"কৃষ্ণ গহ্বর"
শব্দটি যেমন শ্রুতিমধুর, তেমনি রহস্যময়।
কৃষ্ণগহ্বর বা কৃষ্ণ বিবর (ব্ল্যাক হোল নামেও পরিচিত) মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি বিষয়ক একটি বহুল প্রচলিত ধারণা। এই ধারণা অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের এমন একটি বস্তু যা এত ঘন সন্নিবিষ্ট বা অতি ক্ষুদ্র আয়তনে এর ভর এত বেশি যে, এর মহাকর্ষীয় শক্তি কোন কিছুকেই তার ভিতর থেকে বের হতে দেয় না, এমনকি তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণকেও নয়। প্রকৃতপক্ষে এই স্থানে সাধারণ মহাকর্ষীয় বলের মান এত বেশি হয়ে যায় যে এটি মহাবিশ্বের অন্য সকল বলকে অতিক্রম করে। ফলে এ থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না। অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথম তৎকালীন মহাকর্ষের ধারণার ভিত্তিতে কৃষ্ণ বিবরের অস্তিত্বের বিষয়টি উত্থাপিত হয়।
ব্ল্যাক হোল নিয়ে বহু বিজ্ঞানী গবেষণা করে করে নানা রকম অবাককর তথ্য উদঘাটন করেছেন। তবে ১৭৮৩ সালে সর্বপ্রথম ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল ধারনা প্রদান করেন যে, "বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু, যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না"। কিন্তু কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কিত এ ধরনের মতামত ঊনবিংশ শতাব্দিতে প্রকটভাবে উপেক্ষিত হয়। কারণ আলোর মতো ভরহীন তরঙ্গ কিভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে সেটা বোধগম্য ছিল না।
ব্ল্যাকহোল নিয়ে সমগ্র বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এমনকি অনেকেই এর অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলে। তবে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ইতিহাসে সর্বপ্রথমবার ব্ল্যাকহোলের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। বৃটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে দূরবর্তী একটি গ্যালাক্সী থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক সাময়িকী অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে। আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরের সেই ব্ল্যাকহোলের ছবি তোলা হয়েছে বিশ্বব্যাপী আট টেলিস্কোপের মাধ্যমে।
বিবিসি বলছে, গ্যালাক্সিটি পৃথিবী থেকে চার হাজার কোটি কিলোমিটার দূরে অবিস্থিত। আর আয়তনে সেটি পৃথিবীর থেকে ৩০ লাখ গুণ বড়। বিজ্ঞানীরা এটিকে বর্ণনা করেছেন ‘মনস্টার’ বা দৈত্য হিসেবে।
এম৮৭ নামের একটি গ্যালাক্সিতে থাকা ব্ল্যাকহোল
এই ছবি তোলার জন্য পরীক্ষা চালানোর প্রস্তাব করেন নেদারল্যান্ডেসর র্যাডবোউড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেইনো ফালকে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ব্ল্যাকহোলটি এম৮৭ নামের একটি গ্যালাক্সিতে খুঁজে পাওয়া গেছে। তিনি জানান, ‘আমরা যেটা দেখতে পেয়েছি তাতে সেটি আমাদের পুরো সৌরজগতের চেয়েও বড়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সূর্যের চেয়েও সাড়ে ছয়শ কোটি গুণ বেশি শক্তিধর এটি। আমরা ধারণা করছি, এটি সবচেয়ে ভারী ব্ল্যাকহোল। এটা আদতে একটা দৈত্য বা মনস্টার। মহাবিশ্বের কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে এটিই চ্যাম্পিয়ন।’
কৃষ্ণ বিবর ও আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে গবেষনা করে সারাজীবন পাড় করে দিয়েছেন স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং এর মত বড় বড় বিজ্ঞানীরা। ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষনা চলে আসছে বহু যুগ ধরে এবং চলছে এখনো। এটি দিন দিন খুলে দিচ্ছে ভাবনার দুয়ার। আমরা যত বেশি ভাববো, তত বেশি প্রশ্নের জন্ম দিবে। আর প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর খুজতে খুজতে ডুবে যেতে পারব গবেষণায়। এই মহাবিশ্বের প্রতিটি ক্ষুদ্র জিনিস থেকে শুরু করে অতি বৃহৎ জিনিস পর্যন্ত সবকিছুই গবেষণার রাস্তা খুলে দিচ্ছে আমাদের। আসুন আমরা বিজ্ঞান নিয়ে ভাবি। মনে প্রশ্ন জাগিয়ে তুলি, "Why?, Who?, How?, When?, What?”. উত্তর খুজতে যেয়ে বেরিয়ে আসবে অজানা অনেক তথ্য। সমৃদ্ধ হবে নিজেদের জ্ঞান ভান্ডার।