ভিটামিন-সির অভাবে শিশুর স্কার্ভি

Author Topic: ভিটামিন-সির অভাবে শিশুর স্কার্ভি  (Read 2017 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
ডা· মো· মুজিবুর রহমান মামুন
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালটেন্ট
নিবেদিতা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা

রাফার (কাল্পনিক নাম) বয়স দুই বছর। দাঁতের মাঢ়ি দিয়ে রক্ত পড়ে, মাঢ়িতে ঘা হয়, শরীর দুর্বল, চামড়ার নিচেও রক্তক্ষরণ হয়, দিন দিন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এক্স-রেতে হাড়ের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেল রাফার স্কার্ভি বা শরীরে ভিটামিন-সির অভাব। শিশুদের স্কার্ভি সাধারণত ছয় থেকে ২৪ মাসের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যেকোনো বয়সেই হতে পারে। নবজাতকের হয় খুবই কম।

কী হয়
– শিশুরা সাধারণত দুর্বল হয়ে পড়বে। কোনো কিছু ভালো লাগবে না।
– সব সময় অস্থির ভাব থাকবে এবং একটুতেই রেগে যাবে।
– খাওয়ায় অনীহা থাকবে, ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেবে।
– হজমে সমস্যা দেখা দেবে এবং প্রায়ই পাতলা পায়খানা হবে।
– হাত-পা ব্যথা করবে।
– বুকের হাড়ের কসটোকন্ড্রাল জাঙ্কশন বৃদ্ধি পাবে এবং বুকের মাঝের হাড় ‘স্টারনাম’ ভেতরের দিকে বসে যাবে। অর্থাৎ বুকের খাঁচার পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে। অনেক সময় বড় হাড়ের মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়। ফলে সেই হাড়ে অর্থাৎ হাতে বা পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হবে। এমনকি নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাবে। মনে হবে সেই স্থান অবশ বা প্যারালাইসিস হয়ে গেছে। চামড়ার নিচে দাঁতের মাঢ়িতে রক্তক্ষরণ হবে। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাবে, এমনকি পায়খানার সঙ্গেও রক্ত যাবে। মল কালো হবে।

কী কী পরীক্ষা করাতে হবে
স্কার্ভি রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রথমেই এক্স-রে করাতে হবে হাত ও পায়ের বড় হাড়গুলোর। এখানে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে।

হাঁটুর এক্স-রে করলেঃ
– হাড়ে ‘গ্রাউন্ড গ্লাস’-এর মতো মনে হবে।
– হাড়ের করটেক্স ছোট হয়ে ‘পেনসিল পয়েন্ট থিননেস’ হবে।
– হাড়ের মেটাফাইসিসের পরিবর্তন হবে। এই অংশে কার্টিলেজ বা মজ্জায় ক্যালসিয়াম জমা হয়ে সাদা দাগের সৃষ্টি করবে।
– কর্নার সাইন পজিটিভ হবে।
– ইপিফাইসিয়াল রিং থাকবে।
– হাড়ের ওপরের অংশ পেরিওস্টিয়াম ও নরম টিস্যুগুলো ফুলে যাবে।

চিকিৎসা
– রোগ নির্ণয় করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করালে শিশু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে এবং এটা খুব সহজ উপায়।
– মুখে ভিটামিন-সি অ্যাসকর্বিক এসিড ২০০ মিলিগ্রাম প্রতিদিন খাবে। প্রতিদিন তিন থেকে চার আউন্স কমলা বা টমেটোর জুস খেলে প্রতিকার পাওয়া যাবে।
– সুস্থ হওয়ার পর শিশুকে ভিটামিন-সি প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম ওষুধ হিসেবে অথবা খাওয়ার সঙ্গে দিতে হবে। অর্থাৎ যেসব খাবারে ভিটামিন-সি বেশি পরিমাণে থাকে, যেমন টমেটো, কমলা, মালটা, আমলকী, সবুজ সবজি-এগুলো প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।

প্রতিরোধ করবেন কীভাবে
– ভিটামিন-সির অভাবে স্কার্ভি হয়। অথচ এ রোগ প্রতিরোধ করা খুবই সহজ। যেসব খাবারে ভিটামিন-সি আছে সেগুলো খেতে হবে। ফল খেতে হবে। পেয়ারা, তেঁতুল, লেবু, আমলকী, কামরাঙা, টমেটো প্রভৃতি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি আছে। সবুজ শাকসবজিতেও ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। ছোটবেলা থেকে শিশুদের এসব খাবারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। খিচুড়ির মধ্যেও শাকসবজি দিতে হবে।
– যেসব শিশু বুকের দুধ খায় না, বাইরের টিনজাত বা ফর্মুলাযুক্ত দুধ খায়, তাদের ৩৫ মিলিগ্রাম অ্যাসকর্বিক এসিড বা ভিটামিন-সি প্রতিদিন একবার দিতে হবে।
– গরুর দুধে কম পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে। কিন্তু দুধ ফোটানোর কারণে ভিটামিন-সি নষ্ট হয়ে যায়।
– সব মায়েরই উচিত শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো। তাই পরিবারের সবারই কর্তব্য বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়েদের উদ্বুদ্ধ করা।
– মায়েদের প্রতিদিন ১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি খাওয়াতে হবে।

ফলাফল
সঠিক সময় রোগ নির্ণয় করা গেলে এবং সুচিকিৎসা দিলে অতি দ্রুত এ রোগ সারানো সম্ভব। হাড়ের ভেতর রক্তক্ষরণ হলে এটা সারতে কয়েক মাস লাগতে পারে। ফোলাটাও কমে যাবে। খুব অল্পসংখ্যক রোগীর ফল খারাপ হতে পারে। এসব শিশু হঠাৎ কার্ডিয়াক ফেইলিওর বা হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সুতরাং অবহেলা না করে সোনামণিদের যথাসময়ে সুচিকিৎসা করাবেন।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৯, ২০০৮