দিন দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ভাইরাসটি নিয়ে ইতিমধ্যেই জনমনে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। মহামারিতে রূপ নেওয়া এই রোগে দ্রুত আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধদেরই বেশি। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন বয়স্করা।
চীন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশেষ করে যারা দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। আর বয়স্কদের মধ্যে দুর্বল প্রতিরোধক্ষমতা ও স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে সহজেই তারা এই রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কেন বৃদ্ধরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, এর সঠিক উত্তর এখনও কারও জানা নেই। হতে পারে, বয়সজনিত কারণে। আর এই সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। যার কারণে বয়স্করা রোগ বা জীবাণুর সঙ্গে লড়তে পারেন না।
তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, ৬৫ বছর বা এর ঊর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের বেলায় করোনার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই যাদের দৈহিক সমস্যা রয়েছে, তারা যেন জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলেন এবং বাড়িতেই থাকেন। বয়স্কদের সাবধানে রাখার বেশ কয়েকটি পরামর্শও দেওয়া হয়েছে-
১. ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত রাখা
প্রয়োজনীয় জিনিস ও ওষুধ আগে থেকে কিনে বাসায় রাখতে হবে। দুর্বল ও অসুস্থ বৃদ্ধদের আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সুপারিশ করেছে, বেশ কিছু সপ্তাহের ওষুধ ও অন্যান্য জিনিস বাড়িতে রাখতে। সিডিসিও তাদের নাগরিকদের বলেছে, প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা পণ্যের সরবরাহগুলো আগে থেকে মজুত করে রাখতে। আর এই বিষয়ে পরিবারের খেয়াল রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাসার বয়স্কদের দিকে একটু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিন।
২. পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
করোনাভাইরাস সচেতনতার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে, ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে আর জনসমাগম এড়িয়ে চলতে। বাড়ি ও কর্মক্ষেত্রের জায়গাও যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, তা নিশ্চিত থাকতে হবে। এমনকি ইলেকট্রনিকসের জিনিসগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
৩. কোনো জিনিস শেয়ার নয়
যৌথ পরিবারে একসঙ্গে সবাই থাকেন। তাদের এই সময়ে বা মাঝে-মধ্যে সর্দি-কাশি হয়। একেকজনের ঝুঁকি একেক ধরনের হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে পরিবারের উচিত ব্যক্তিগত সব জিনিসপত্র আলাদা ব্যবহার করা। যেমন খাবার, পানির বোতল, বাসনকোসন ইত্যাদি। প্রয়োজন হলে বাড়ির একটি আলাদা ঘরে অসুস্থ সদস্যকে রেখে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থাও করলে আরও ভালো হয়।
আবার অনেক বৃদ্ধই আছেন, যারা একা থাকেন। সে ক্ষেত্রে কীভাবে তারা নিজেদের যত্ন নেবেন, তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিতে হবে। ফোন, ই-মেইল কীভাবে ব্যবহার এবং জরুরি ফোন নম্বরগুলো হাতের কাছে রাখবেন।
৪. চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলুন
করোনা নিয়ে আতঙ্ক না বাড়িয়ে নিয়মিত চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। বাড়ির বাইরে না বেরিয়ে বাড়িতেই থাকুন। এই সময় বিভিন্ন ধরনের শরীরচর্চা করতে পারেন। এ সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খুব প্রয়োজন। সর্দি-কাশি হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫. আতঙ্ক নয়, আলোচনা করুন
অযথা আতঙ্কিত না হয়ে করোনা সম্পর্কে পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করুন। কেউ আক্রান্ত হলে আগাম প্রস্তুতি কী হবে, তা নিয়েও পরিকল্পনা করে রাখুন। ভাইরাসটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটা খুবই জরুরি। বৃদ্ধদের মনোবল বাড়াতে হবে, তাদের আশ্বস্ত করুন- এ রোগে ভয়ের কিছু নেই।
তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন