সময়কে বদলে দেওয়া প্রযুক্তি

Author Topic: সময়কে বদলে দেওয়া প্রযুক্তি  (Read 893 times)

Offline thowhidul.hridoy

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 185
  • Test
    • View Profile
সত্তরের দশকের পর থেকেই খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তি বিশ্বের প্রেক্ষাপট। প্রযুক্তির অগ্রগামিতার গতিতে খুব দ্রতই পুরোনো হয়ে যাচ্ছে আজকের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিটিও। সাথে সাথে বৈপ্লবিক সব প্রযুক্তির আগমণও ঘটছে। তেমনি সামনের দিনগুলোতে বৈপ্লবিক সব পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম, এরকম কিছু প্রযুক্তির কথা এই লেখায়—

সত্তর দশকের কথা। কম্পিউটার বস্তুটা তখনও কেবল গবেষণানির্ভর কাজের জন্য আর শিল্প পর্যায়ে ব্যবহারের উপযোগী এক ডিভাইস। একেকটা কম্পিউটারের সিপিইউ’র আকৃতি ছোটখাট একটা ঘরের আয়তনের সমান। আর তখনকার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী সাধারণ মানুষ কম্পিউটার দিয়ে করবেই বা কী? তবে এই ধারণার বাইরেও চিন্তা করার মানুষের অভাব ছিল না। স্টিভ জবস, বিল গেটস, পট ওটালিনি, ডেভিড মুরের মতো মানুষের কল্পনা ছিল সুদূরপ্রসারী। তারা কম্পিউটার নামক যন্ত্রটিকে গবেষণা আর বিশেষায়িত কাজের বাইরে একদম সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজের উপযোগী ডিভাইস হিসেবেই ভাবতে পেরেছিলেন। এইসব স্বদ্রষ্টা আর তাদের অনুসারীদের মেধা আর শ্রমে আজ সারাবিশ্বের মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে কম্পিউটার। এই কম্পিউটারেও তৈরি হয়েছে হাজারো রকমফের। আর কম্পিউটারের সাথে সংশ্লিষ্ট সব প্রযুক্তি মিলে গোটা বিশ্বের চিত্রটাই বদলে গিয়েছে। কম্পিউটার দিয়ে প্রযুক্তির যে যুগের সূচনা, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন এবং আধুনা ট্যাবলেট পিসি আর স্মার্টফোনে সেই যুগ পৌঁছে গেছে পরিণত এক অবস্থানে। তবুও প্রযুক্তির চমক থেমে নেই। সামনের দিনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম, এমন কিছু প্রযুক্তির কথা নিয়ে আলোচনার কমতি নেই কোথাওই। এরকম কিছু প্রযুক্তির কথা তুলে ধরা হলো এই লেখায়—

মেমরিস্টোর:
ইলেকট্রনিক্সের সূচনালগ্ন থেকেই সার্কিট কম্পোনেন্ট হিসেবে তিনটি উপাদানকেই চিনে এসেছে সবাই— রেজিস্টার, ইনডাক্টর এবং ক্যাপাসিটর। ১৯৭১ সালে এসে ইউসি বর্কলের গবেষক লিওন চুয়া বিশ্বকে চতুর্থ এক সার্কিট কম্পোনেন্টের ধারণা প্রদান করেন। তিনি এর নাম দেন মেমরিস্টর। ‘মেমোরি’ এবং ‘রেজিস্টর’ শব্দ যুগল থেকেই উত্পত্তি মেমরিস্টোর নামের। আর এর কাজটাও তেমনই। মেমরিস্টরের মধ্য দিয়ে কতটুকু বিদ্যুত্ প্রবাহিত হয়েছে, তা এটি এর স্মৃতিতে সংরক্ষণ করতে পারে। কেবল তাই নয়, এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুতের পরিমাণকেও এটি বদলে দিতে পারে। আর সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যখন বিদ্যুতের প্রবাহ বন্ধও থাকে, তখনও এটি এর বিদ্যুতিক অবস্থাটিকে সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। যার ফলে এখনকার ফ্ল্যাশ মেমোরির চাইতেও অনেক বেশি দক্ষ এবং কার্যকর মেমোরি স্টোরেজ হিসেবে এর ব্যবহার সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে মেমরিস্টরের ব্যবহারে ডিভাইসগুলোতে মেমোরির ঘনত্ব আরও বাড়ে। র্যামকেও এটি প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম করে। সলিড স্টেট পিসি’র যে ধারণাটি নিয়ে গবেষকরা কাজ করেছিলেন, তাও সম্ভব হয়েছে এরই কল্যাণে।

৬৪- কোরের সিপিইউ:
কম্পিউটারের যাত্রার শুরু থেকেই প্রসেসর হিসেবে এক কোরের প্রসেসরই ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে চলতি শতকের শুরু থেকেই একাধিক কোরের প্রসেসর যাত্রা শুরু। এখন তো হরহামেশাই কোয়াড-কোর প্রসেসর ব্যবহূত হচ্ছে পিসিতে। প্রসেসর নির্মাণে বিশ্বসেরা দুই প্রতিষ্ঠান ইন্টেল এবং এএমডি’র কল্যাণে এখন প্রসেসরের কোর সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৬৪-এ। শুধু কোর সংখ্যাতেই নয়, প্রসেসরের আসরেও এসেছে বিশাল পরিবর্তন। এখন তারা কাজ করছেন ২২ ন্যানোমিটার নিয়ে। এর চেয়েও ছোট আকারের চিপে ৬৪ কোরের প্রসেসর নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রেখেছে ইন্টেল এবং এএমডি উভয়েই। ইতোমধ্যে ৬৪ কোরের সিপিইউ বাজারে উন্মুক হয়েছে।

ইশারায় নিয়ন্ত্রণ:
মাইক্রোসফটের কাইনেক্টের কল্যাণে ইতোমধ্যেই আমরা ইশারা এবং শরীরের নড়াচড়ার মাধ্যমে গেমিংয়ের অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত। তবে এর বাইরেও সব ধরনের ডিভাইসের জন্যই শািরাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে এবং এমনকি শুধুমাত্র চোখের ইশারায় নিয়ন্ত্রণের বিষয়ও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। চোখের ইশারায় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের কিছু প্রোটোটাইপেও ইতোমধ্যে প্রদর্শন করেছেন ম্যাসাচুসেট ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকরা। তারা জানিয়েছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই প্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ তৈরি করে বাজারজাত করা খুবই সম্ভব।

সেমিকন্ডাক্টর:
প্রযুক্তি বিকাশের অন্যতম মূলে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর। এই সেমিকন্ডাক্টরের নানা রকফোর দিয়েই তৈরি হয় সব যন্ত্রাংশ। শুরু থেকেই সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে নানান ধরনের গবেষণা চালিয়ে আসছেন গবেষকরা। তবে এবার সেমিকন্ডাক্টরে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে গ্রাফিন। গ্রাফিন মূলত অত্যন্ত পাতলা, অত্যন্ত শক্তিশালী, স্বচ্ছ, পরিবাহী এবং নিজে নিজেই পরিবর্তনযোগ্য এক ধরনের পদার্থ। গবেষকরা জানিয়েছেন, গ্রাফিনের উপরে তারা ন্যানোওয়্যার তৈরি করতে পারে। এতে করে বর্তমানে সিলিকন সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করে সাধারণ চিপের তুলনায় গ্রাফিন দিয়ে তৈরি তৈরি চিপের আকার হবে একশগুণ ছোট হচ্ছে। কারণ গ্রাফিন তৈরিতে গবেষকরা মূলত একটি অনুর পুরুত্বের স্তর ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে গ্রাফিন ব্যবহার করে চিপ তৈরি করাটা অর্তের দিক থেকেও অনেক বেশি সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। নওরোজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ড. হেলজি উইম্যান গ্রাফিন নিয়ে কাজ করেছিলেন সহকর্মী অধ্যাপক বোর্ন- অভ ফিনল্যান্ডের সাথে। ২০১২ সালে তাদের গবেষণা চলাকালে আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, আগামী এক দশকে প্রচলিত সেমিকন্ডাক্টরের বিরাট একটি অংশ দখল করতে সক্ষম হয়েছে গ্রাফিন। আর তাতে করে কম্পিউটিং ডিভাইসে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
Md. Thowhidul Islam
Asst. Administrative Officer (Hall)
Daffodil International University (DIU), PC

Cell: 01847334814
Web: www.daffodilvarsity.edu.bd