ইসলামের দৃষ্টিতে মাদকতা- ১ম পর্ব

Author Topic: ইসলামের দৃষ্টিতে মাদকতা- ১ম পর্ব  (Read 2849 times)

Offline mehnaz

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 167
    • View Profile
ইসলাম সকল প্রকার মাদক তথা নেশাদার দ্রব্য হারাম ঘোষণা করেছে। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন, ‘প্রত্যেক নেশাদার দ্রব্যই মদ আর যাবতীয় মদই হারাম’।*১* অথচ এই মাদকের ভয়ংকর থাবায় আজ বিশ্বব্যাপী বিপন্ন মানব সভ্যতা। এর সর্বনাশা মরণ ছোবলে জাতি আজ অকালে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ভেঙ্গে পড়ছে অসংখ্য পরিবার। বিঘ্নিত হচ্ছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন। বৃদ্ধি পাচ্ছে চোরাচালানসহ মানবতা বিধ্বংসী অসংখ্য অপরাধ। মাদকাসক্তির কারণে সকল জনপদেই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বেড়ে গিয়ে মানুষের জান-মাল ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। সমাজের অধিকাংশ অপরাধের জন্য মুখ্যভাবে দায়ী এই মাদকতা। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ‘মদ পান করো না। কেননা তা সকল অপকর্মের চাবিকাঠি’।*২* অন্য হাদীছে এসেছে, ‘তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক। কেননা তা অশ্লীল কাজের মূল’।*৩* আলোচ্য প্রবন্ধে ইসলামের দৃষ্টিতে মাদকতা ও এর প্রতিকারের উপায় আলোচনা করা হ’ল -

আভিধানিক অর্থ :
মাদকদ্রব্যের আরবী প্রতিশব্দ ‘খমর’ (خمر)। এর অর্থ- সমাচ্ছন্ন করা, ঢেকে দেয়া। এই সকল অর্থের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণেই মদ ও শরাবকে ‘খমর’ বলা হয়।

Cambridge Dictionary-তে বলা হয়েছে, An alcoholic drink which is usually made from grapes but can also be made from other fruits or flowers. It is made by FERMENTING, the fruit with water and sugar.
‘মদ হ’ল নেশাকর পানীয় যা সাধারণত আঙ্গুর থেকে তৈরী হয়। তবে অন্যান্য ফল ও ফুল থেকেও তৈরী হ’তে পারে। এটা উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য চিনি ও পানির মাধ্যমে ফল দ্বারা তৈরী হয়’।

পারিভাষিক অর্থ :
‘যে সকল বস্তু সেবনে মাদকতা সৃষ্টি হয় এবং বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে অথবা বোধশক্তির উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে তাকে মাদকদ্রব্য বলে। কবি বলেন,

‘মদ পান করে আমার বিবেক হারিয়ে গেছে।
মদ এভাবেই বুদ্ধিকে নিয়ে খেল-তামাশা করে’।

সাধারণত নেশা জাতীয় দ্রব্যসামগ্রী গ্রহণ করা বা পান করাই মাদকাসক্তি।

এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর বাণী :
‘মদ বা মাদকদ্রব্য তাই, যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে’।*৪*

মাদক নিষিদ্ধকরণের ক্রমধারা :
ইসলাম শুরুতেই মদ হারাম ঘোষণা করেনি; বরং এটি নিষিদ্ধকরণে শরী‘আত এমন পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল যে, আজীবনের অভ্যাস ত্যাগ করা মানুষের পক্ষে অত্যন্ত সহজ বলে মনে হয়েছিল। এজন্য ইসলাম একান্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রথমে শরাবের মন্দ দিকগুলো মানব মনে বদ্ধমূল করেছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যখন আসমানী বিধান নাযিল হচ্ছিল তখন মদ সমগ্র মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছিন্ন অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেজন্য এ পথ অবলম্বন করতে হয়েছে। কেননা তখন যদি হঠাৎ করে মাদক হারাম ও নিষিদ্ধ করা হ’ত, তাহ’লে তা পালন করা তখনকার লোকদের পক্ষে বড়ই কঠিন হয়ে পড়ত। অনেকে হয়ত তা গ্রাহ্যই করত না।

কুরআন মাজীদে প্রথমতঃ মদের অপকারিতা ও পাপ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন! এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়’ {বাক্বারাহ ২১৯}। এরপর ছালাতের সময় মদ পান হারাম করে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন ছালাতের ধারে-কাছেও যেও না। যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ’ {নিসা ৪৩}। এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট হচ্ছে- একজন ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় ছালাত আদায় করার সময় পড়ে- ‘হে কাফেররা! তোমরা যার ইবাদত কর, আমি তার ইবাদত করি’। এভাবে গোটা সূরা সে ‘না’ সূচক অব্যয় لا বাদ দিয়ে পড়ে’।*৫* অতঃপর মদ চিরতরে হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন,

‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের কার্য বৈ কিছু নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহ্‌র স্মরণ ও ছালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে?’ {মায়েদাহ ৯০-৯১}।

শরী‘আতের নির্দেশ সমূহের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে, ইসলামী শরী‘আত কোন বিষয়ে কোন হুকুম প্রদান করতে গিয়ে মানবীয় আবেগ-অনুভূতি সমূহের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখেছে, যাতে মানুষ সেগুলোর অনুসরণ করতে গিয়ে বিশেষ কষ্টের সম্মুখীন না হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না’ {বাক্বারাহ ২/২৮৬}।

রাসূল (ছা.)-এর প্রেরিত এক ব্যক্তি যখন মদীনার অলিতে-গলীতে প্রচার করতে লাগল যে, মদ্যপান হারাম করা হয়েছে, তখন যার হাতে শরাবের যে পাত্র ছিল, তা তারা সেখানেই ফেলে দিয়েছিল। যার কাছে মদের কলস বা মটকা ছিল, তা ঘর থেকে তৎক্ষণাৎ বের করে ভেঙ্গে ফেলেছিল।*৬*

আনাস (রাঃ) এক মজলিসে মদ পরিবেশনের কাজ সম্পাদন করছিলেন। আবু তালহা, আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ, উবাই ইবনু কা‘ব, সুহাইল (রাঃ) প্রমুখ নেতৃস্থানীয় ছাহাবীগণ সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। প্রচারকের ঘোষণা কানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন, এবার সমস্ত শরাব ফেলে দাও। এর পেয়ালা, মটকা, হাড়ি ভেঙ্গে ফেল।*৭*
*১*. মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৩৮।
*২*. ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭১, হাদীছ ছহীহ।
*৩*. নাসাঈ হা/৫৬৬৭, হাদীছ ছহীহ।
*৪*. বুখারী; মিশকাত হা/৩৬৩৫ ‘হুদূদ’ অধ্যায়।
*৫*. ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩৪৯।
*৬*. মুসলিম হা/৩৬৬২।
*৭*. বুখারী হা/৬৭১২।
Mehnaz Tabassum

Offline hasibur rahaman

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 136
    • View Profile
Very Useful Article..
Md. Hasibur Rahaman
Assistant Administrative Officer
Office of the Dean (FSIT) & Emeritus Professor
Daffodil International University

Offline sami

  • Faculty
  • Jr. Member
  • *
  • Posts: 82
    • View Profile
Nice post madam....
Its really so informative....
waiting for next post that is next episode...
Mohammad Samiullah,
Lecturer,
Department of CSE, CIS & CS,
Daffodil International University.

Offline Md. Zakaria Khan

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 381
  • active
    • View Profile
লেখাটা সত্যিই দারুণ হয়েছে