জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীর শিশুসন্তান আছে, তাদের জন্য ডে–কেয়ার সেন্টার চালু করেছে। ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য দিন শিক্ষার্থীরা তাঁদের সন্তানদের ডে–কেয়ার সেন্টারে রাখতে পারবেন। সেন্টারটিতে শিশুদের জন্য থাকা, খাওয়া, ঘুম, প্রাথমিক চিকিৎসা, খেলাধুলা, বিনোদন ও প্রি–স্কুলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এটা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিঃসন্দেহে খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। আমরা মনে করি, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে এ রকম ডে–কেয়ার সেন্টার থাকা খুবই জরুরি।
নারী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারী, যাঁদের শিশুসন্তান রয়েছে, তাঁদের জন্য কর্মস্থলে ডে–কেয়ার সেন্টার বা শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র খুবই প্রয়োজন। জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশুরা শুধু মায়ের দুধ খায়। ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি শিশুকে বুকের দুধও দিতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলে ডে–কেয়ার সেন্টার থাকলে নারীরা সহজেই তাঁদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন।
কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই ডে–কেয়ার সেন্টার নেই। অথচ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শুরু করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা, শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন পেশা ও উৎপাদনশীল খাতে বহু নারী কাজ করছেন। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, ৪০ জন বা তার বেশি নারী নিয়োজিত আছেন এ রকম প্রতিষ্ঠানে ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র থাকতে হবে। কিন্তু এ আইন মানছে খুব কম প্রতিষ্ঠান।
তাই শিশুসন্তানের দেখভালের জন্য নারীদের বাড়ির অন্যান্য সদস্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে শুধু গৃহকর্মীর ওপর নির্ভর করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, এসব গৃহকর্মী বিশ্বস্ত নন। তাঁরা শিশুর দেখাশোনা ঠিকমতো করেন না। তখন সন্তানদের জন্য দুশ্চিন্তায় কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না কর্মজীবী মায়েরা। কাজের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সন্তানের দেখভালের জন্য অনেক শিক্ষিত ও যোগ্য নারী বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। একইভাবে শিক্ষার্থী মায়েরা ক্লাসের পড়ালেখায় মন দিতে পারেন না। তাঁদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে। তাই কর্মস্থলে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডে–কেয়ার সেন্টার থাকাটা খুব জরুরি। কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বাড়াতে এবং নারীদের কর্মক্ষেত্রে ধরে রাখতে হলে কর্মস্থলে ডে–কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসরণে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত ডে–কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলা। সরকারকে এই
দিকটিতে নজরদারি বাড়াতে হবে এবং শ্রম আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
Source: prothom Alo