ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত
ব্যবসায়িক স্বর্ণ অর্থাৎ যে স্বর্ণ ব্যবসার উদ্দেশ্যে গচ্ছিত রাখা হয়েছে সে স্বর্ণের যাকাত ফরয এবং হারাম কাজে ব্যবহৃত স্বর্ণ যেমন পুরুষের ব্যবহৃত স্বর্ণ এবং কোন প্রাণীর আকৃতিতে বানানো নারীর অলংকার যা ব্যবহার করা হারাম, এরূপ ব্যবহৃত স্বর্ণেরও যাকাত ফরয। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। কারণ স্বর্ণের এরূপ ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়।
পক্ষান্তরে বৈধ পন্থায় নারীর ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত ফরয কি-না? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে ছহীহ মত হল, নারীর ব্যবহৃত অলংকারে যাকাত ফরয। নারীর ব্যবহারিক অলংকারের যাকাত সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ أَنَّ امْرَأَةً أَتَتْ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَعَهَا ابْنَةٌ لَهَا وَفِيْ يَدِ ابْنَتِهَا مَسَكَتَانِ غَلِيْظَتَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ لَهَا أَتُعْطِيْنَ زَكَاةَ هَذَا قَالَتْ لاَ قَالَ أَيَسُرُّكِ أَنْ يُسَوِّرَكِ اللهُ بِهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ نَارٍ قَالَ فَخَلَعَتْهُمَا فَأَلْقَتْهُمَا إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَقَالَتْ هُمَا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُوْلِهِ-
আমর ইবনু শু‘আইব (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক মহিলা তার কন্যাসহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে আসলেন। তার কন্যার হাতে মোটা দু’টি স্বর্ণের বালা ছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? মহিলাটি বললেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কি পসন্দ কর যে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের বালা পরিধান করান? রাবী বলেন, একথা শুনে মেয়েটি তার হাত থেকে তা খুলে নবী (ছাঃ)-এর সামনে রেখে দিয়ে বলল, এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য।[1]
অন্য হাদীছে বর্ণিত আছে, মা আয়েশা (রাঃ) বলেন,
دَخَلَ عَلَىَّ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَرَأَى فِيْ يَدِيْ فَتَخَاتٍ مِنْ وَرِقٍ فَقَالَ مَا هَذَا يَا عَائِشَةُ فَقُلْتُ صَنَعْتُهُنَّ أَتَزَيَّنُ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ أَتُؤَدِّيْنَ زَكَاتَهُنَّ قُلْتُ لاَ أَوْ مَا شَاءَ اللهُ قَالَ هُوَ حَسْبُكِ مِنَ النَّارِ-
‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার হাতে রূপার বড় বড় আংটি দেখতে পান এবং বলেন, হে আয়েশা! এটা কি? আমি বললাম, হে রাসূল (ছাঃ)! আপনার উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য তা তৈরী করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? আমি বললাম, না অথবা আল্লাহর যা ইচ্ছা ছিল। তিনি বললেন, তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।[2] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيْدَ قَالَتْ دَخَلْتُ أَنَا وَخَالَتِيْ عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَعَلَيْهَا أَسْوِرَةٌ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ لَنَا أَتُعْطِيَانِ زَكَاتَهُ قَالَتْ فَقُلْنَا لاَ قَالَ أَمَا تَخَافَانِ أَنْ يُسَوِّرَكُمَا اللهُ أَسْوِرَةً مِنْ نَارٍ أَدِّيَا زَكَاتَهُ-
আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার খালা হাতে স্বর্ণের বালা পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দরবারে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে বললেন, তোমরা এর যাকাত দাও কি? তিনি বলেন, তখন আমরা বললাম, না। তখন তিনি (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা কি ভয় কর না যে, এর পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা আগুনের বালা পরিধান করাবেন। সুতরাং তোমরা যাকাত আদায় কর’।[3]
ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন,
سَأَلَتْهُ امْرَأَةٌ عَنْ حُلِيٍّ لَهَا أَفِيْهِ زَكَاةٌ؟ قَالَ إِذَا بَلَغَ مِائَتَيْ دِرْهَمٍ فَزَكِّيْهِ، قَالَتْ إِنَّ فِيْ حِجْرِيْ أَيْتَامًا فَأَدْفُعُهُ إِلَيْهِمْ؟ قَالَ نَعَمْ-
‘এক মহিলা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন যে, অলংকারের যাকাত দিতে হবে কি? তিনি বললেন, যদি তা দুইশত দিরহামে পৌঁছে, তাহলে তার যাকাত আদায় করবে। মহিলাটি বললেন, আমার ঘরে কতিপয় ইয়াতীম রয়েছে, তাদেরকে কি (যাকাত) প্রদান করতে পারব? তিনি বললেন, হ্যাঁ’।[4]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, لاَ بَأْسَ بِلُبْسِ الْحُلِيِّ إِذَا أَعْطَى زَكَاتَهُ ‘অলংকার পরিধানে কোন সমস্যা নেই, যদি তার যাকাত দেওয়া হয়’।[5]
উপরোল্লিখিত হাদীছ ও আছার সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নারীর ব্যবহৃত অলংকার নিছাব পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে।
Source:
https://www.hadithbd.com/showqa.php?pageNum_RsQA=4&btype=3&b=23&s=278