.bd/abdussattar/
Re: তুরস্কের ‘গণিত গ্রাম’
« Reply #2 on: July 15, 2018, 07:33:26 PM »
Thanks for sharing.
Abdus Sattar
Assistant Professor
Department of CSE
Daffodil International University(DIU)
Mobile: 01818392800
Email: abdus.cse@diu.edu.bd
Personal Site: https://sites.google.com/diu.edu.bd/abdussattar/
Google Scholar: https://scholar.google.com/citations?user=DL9nSW4AAAAJ&hl=en

Offline rakib.cse

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 93
  • Test
    • View Profile
Re: তুরস্কের ‘গণিত গ্রাম’
« Reply #3 on: July 17, 2018, 02:10:51 PM »
 Thanks for sharing.....

Offline mosfiqur.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 297
  • Test
    • View Profile
Re: তুরস্কের ‘গণিত গ্রাম’
« Reply #4 on: July 22, 2018, 12:55:22 PM »
What a village !!
Md. Mosfiqur Rahman
Sr.Lecturer in Mathematics
Dept. of GED