করোনা থেকে ভবিষ্যতের শিক্ষা

Author Topic: করোনা থেকে ভবিষ্যতের শিক্ষা  (Read 709 times)

Offline Shamim Ansary

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 3735
  • Change Yourself, the whole will be changed
    • View Profile
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সবাই জানেন। এটি কিন্তু বিশ্ববাসীকে নানামুখী শিক্ষা দিচ্ছে! ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে মানবজাতিকে সুন্দরভাবে টিকে থাকতে হলে এ মহামারি থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষাগুলো নিতেই হবে, তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু ভাবনা তুলে ধরা হলো—

রাজনৈতিক
বিজ্ঞানমনস্ক এবং মেধাবী নেতৃত্ব ছাড়া কোনো দেশ ভবিষ্যতে টিকে থাকতে পারবে না। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে কোনো দেশ বা জাতির সারভাইভ করার ক্ষেত্রে। ভবিষ্যতে প্রতিটি দেশের নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে হবে মেধাবীদের মধ্য থেকে যারা যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম, তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞানসমৃদ্ধ এবং দূরদর্শী চিন্তাভাবনার। হয়তো এ প্রক্রিয়াই বর্তমানের জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রকে ‘গণতান্ত্রিক মেধাবীদের শাসন বা মেধাতন্ত্র’ হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারে কোনো এক সময়! যা হোক, এটি নিশ্চিত, বিশ্বের অনেক দেশের জনগণ এটি বুঝতে শুরু করেছে, ভবিষ্যতে বিজ্ঞানমনস্ক মেধাবী নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই।

অর্থনৈতিক
প্রতিটি দেশকে নিজস্বভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতেই হবে। কোভিড-১৯ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পরে এটি প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়, শক্তিশালী অর্থনীতি ছাড়া এ দুর্যোগ মোকাবিলা করা অসম্ভব। বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভবিষ্যতে পৃথিবীর বুকে তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে অবশ্যই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এসব দেশের জনগণের সামনে ভীষণ বড় চ্যালেঞ্জ নিজস্ব উপায়ে তাদের মেধাসম্পদ ও উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করে অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করা। নির্মম করোনা এ শিক্ষাও দিয়ে যাচ্ছে হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে!

চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবায় পর্যাপ্ত সক্ষমতা অর্জন ব্যতীত ভবিষ্যতে কোনো দেশ টিকে থাকতে পারবে না! এ বিষয় নিয়ে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই বোধ হয়, কারণ সচেতন মানুষমাত্রই বুঝতে পারছেন, কী পরিমাণ নজর দেওয়া প্রয়োজন এই ক্ষেত্রে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে। কোনো দেশ খুব একটা পাশে দাঁড়াতে পারছে না অন্য দেশের জন্য। নিজের দেশের জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে। ভয়ের বিষয় হলো বিজ্ঞান বলে, ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন রোগের মুখোমুখি হতে হবে মানবজাতিকে। সুতরাং, এই খাতে প্রতিটি দেশকে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে যে করেই হোক।

ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবেপররাষ্ট্রনীতি ও বৈশ্বিক সম্পর্ক
মানুষের মাঝে নানা ধরনের বৈশ্বিক সমস্যা ভবিষ্যতেও হয়তো আরও আসবে এবং মোকাবিলাও করতে হবে। বর্তমানে দেখা যায়, মহামারি হোক বা দুর্যোগ হোক, প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক যেকোনো ধরনের বিপর্যয়ই হোক, তা কোনো নির্দিষ্ট দেশের সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, বৈশ্বিক রূপ নিয়ে নিচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে! বৈশ্বিকভাবে তা পর্যালোচনা করতে হচ্ছে। পররাষ্ট্রনীতি ও বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও করোনা থেকে যে শিক্ষাটি আমাদের নেওয়া উচিত, তা হলো যেহেতু সমস্যাগুলো এখন আর জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না, সুতরাং ভবিষ্যতে বৈশ্বিক সম্পর্কও কোনো ধরনের জাতীয়তাবাদী চিন্তানির্ভর করা যাবে না, বরং উদার মানসিকতা এবং মানবতানির্ভর করতে হবে।

বিজ্ঞান ও গবেষণা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত গবেষণার মূল লক্ষ্য হতে হবে ‘শতভাগ’ মানবজাতির কল্যাণ। বর্তমানে বেশির ভাগ দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত যেসব গবেষণা হয়, তার মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন। করোনা মহামারির এ সময়ে দেখা গেল এত গবেষণা এই ক্রান্তিকালে সরাসরি কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না! মানুষের উন্নত জীবন যাপন করতে অনেক কিছুই আবিষ্কৃত হয়েছে ঠিক, সে মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই আবিষ্কৃত হয়নি! করোনা শিক্ষা দিচ্ছে, গবেষণার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, গবেষণার লক্ষ্য কী হওয়া উচিত। ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে সারভাইভ করতে হলে গবেষণার মূল ক্ষেত্র হতে হবে মানুষের বেঁচে থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ এবং গবেষণার লক্ষ্য হতে হবে মানবজাতির কল্যাণ ও মানবজাতিকে আরও সক্ষম করে গড়ে তোলা।

পরিশেষে বলতে চাই, মানবজাতির ইতিহাস এবং অভিযোজন প্রক্রিয়ার দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে এমন নতুন নতুন রোগ বা দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে বিশ্বের জাতি ও দেশগুলো তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করেছে। করোনা থেকেও বিভিন্ন জাতি ও দেশ নানামুখী বিচার বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা নেবে। আমাদেরও এসব নিয়ে ভাবতে হবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর বুকে আমার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে। ভাবনার পরিধি হোক উন্মুক্ত আকাশের মতো।


Source: https://www.prothomalo.com/nagorik-sangbad/article/1647078/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE
"Many thanks to Allah who gave us life after having given us death and (our) final return (on the Day of Qiyaamah (Judgement)) is to Him"