কীভাবে গবেষণা পত্র বা রিসার্চ পেপার পড়বেন - How to read a research paper (quickl

Author Topic: কীভাবে গবেষণা পত্র বা রিসার্চ পেপার পড়বেন - How to read a research paper (quickl  (Read 1210 times)

Offline Fahmida Afrin

  • Newbie
  • *
  • Posts: 20
  • Test
    • View Profile
    • Fahmida Afrin
শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জীবনের একটি নিত্যদিনের ব্যাপার হলো রিসার্চ পেপার পড়া। জার্নাল বা কনফারেন্সে প্রকাশিত ১০-২০ পৃষ্ঠার একটি গবেষণাপত্র পড়ে তাতে প্রকাশ করা গবেষণার ব্যাপারে জানা যায়। কোনো বিষয়ে ভালো করে জানতে গেলে আসলে সেই বিষয়ের উপরে শ খানেক রিসার্চ পেপার পড়া লাগে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই রিসার্চ পেপার পড়বেন কী করে? সবার হাতে তো অঢেল সময় নাই, আর যদি মাত্র ১/২ দিনেই পড়তে হয় গোটা পাঁচেক পেপার, তাহলে কীভাবে দ্রুত পড়বেন সেটা? আজকের লেখার বিষয় এটাই।

রিসার্চ পেপার দ্রুত পড়ার কিছু টেকনিক বা কায়দা আছে। শুরুতেই বুঝতে হবে, রিসার্চ পেপার কিন্তু গল্প উপন্যাস না যে আপনাকে সেটা শুরু থেকে লাইন বাই লাইন পড়তে হবে। বরং একটি রিসার্চ পেপার পড়ে তা বুঝতে হলে কয়েকবারে অল্প করে করে সেটা পড়তে হবে। আমি আমার ছাত্রদেরকে শুরুতেই এই কায়দাটা শিখাই। ধাপগুলা হলো এরকম -

১ম ধাপ - পেপারের শিরোনাম, লেখকদের নাম ও পরিচয় পড়ে ফেলেন। পড়তে ১৫ সেকেন্ডের বেশি লাগার কথা না। শিরোনাম থেকে কিছুটা ধারণা পাবেন পেপারটি কী নিয়ে সেই ব্যাপারে।

২য় ধাপ - এবারের পেপারের সারাংশ বা abstract পড়ে ফেলুন। সাধারণত এই অংশটি আকারে ১ প্যারাগ্রাফ (৫/৬ বাক্য) হয়ে থাকে। সেটা দরকার হলে দুইবারে পড়ুন। দুই দুগুণে ৪ মিনিট লাগবে বড়জোর। এটা পড়লে পেপারে কোন সমস্যা নিয়ে কাজ করা হয়েছে এবং কী নতুন কাজ করা হয়েছে/ফলাফল বা এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্ট এসেছে, তার উপরে ধারণা পাবেন।

৩য় ধাপ - এবারে চট করে পেপারের ভূমিকা (Introduction) ও উপসংহার (Conclusion) পড়ে ফেলেন। ভূমিকাতে মূল ব্যাপারগুলা, সমস্যাটা কী রকম এবং এই গবেষকেরা কী নিয়ে কাজ করেছেন কীভাবে, তার উপরে আরো অনেক খুঁটিনাটি তথ্য থাকবে। আর উপসংহারে থাকবে লেখকেরা কী কাজ করেছেন, তার কথা। দুইটাই পড়ে ফেলে মূল ব্যাপারগুলা নোট করে রাখুন। সময় লাগবে ২০ মিনিট - আধা ঘণ্টার মতো।

৪র্থ ধাপ - এই ধাপে আপনার কাজ হবে পেপারের ভিতরে মন দিয়ে পড়া। ব্যাকগ্রাউন্ড সেকশন থাকলে সেখান দিয়ে শুরু করতে পারেন। রিলেটেড ওয়ার্ক বা রিসার্চ থাকলে সেটাও পড়ে নিতে পারেন। তার পরে পড়বেন পেপারের সিস্টেম বা থিওরেটিকাল মডেল অথবা আর্কিটেকচার অংশ, এবং সবার শেষে খুব মনোযোগ দিয়ে এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্টস অংশ। এই ধাপটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২য় বা ৩য় ধাপে পেপারের মূল ক্লেইম বা দাবি সম্পর্কে যা পড়েছেন, এখানে সেগুলা যাচাই করতে পারবেন। পেপারে যা লেখা হয়েছে শুরুতে, তা মোটেও বিশ্বাস করেন না এরকম মানসিকতা নিয়ে পড়বেন। লেখকদের কাজই হচ্ছে থিওরেটিকাল প্রুফ বা এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্ট দিয়ে তাদের দাবিগুলাকে প্রমাণ করা, কাজেই সেটা তারা করতে পেরেছে কিনা তা যাচাই করে দেখুন। এই কাজটা করতে সময় লাগবে কয়েক ঘণ্টা।

ব্যাস, এই ৪টি ধাপে আস্তে আস্তে পড়ে ফেলতে পারেন যেকোনো পেপার। কিন্তু পেপার পড়াই কি যথেষ্ট? মোটেও না। বরং পেপার পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে তার একটা রিভিউ লিখে ফেলতে হবে। আমি আমার ছাত্রদের যে ফরম্যাটে রিভিউ লেখা শিখাই তা হলো এরকম - ১ পৃষ্ঠার রিভিউ - (১) এক প্যারাগ্রাফে ৬/৭ বাক্যে পেপারের সারাংশ বা summary (২) পেপারের ৩ বা ততোধিক শক্তিশালি দিক বা strong point (৩) পেপারের ৩ বা ততোধিক দুর্বল দিক, এবং (৪) পেপার সম্পর্কে আপনার ৩ বা ততোধিক মন্তব্য, এখানে আলোচনা করতে পারেন অন্য কীভাবে কাজটা করা যেতো বলে আপনার মনে হয়। এই রিভিউ লিখে কিন্তু ফেলে দিবেন না, বরং গুগল ডক বা অন্যত্র সেভ করে রাখবেন। মাস দুই বা বছর খানেক পরে যদি পেপারটাতে কী আছে তা হঠাত মনে করার দরকার হয়, তাহলে পুরা পেপারটা আর পড়া লাগবেনা, আপনার ঐ রিভিউটা পড়লেই চলবে।

---

উপরের এই ধাপগুলা অনুসরণ করে পেপার পড়ুন, খুব সময় লাগবেনা, আর কাজটাকে এতো কঠিনও মনে হবেনা। ভালো গবেষক হতে হলে নিয়মিত এভাবে রিসার্চ পেপার পড়া অভ্যাস করুন, যত পড়বেন তত শিখবেন। আর হবেন ভালো গবেষক।

[ রাগিব হাসান ২০১৪-০২-২৩]

#গবেষণা #রিসার্চ