প্রথম যখন উত্তরাতে আসি - আমি নিজেই তখন থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট ছিলাম। ফাঁকা ফাঁকা ঘরবাড়ি। বেশীর ভাগের গেটেই তখন টু-লেট ঝুলতো। ডেভেলপেরদের আগ্রাসী হাত তখনও এলাকাতে পড়েনি। ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে বিকালে ঘুরে বেড়াতাম রাস্তা দিয়ে। খুব ভালো লাগতো। উত্তরার রাস্তা গুলো তখন খালিই থাকতো। আর অনেক মনোরম ছিল।
কিছু দিন পর চাকুরীতে ঢুকার পর তেমন আর পথে পথে ঘুড়া হয়নি। ফ্যাক্টরীর মাইক্রো তে উঠতাম মেইন রোড থেকে। মেইন রোডে যেতাম রিক্সায় করে। আবার ফেরার সময় মেইন রোড থেকে আবার রিক্সায় বাসায় আসতাম।
গত ২ - ৩ বছর আগে ভেবে দেখলাম কিছুটা বয়স হয়েছে। তাই হাটাহাটি করা দরকার। শুরু করালাম ছুটির দিনে হাঁটাহাঁটি। প্রথমে কিছুদিন পার্কে হেটেহেটে চক্কর দিতাম। কিন্তু খুব একঘেয়ে মনে হতে লাগলো এই গোল ভাবে একই পথে হাটতে। আবার শুরু করলাম রাস্তায় হাঁটাহাঁটি। আমাদের বাসা থেকে হাউস বিল্ডিং যে এত কাছে তা না হাটলে বুঝতাম না। আগে শুধু হাউস বিল্ডিং কেন - কাছের আজমপুর মেইন রোডে যেতে হলেও হেটে যেতাম না।
যে কোন জায়গা খুব ভাল ভাবে চিনতে হলে হেঁটে হেঁটে ঘুরার কোন বিকল্প নাই। এলাকার দোকান - বাজার বা কোথায় কি পাওয়া যায় - এই গুলো সম্পর্কে ভালো ধারনা করা যায় হেঁটে বেড়ালে।
এর বাইরেও আমাদের দেশের দেশের মানুষের মন মানুশিকতা জানতে হলে হাঁটার থেকে আর ভাল কিছু হতে পারে না। বেশ কিছুদিন হাঁটার পরে রাস্তার মানুষ ও তাদের মনমানুশিকতা সম্পর্কে কিছুটা ধারনা হয়েছে।
আমার পর্যবেক্ষণ বলে - রাস্তায় যারা হেঁটে চলে অর্থাৎ পথে পথে যাদের কাজ তারা অত ভয় পায় না। বেশী ভয় পায় যারা গাড়ীতে করে চলে। কারো বিপদে এগিয়ে আসে এই পথচারী মানুষেরাই। তখন গাড়ী চালকেরা পাশ দিয়ে এড়িয়ে চলে যায়।
আমাদের এই শহর সম্পর্কে ধারনা পালটে দেবে - যদি কেউ পথে হেঁটে পর্যবেক্ষণ করে।