দুই টাকার ব্যাংক, কোটি টাকার সাফল্য

Author Topic: দুই টাকার ব্যাংক, কোটি টাকার সাফল্য  (Read 888 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management


অর্থাভাবে স্কুলের পোশাক কিনতে না পারায় সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির মেহরুন্নেসার স্কুলে আসাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

হয়তো স্কুলই ছেড়ে দিতে হতো, কিন্তু নতুন স্কুলের পোশাক নিয়ে মেহরুন্নেসার বাড়িতে হাজির হন তার স্কুলের এক শিক্ষক। স্কুলের দুই টাকার ব্যাংকের টাকায় কিনে এনেছেন নতুন পোশাক। 

সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন উদাহরণ রয়েছে আরো। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে এবং ঝরে পড়া ঠেকাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে দুই টাকার ব্যাংক।

গত বছরের শুরুতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কমপক্ষে দুই টাকা করে নিয়ে এই উদ্যোগ নেন স্কুলের শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন। আর একারণে এর নাম দেওয়া হয় “দুই টাকার ব্যাংক”।

দুই টাকার ব্যাংকের শুরু সম্পর্কে মোসাদ্দেক বলেন, “২০১৮ সালের শেষদিকে একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী মাত্র ১০০ টাকা কম পড়ায় যখন রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিতে পারছিল না, তখন দুই টাকা করে তুলে রেজিস্ট্রেশন ফর্মের ফি দেওয়া হয়।”

তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৭১০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার রায় বলেন, “শিক্ষার্থীরা নিয়মিত টাকা জমা করে। তুলনামূলক দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের স্কুলের পোশাক, জুতা, ব্যাগ, খাতা, ক্যালকুলেটর কিনে দেওয়া হয় এই টাকা থেকে।” তিনি জানান, গত বছর ৩০ হাজার টাকা জমা হয়েছিল এবং তারা ২০ হাজার টাকা ব্যয় করেছিলেন দরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিতে।

“এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী দুই টাকার ব্যাংকের সহায়তা পেয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ঠেকানোও সম্ভব হচ্ছে,” দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন তিনি।


রতন কুমার রায় বলেন “গত কয়েক বছরে ঝরে পড়ার হার খুব বেড়ে গিয়েছিল। এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পরিবারই নিম্ন আয়ের। এসব পরিবারের পক্ষে শিক্ষার ব্যয়ভার নেওয়া অনেক সময়ই সম্ভব হয় না”।

তিনি জানান, সারদেশ্বরী থেকে ২০১৬ সালে ৬১ জন, ২০১৭ সালে ৬৫ জন, ২০১৮ সালে ৫৩ শিক্ষার্থী পড়াশোনায় অনিয়মিত হয়ে গেলেও ২০১৯ সালে তা ৮০ ভাগ কমে ১৫ জনে নেমে এসেছে।

১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে বর্তমানে তৃতীয় থেকে সপ্তম পর্যন্ত প্রতি শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন ২৫০ টাকা এবং বাকি ক্লাসগুলোতে ২৪০ টাকা।

নুর ইসলাম দিনাজপুর শহরে চায়ের দোকান চালিয়ে সংসারের খরচ চালান। তার মেয়ে সারদেশ্বরী স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। তিনি বলেন, “মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো আমার জন্য বেশ কষ্টকর। ব্যাংক চালু হওয়ায় এখন চাপ কিছুটা কমেছে”।

স্কুলের শিক্ষার্থীরা নানা রকমের হস্তশিল্পের কাজ করে। সেগুলো বিক্রি করে টাকা জমানো হয় ‘দুই টাকার ব্যাংকে’। এসব হস্তশিল্প বিক্রির জন্য সম্প্রতি স্কুলের মাঠে একটি দোকান খুলেছে কর্তৃপক্ষ। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হস্তশিল্প ও রান্নার উপর বিশেষ ক্লাস নেওয়ারও ব্যবস্থা হয়েছে।

স্কুলের শিক্ষক আফসানা আক্তার জানান, “এই ক্লাসে, প্লাস্টিকের বোতলের মতো ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র ব্যবহার করে ঘর সাজানোর জন্য বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা শেখানো হয়।”

“গত বছর ঘর সাজানোর ৬০টি পণ্য তৈরি করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা”, বলেন তিনি।

এ বছর আরও বেশি শিক্ষার্থীকে সহায়তার আশার কথা জানিয়ে আফসানা বলেন, “এগুলো বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে তা দুই টাকার ব্যাংকে জমা করা হবে।”


Source: https://www.thedailystar.net/bangla/%E0%A6%B6%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7-%E0%A6%96%E0%A6%AC%E0%A6%B0/%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%87-%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF-130258