আক্কেল দাঁতের সঙ্গে মানুষের বুদ্ধিসুদ্ধি বা আক্কেলের কোনো সম্পর্ক নেই। সতের থেকে একুশ বছর বয়সে চোয়ালের ওপরের ও নিচের দু’পাশের শেষাংশে দুটি করে মোট চারটি দাঁত ওঠে। এগুলোই হলো আক্কেল দাঁত।
আক্কেল দাঁতের ব্যথা সম্পর্কে অনেকেই জানেন। মুখের অন্যান্য দাঁত ওঠার সময় টের না পেলেও বড় রকমের আক্কেল সেলামি দিতে হয় আক্কেল দাঁত ওঠার সময়। এ সময় দাঁত ও মাড়ির ব্যথা, মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁত ও মাড়ির মাঝখানে ক্ষত তৈরি হওয়ায় খেতে ও কথা বলতে সমস্যায় পড়তে হয়। দাঁতের সঙ্গে পুরো মাথা জুড়ে তীব্র ব্যথা অনুভুত হয়। অন্যান্য ব্যথা সহ্য করা গেলেও আক্কেল দাঁতের ব্যথা সহ্য করা দায়।
তবে, অসহ্যকর এই ব্যথা প্রাকৃতিক উপায় সহজে নির্মূল করা সম্ভব-
লবন: একগ্লাস কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলি করতে হবে। সরিষার তেলের সঙ্গে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে আক্রান্ত দাঁতের গোড়ায় ডলে দিলেও ব্যথা কমে যায়। এছাড়া সামান্য লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়ো নিয়ে সামান্য পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর পেস্টটি ব্যথায় আক্রান্ত দাঁতে লাগাতে হবে। কিছুক্ষণ পেস্টটা রেখে তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলি করে ফেলতে হবে। এইভাবে ৩/৪ করলেই দাঁতের ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
লবঙ্গ ও পিপারমিন্টের তেল :দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গের ব্যবহার আদিকাল থেকে সুপরিচিত। এতে রয়েছে ইউজেনল নামক প্রদাহবিরোধী ও বেদনানাশক উপাদান। পিপারমিন্টেও রয়েছে ব্যথানাশক উপাদান যা দাঁতের সমস্যায় দ্রুত কাজ করে। লবঙ্গ বা পিপারমিন্টের কয়েক ফোঁটা তেল তুলায় নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখতে হবে।
পেঁয়াজ-রসুন: পেঁয়াজে আছে অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিমাইক্রবিয়াল উপাদান যা দাঁতের ব্যথা, জীবাণু সব কিছু সেরে তুলতে সাহায্য করে। পেঁয়াজ ছিলে কেটে নিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে। যদি পেঁয়াজ চিবিয়ে খেতে ভালো না লাগে তাহলে সামান্য পেয়াজের কোয়া নিয়ে আক্রান্ত দাঁতে দিয়ে রাখতে হবে। দিনে ২/৩ বার এইভাবে করুন দাঁত ব্যথা কমে যাবে। একইভাবে রসুনও দাঁত ব্যথা কমায়।
আদা: এক টুকরো আদা চিবালে আরাম পাওয়া যায় এ ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করবে।
হলুদের মাউথওয়াশ: ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হওয়ায় আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। দাঁতের ব্যথা কমাতেও এর জুড়ি নেই। এক কাপ গরম পানিতে হাফ চা চামচ হলুদের গুঁড়া, দুটি লবঙ্গ ও দুটি শুকনো পেয়ারা পাতা নিতে হবে এবনহ কুলকুচি করতে হবে।
ভ্যানিলা: ভ্যানিলা ভিজিয়ে রাখা পানিতে তুলা ভিজিয়ে দাঁতে ধরলে তা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
লেবুর রস: আক্রান্ত দাঁতে লেবুর রস দিলে ব্যথা কমে যায়।
আপেল সাইডার ভিনেগার: আপেল সাইডার ভিনেগারে তুলা ভিজিয়ে দাঁতে চেপে রাখলে কিছুক্ষণের জন্য ব্যাথা সারবে।
চায়ের লিকার: চিনি ও দুধ ছাড়া গরম চায়ের লিকার খেলে দাঁতে ব্যথায় সাময়িক আরাম পাওয়া যাবে।
আদা ও লাল মরিচ: আদা ও মরিচের পেস্ট তুলার সাহায্যে আক্রান্ত দাঁতে লাগাতে হবে। তাপ উৎপাদনকারী এই মসলার পেস্ট দাঁতের কঠিনতর ব্যথা প্রতিহত করবে। মাড়িতে এটি ব্যবহার করা যাবে না। এতে জবালাপড়া করতে পারে। খুব গরম অনুভব হলে পানি দিয়ে কুলকুচি করা যেতে পারে।
শসা, আলু, বাঁধাকপি: ভেষজ উপাদানগুলো হাতের কাছে পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে সবজির ঝুড়ি হতে পারে সমাধান। ফ্রিজে রাখা শসা, আলু বা বাঁধাকপি যেকোনো একটি মুখে ঢুকতে পারে এমন সাইজের টুকরো করে কাটুন। টুকরাটি আক্রান্ত দাঁতের ওপর রাখতে হবে। ঠাণ্ডা ক্ষত প্রশমিত করবে ও ব্যথা কমাবে।
লবঙ্গের তেল ও গোলমরিচ গুঁড়ো: লবঙ্গের তেলের সঙ্গে এক চিমটি গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে আক্রান্ত দাঁতের গোড়ায় লাগাতে হয়। এতে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়।