করোনাভাইরাসের অসহায় উপাখ্যান

Author Topic: করোনাভাইরাসের অসহায় উপাখ্যান  (Read 458 times)

Offline Shamim Ansary

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 3735
  • Change Yourself, the whole will be changed
    • View Profile
পুরো পৃথিবীর রাজনীতি কিংবা অর্থনীতি দুই-ই করোনায় বুঁদ। এশিয়া থেকে আফ্রিকা কিংবা উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা-সবখানেই বিশ্ববাসী চরম অস্থিরতায় দিনাতিপাত করছেন। কোভিড-১৯ এ জেরবার বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত অর্থনীতি ধারণা মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। সব দেশ সীমান্তে স্থিতাবস্থার আরোপ করেছে। দেশগুলো হয়ে পড়েছে কার্যত বিচ্ছিন্ন। অদৃশ্য এক ভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বকে নতুন করে ভাবাচ্ছে।

বেশ কয়েক দিন আগের আলোচনা ঝুঁকছিল ছিল পৃথিবীর ভবিতব্য সুপার পাওয়ার কে ঘিরে। এক করোনা এসে রাজনীতি আর অর্থনীতির গণ্ডিকে টেনে হিঁচড়ে সামনে এক অনিশ্চয়তার দেয়াল তুলে দিল।

আকাশচুম্বী উন্নয়ন দেখতে দেখতে পুরো পৃথিবী কখন যে গাছের মরা ডালের আগায় উঠে গেছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে নি অনেকেই। সব সময় খুঁজেছে লাভের প্রসঙ্গ। ফলাফল-পুরো পৃথিবীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পরিবেশ সুরক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ‘করোনা’-র প্রলয় নাচন। পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর ‘জায়ান্ট’ কিংবা আটপৌরে জনতার জীবন এখন হুমকিতে। পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিগুলো এখন পারমাণবিক অস্ত্রের লড়াইয়ের বদলে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। এ এক অদৃশ্য লড়াই।

ইউরোপ কিংবা তার ন্যাটো জোট এবার তার দৃশ্যমান শক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে না, লড়ছে অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে।

ইউরোপের ইতালি ও স্পেন ধুঁকছে চরমভাবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশ দুটো করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে উভয় দেশেই মৃতের সংখ্যা আলাদাভাবে ১০ হাজার করে ছাড়িয়েছে। মৃতের মুহুর্মুহু আর্ত চিৎকারে ইতালি এবং স্পেনের সঙ্গে পুরো ইউরোপের আকাশ বাতাস কাঁপছে।

যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট আত্মশ্লাগার জয় হয়েছে। তবে এই জয়রথকে ম্লান করে দিয়েছে করোনার আক্রমণ। এক কালের সুপার পাওয়ার করোনার কাছে নেহাত এখন ‘ভাইরাস প্রোডাকটিভ এরিয়া’ বৈ কিছু নয়। ব্রেক্সিটের নেপথ্য নায়ক খোদ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়েছেন। এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ইউরোপের অন্য দেশগুলোতেও করোনা আক্রমণ থেমে নেই। দেশগুলোতে প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শনাক্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা।

পৃথিবীর অন্যতম সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রও জেরবার করোনা ভাইরাসে। ট্রাম্প প্রশাসন করোনা মহামারি মোকাবিলায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে।

ইরানের ‘কাশেম সোলাইমানি’ শোকের ক্ষত এখনো দগদগে। তাদের জন্য করোনা'র উপর্যুপরি আঘাত হয়ে এসেছে। দেশটির বেশ কয়েকজন সাংসদ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।

যেখান থেকে ভাইরাসের আবির্ভাব সেই চীন এখন ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে ক্রমেই সেরে উঠছে। প্রথম দিকে চীনের বিরুদ্ধ শক্তিরা মনে মনে আউড়েছে যে, চীনকে এবার বাগে পেয়েছে! তবে চীন যেভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে ধীরে ধীরে উন্নতি করছে তা পুরো টালমাটাল পৃথিবীর জন্যই আশা জাগানিয়া। এ ক্ষেত্রে আরও কিছু আশা জাগানিয়া নাম হতে পারে কিউবা, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। কিউবার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে যারা খানিকটা খোঁজ রাখেন তারা জানেন দেশটি তার নাগরিকের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কীভাবে নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছে। নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর সব সময় নাগরিকদের সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর। তাদের বিশ্বমানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং কেজো আমলাতন্ত্রের মিশেল করোনার বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হার এখন ক্রমেই নিম্নমুখী। সেখানে ব্যাপক হারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে এবং দ্রুততম সময়ে আক্রান্ত নাগরিকদের আলাদা করে ফেলা হয়েছে। ফলে সে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে। জাপান করোনায় সংক্রমণ কমানোর জন্য বেশ জোরেশোরে কাজ করছে।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার সব ধরনের যানবাহন চলাচল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বড় জমায়েতের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। বাংলাদেশে এখনো সে অর্থে করোনার বিস্তার খুব বেশি ঘটেনি। তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়। রোগীর বিপরীতে চিকিৎসকের আনুপাতিক হার তার ছোট্ট একটা উদাহরণ মাত্র।

জাতিসংঘের ‘সাসটেইনয়েবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ এবার হয়তো বিশ্ব উন্নয়নকে নতুন করে ভাবাবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে যে উন্নয়ন যজ্ঞের গল্প চলে তা কতটা মেকি তা বিশ্ববাসী এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

কোন ফাঁক-ফোকর গলে জিডিপি স্তূপীকৃত হচ্ছে তা করোনা দেখিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষা, চিকিৎসা কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে যে উন্নয়ন হচ্ছে তার সামনে করোনা নতুন এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিল।

শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালা যে অন্তঃসার তা এবার অনুমেয়। সময় হয়েছে বিশ্বকে নতুন করে ভাববার। হয়তো পরবর্তী দিনগুলোতে করোনার প্রকোপ কমবে, তবে এক কঠিন পরিস্থিতি পৃথিবীর কথিত ‘উন্নয়ন’-এ পিটিয়ে সামনের দিনগুলোর জন্য আগাম বার্তা জানিয়ে রাখল।


*লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Source: https://www.prothomalo.com/nagorik-sangbad/article/1649099/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8
"Many thanks to Allah who gave us life after having given us death and (our) final return (on the Day of Qiyaamah (Judgement)) is to Him"