করোনা সংক্রমিত বিশ্ব ও আমাদের শিক্ষা :

Author Topic: করোনা সংক্রমিত বিশ্ব ও আমাদের শিক্ষা :  (Read 733 times)

Offline Md. Siddiqul Alam (Reza)

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 253
    • View Profile
বছরের শুরুতে চীনের উহান থেকে যাত্রা শুরু করে আড়াই মাসে বিশ্বের প্রায় সব দেশে পৌঁছে গেছে নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড–১৯। ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত, মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে ভয়াবহ এই স্বাস্থ্যসংকটে দিশাহারা পৃথিবী। মৃতের সংখ্যায় চীন ছিল শীর্ষে, তবে অনেক ছোট লোকসংখ্যা নিয়ে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত দেশ ইতালি। আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হারও ইতালিতে অনেক বেশি। প্রায় একই অবস্থা স্পেনের। করোনার ভরকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এখন ইউরোপ।

এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে চীন। সেখানে গতকাল স্থানীয় কেউ নতুনভাবে আক্রান্ত হয়নি। সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানও বেশ সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে। সে তুলনায় এতে ইউরোপ এখনো অনেকটাই ব্যর্থ। বিশেষ করে ইতালি ও স্পেনে নতুন সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এখনো। ইউরোপের বাইরে খুব খারাপ অবস্থা ইরানের। যুক্তরাষ্ট্রেরও সব রাজ্যে পৌঁছে গেছে করোনা, আক্রান্ত প্রায় ২৭ হাজার, মৃত ৩৪৮। বাংলাদেশে আমরা অনেকটা অজ্ঞতার মধ্যে বাস করছি। প্রথমে ৩ জন, পরে আরও ২ জন, গতকাল পর্যন্ত ২৪ জন আক্রান্তের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। অনেকের বিশ্বাস, সংখ্যাটা এর চেয়ে বেশি। মৃত্যু হয়েছে একজনের। ভারতে আক্রান্ত ১৯৭, মারা গেছে ৪ জন।


করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে সংস্পর্শের মাধ্যমে। আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের সংস্পর্শ এড়ানোই তাই নতুন সংক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র উপায়। সংক্রমণ থামাতে বা অন্তত কমাতে আক্রান্ত এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা খুবই কার্যকর। চীনের সাফল্যের মূলে এই পদ্ধতি। সিঙ্গাপুর এগিয়ে গেছে আরও এক ধাপ। সংক্রমণের উৎস তারা খুঁজে বের করেছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কারা সংস্পর্শে এসেছে, তাদেরও তালিকাভুক্ত করে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। সিঙ্গাপুরে ৩৪৫ করোনা রোগীর কেউ মারা যায়নি এযাবৎ।

বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও বিষয়টিকে প্রথমে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি পশ্চিম। এটাকে তারা প্রাচ্যের সমস্যা বলে মনে করে নির্ভার ছিল। ব্যবস্থা গ্রহণে এই দেরির মূল্য তারা দিচ্ছে এখন। তবে এখন তারা শক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে সংক্রমণ ঠেকাতে। ইউরোপের সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ তো প্রায় বন্ধই, এমনকি ইউরোপের মধ্যেও এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞাও পালিত হচ্ছে বেশ কড়াকড়িভাবে। একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং আর অনেক দেশ। স্কুল–কলেজ বন্ধ, অফিস–আদালতের কাজ অনেকটাই হচ্ছে বাসায় বসে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া নিষেধ। লোকসমাগম হয়, এমন সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা সে খেলাধুলাই হোক আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানই হোক। এর মধ্যে জার্মান ও মার্কিন বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের টিকা উদ্ভাবন করেছেন। প্রয়োজনীয় নিরীক্ষান্তে কয়েক মাসের মধ্যে এই টিকা প্রচলন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবু সংক্রমণের এ স্রোত উল্টোমুখী করতে আরও আট সপ্তাহ লাগবে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের।

বছরের শুরু বা এরও আগে থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের একনিষ্ঠ মনোযোগের বিষয় ছিল ১৭ মার্চ ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় এ উপলক্ষে পরিকল্পিত মহাসমাবেশটিকে বাদ দেওয়া হয়, যা ছিল এ উদ্‌যাপনের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি ছাড়া, পূর্ববর্তী দুই মাসে এই মহামারি প্রতিরোধে বাংলাদেশ তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং ছিল নামমাত্র ও অকার্যকর। বেশির ভাগ থার্মাল স্ক্যানার ছিল অনেক দিন ধরে অচল। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যাঁরা আসছিলেন, তাঁদের মনিটর করার কোনো ব্যবস্থাই প্রায় ছিল না। স্কুল–কলেজ বন্ধ হয়েছে ১৮ মার্চ থেকে, এটা আরও আগে থেকেই হতে পারত। ১৫ মার্চ থেকে যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপ থেকে যাত্রীদের বাংলাদেশে আসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আস্থার সঙ্গে বলছিলেন প্রতিরোধের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে, যদিও সে প্রস্তুতির স্বরূপ সাধারণ্যে দৃশ্যমান হচ্ছিল না।

ইতিমধ্যে পত্রিকায় বেরিয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোয় সাকল্যে কোভিড–১৯ শনাক্তকরণ কিট আছে মোট ১ হাজার ৭০০। দেশের ১ শতাংশ মানুষের যদি পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় তাহলে কিট লাগবে ১৭ লাখ! যে জেলায় ইতালিফেরত প্রবাসী গেছেন, দুই হাজারের বেশি, সেখানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৩৫ জন, বাকিদের কোনো হদিস নেই প্রশাসনের কাছে! বৃহস্পতিবার দেখলাম তথ্যমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সে পদক্ষেপগুলো কী, আর নিয়ন্ত্রণ বলতেই বা কী বোঝায়, তা ব্যাখ্যা করে বললে আমরা উপকৃত হতাম। এর মধ্যে আছে আবার ধর্মগুরুদের উপদ্রব। ভারতে করোনা নিয়ন্ত্রণে গোমূত্র সেবন চলছে। পত্রিকায় দেখলাম চরমোনাইয়ের পীর বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত অজু করে নামাজ আদায় করলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবে না। তিনি কী করে নিশ্চিত হলেন যে যেসব মুসলমান আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা কেউ পাঁচ ওয়াক্ত অজু করে নামাজ আদায় করেন না?

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তির পর সরকারি প্রশাসন মনে হচ্ছে জোরেশোরে কাজে নামছে। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সব অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র স্বল্পমূল্যের কোভিড–১৯ শনাক্তকরণ কিট উদ্ভাবনের পথে এগিয়েছে। এ কাজে চটজলদি প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট আমদানির অনুমতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন। রাজধানীর চারটি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হয়েছে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য। কোয়ারেন্টিন সুবিধা তৈরির এবং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। সৌদি আরব, আমিরাত, কাতারে মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, নামাজ পড়তে বলা হয়েছে নিজ বাসগৃহে। একই পদক্ষেপ আমাদের দেশেও নেওয়া প্রয়োজন। ২ দিন আগে লক্ষ্মীপুরে ৫০ হাজার মুসল্লির এক সমাবেশে (মতান্তরে এক লাখ) করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়। এ ধরনের সমাবেশ করতে প্রশাসনের অনুমতি লাগে। এ সময়ে এই সমাবেশের অনুমতি কীভাবে দেওয়া হলো, ভেবে অবাক হই। ২৮ ফেব্রুয়ারি তাবলিগ জামাতের এক অনুষ্ঠান হয় কুয়ালালামপুরে, যাতে ১৫ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এই জমায়েতে অংশগ্রহণকারীরা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় করোনার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া সংকট উত্তরণের প্রথম পদক্ষেপ।

দেশের চিকিৎসক সম্প্রদায় সোচ্চার হয়েছেন তাঁদের সুরক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থার দাবি নিয়ে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আক্রান্ত রোগীকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলবেন ডাক্তার, নার্সরাই, পীর বা পুরোহিতরা নন। আমাদের স্বার্থেই তাঁদের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে অবিলম্বে। আর দেখা দরকার, করোনার কারণে ডেঙ্গুর বিষয়টা যেন আমরা ভুলে না যাই।

করোনার প্রকোপে গভীর সংকটে বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। তেলের দাম নেমে এসেছে ৩০ ডলারে, স্টক মার্কেটগুলোর অবস্থা শোচনীয়। তছনছ হয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন। এমন একটি বিশ্বব্যাপী মহামারিতে অর্থনীতি সংকটে পড়বে, এটা প্রত্যাশিতই। কিন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো স্পষ্ট হয়েছে সাপ্লাই চেইনের মাত্রাতিরিক্ত চীননির্ভরতা। বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কাপড় আসে চীন থেকে। ৪০ বছরের পোশাকশিল্প এই নির্ভরতা কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ভারতের ওষুধশিল্প, যার ওপর বিশ্বের ওষুধ বাজার অনেকটা নির্ভরশীল, তারও কাঁচামাল আসে চীন থেকে। করোনা সংকট থেকে এ ক্ষেত্রে যদি একটি শিক্ষণীয় বিষয় থাকে, তা হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিকে অবশ্যই এই পরিপূর্ণ চীন–নির্ভরতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, গড়ে তুলতে হবে চীনের পাশাপাশি বিকল্প উৎস। বাংলাদেশ কি প্রস্তুত এই সুযোগের অন্তত খানিকটা ব্যবহার করতে?

মো. তৌহিদ হোসেন: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব

https://www.prothomalo.com/opinion/article/
MD. SIDDIQUL ALAM (REZA)
Senior Assistant Director
(Counseling & Admission)
Employee ID: 710000295
Daffodil International University
Cell: 01713493050, 48111639, 9128705 Ext-555
Email: counselor@daffodilvarsity.edu.bd