মর্যাদাহানিতে বন্ধ হচ্ছে গুগল প্লাস

Author Topic: মর্যাদাহানিতে বন্ধ হচ্ছে গুগল প্লাস  (Read 474 times)

Offline Md. Sazzadur Ahamed

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 587
  • Test
    • View Profile
    • DIU Web Profile
বাইন মাছ ধরতে গেলে যেমন পিছলে যায়, তেমনি বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রকদের হাত থেকে পিছলে যাচ্ছে। যতই তাদের ছাই দিয়ে ধরার চেষ্টা করা হোক, তারা অন্য প্যাঁচে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে। গুগল-ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীদের সুবিধার কথা চিন্তা না করে নিজেদের সুবিধার্থে নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু সবকিছু কি তাদের পক্ষে যায়? গুগল প্লাসের কথাই ভেবে দেখুন!

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট হিসেবে একসময় মর্যাদা পাওয়া গুগল প্লাস মর্যাদা খুইয়ে বন্ধ হতে যাচ্ছে। অনেকেই একে আগে বিদায় জানিয়েছেন। গুগল কর্তৃপক্ষও অনেকটা অস্বস্তিতে পড়ে একে বিদায় দিচ্ছেন। এটাকে ঠিক ভালোভাবে বিদায় দেওয়া বলা চলে না। ৮ অক্টোবর গুগল কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১১ সালে তাঁদের চালু করা গুগল প্লাস বন্ধ করে দেবেন তাঁরা। কিন্তু এই সাইটটি বন্ধ হয়ে গেলে তেমন প্রভাব পড়বে কি?

‘ইকোনমিস্ট’ তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, গুগল প্লাস এর মধ্যে ভূতুড়ে জায়গায় পরিণত হয়েছে। এখনো অবশ্য কয়েক কোটি ব্যবহারকারী গুগল প্লাস ব্যবহার করছেন, কিন্তু তাঁরা সেখানে খুব কম সময় কাটান। গুগলের হিসাবে, একবার গুগল প্লাসে কেউ ঢুকলে সেখানে মাত্র এক ঝলক চোখ বুলিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। গড়ে ওই সাইটটিতে ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারী ৫ সেকেন্ডের কম সময় কাটান। তাই গুগল প্লাস বন্ধ হলে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলেই মনে হয়। তবে গুগল কর্তৃপক্ষ এ সাইটটিকে একেবারে শেষ করে দেওয়ার পক্ষেও নন। এখান থেকে যে বিষয়গুলো কাজে লাগানোর মতো অর্থাৎ, সাইটটির একটি সংস্করণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারের জন্য রাখবে।

গুগল প্লাসের বন্ধ করার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, যে পদ্ধতিতে এটা বন্ধ হলো—সেটি। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’–এর এক প্রতিবেদনের পর তড়িঘড়ি করেই গুগল প্লাস বন্ধ করার ঘোষণা এল। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, গত মার্চে গুগল প্লাসের কোডে নিরাপত্তা ত্রুটি ধরা পড়ে। প্রায় পাঁচ লাখের বেশি ব্যবহারকারীর তথ্য থার্ড-পার্টি অ্যাপের কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায়।

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটটিতে ধরা পড়া ওই সফটওয়্যার ত্রুটি বের হওয়ার সময়টা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওই সময় বিশ্বজুড়ে ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’ কেলেঙ্কারি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল। যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ফেসবুক থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার এবং তা নির্বাচনে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৪ সালে ফেসবুক থেকে তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তা ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলার অভিযোগ ওঠে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে। তারা ফেসবুক থেকে নেওয়া তথ্য ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের কাছে বিজ্ঞাপন দেখায়। ওই ঘটনার জের ধরে মার্চ মাসে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে হাজির হতে হয়। মে মাসেই বন্ধ হয়ে যায় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। পরে অবশ্য ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা মিলে অসপেক্স ইন্টারন্যাশনাল নামে নতুন প্রতিষ্ঠান শুরু করেছেন।

ফেসবুকের ওই দুর্দশা দেখে নিজেদের তথ্য কেলেঙ্কারির বিষয়টি চেপে যায় গুগল। গুগলের অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুযায়ী, গুগলের আইনজীবীরা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নিয়ে হইচইয়ের সময় নিজেদের ঝুঁকি সম্পর্কে সজাগ ছিলেন। তাঁরা মনে করেছিলেন, ওই সময় গুগল প্লাসের নিরাপত্তা ত্রুটির কথা জানাজানি হলে নিয়ন্ত্রকদের উৎসাহ গুগলের দিকে চলে আসবে এবং ফেসবুকের সঙ্গে গুগলের দিকেও ছুটে আসবে নিয়ন্ত্রকেরা। গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাইকে মার্ক জাকারবার্গের মতো শুনানিতে ডাকা হবে।

অবশ্য গুগল ও ফেসবুকের ঘটনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এক ব্লগ পোস্টে গুগল দাবি করেছে, তাদের যে নিরাপত্তা ত্রুটির কথা জানা গেছে তাতে কোনো তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এ সমস্যা সমাধান করার পরে তাই তারা চুপ ছিল। ঘটনা কাউকে জানায়নি।

কিন্তু অন্যদিকে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পর ফেসবুকের ওপর আরও বড় এক ধাক্কা এসেছে। ফেসবুক প্রথমে জানায় যে তাদের কাছ থেকে পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে। ফেসবুকের নিরাপত্তাত্রুটি কাজে লাগিয়ে ওই তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফেসবুকের ‘ভিউ অ্যাজ’ নামের একটি ফিচারের মাধ্যমে এই হামলার সুযোগ পেয়েছে হ্যাকাররা। ব্যবহারকারীরা ভিউ অ্যাজের মাধ্যমে অন্যদের কাছে তাঁদের অ্যাকাউন্টটি কেমন দেখান, তা দেখতে পান। এই সুবিধার মাধ্যমে একজনকে ফেসবুক বন্ধুরা কীভাবে দেখে, তা জানা যায়। আক্রান্ত ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট আপনা-আপনি লগ আউট হয়ে যায় এবং আবার লগ ইনের নির্দেশ পায়।

ফোর্বস অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনায় ব্যবহারকারীদের করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেননি এবং সাম্প্রতিক ঘটনায় তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কারা যুক্ত, তা বের করতে পারেননি। এমনকি কী ধরনের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেটিও বলতে পারেননি। তবে পরে জানান, তাঁরা এ ঘটনায় স্প্যামারদের সন্দেহ করছে।

ফেসবুকের ওই তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনায় খুব সতর্ক ছিল গুগল। তাই গত মার্চে গুগল প্লাসের নিরাপত্তাত্রুটির কথা জানলেও তারা প্রকাশ করেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, গুগল প্লাস থেকে পাঁচ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে। এর জের ধরে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট তাদের গুগল প্লাস সেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুগল প্লাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাইরের শত শত ডেভেলপারের কাছে পাঁচ লাখের বেশি গুগল প্লাস ব্যবহারকারীর তথ্য চলে গেছে। তাই গুগল প্লাসের গ্রাহক সংস্করণ (কনজুমার ভার্সন) বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। গুগল প্লাস থেকে তথ্য বিনিময়বিষয়ক নীতিমালা আরও কঠিন করা হচ্ছে।

গুগল এখন বিষয়টি স্বীকার করলেও তা বেশ কিছুদিন ধরেই চেপে রেখেছিল। গুগল বলছে, তাদের সাইট থেকে কেবল ডেভেলপারদের তথ্য নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সফটওয়্যারত্রুটি কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে দুর্বৃত্তরাও তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।

সাধারণত ফেসবুক ও গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে অধীনে নিজেদের তথ্য নিরাপদ থাকবে—এমন প্রত্যাশা করেন ব্যবহারকারীরা। গুগলকে অবস্থানগত তথ্য ও ফেসবুককে নিজের পছন্দের খুঁটিনাটি জানিয়ে দেন তাঁরা। এতে গুগল ও ফেসবুক ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখানোর সুযোগ পান। কিন্তু এখন গুগল ও ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত রাখছে না বলেই অভিযোগ উঠছে। তৈরি হচ্ছে আস্থার সংকট।

‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এক প্রতিবেদনে বলেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে আসা চাপের ভয়ে অ্যালফাবেট কর্তৃপক্ষ আগে এ নিরাপত্তাত্রুটির বিষয়টি জানায়নি। ওই সময় ফেসবুকের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি নিয়ে হইচই হচ্ছিল। গুগল প্লাসের নিরাপত্তাত্রুটির বিষয়টি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে তুলনা হতে পারে—এটা ভেবেই তা চেপে যায় অ্যালফাবেট। এ বিষয়ে গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই অবগত ছিলেন।

নিরাপত্তাত্রুটির কথা চেপে যাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি বিশেষজ্ঞরা। আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফ্রায়েডম্যান ককাজেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জ্যাকব লেম্যান বলেছেন, কারও অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে কি না, তা জানার অধিকার ব্যবহারকারীর রয়েছে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার মতো যে কেলেঙ্কারির মুখোমুখি ফেসবুককে হতে হয়েছে, এটা তার মতোই ফল বহন করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত তথ্যে ঢোকার ক্ষেত্রে কঠোর হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা হয়তো এড়ানো হবে। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রকদের কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রটেকশন রেগুলেশন, ক্যালিফোর্নিয়ায় ডেটা-প্রাইভেসি আইনসহ ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে।

ইন্টারনেট দুনিয়ার বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অবশ্যম্ভাবী বলে মেনে নিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, তাদের যতটা কাঠামোর ভেতর রাখা যায়, ততই তাদের জন্য সুবিধা। গুগল, ফেসবুকের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কাছে জাতীয় প্রাইভেসি আইন করার জন্য লবিং শুরু করেছে। এতে স্থানীয় অঙ্গরাজ্যের নানা নিয়ম মানার প্রয়োজন হবে না তাদের। অর্থাৎ যে নীতি নিলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানীয় আইন মানতে হবে না, সে জন্য তাদের যতে তোড়জোড়। ‘ইকোনমিস্ট’ বিষয়টিকে ‘শেয়ালের মুরগি পালন’ সিদ্ধান্তের মতোই দেখছে।
Md. Sazzadur Ahamed
Assistant Professor & ​Program Coordinator
​B.Sc. Program Coordinator (CSE)
Dept. of Computer Science and Engineering
Daffodil International University
Daffodil Smart City, Birulia, Savar, Dhaka-1216