করোনার সঙ্গে লড়ার ৪ উপায় বাতলে দিলেন বিশেষজ্ঞ

Author Topic: করোনার সঙ্গে লড়ার ৪ উপায় বাতলে দিলেন বিশেষজ্ঞ  (Read 764 times)

Offline Md. Siddiqul Alam (Reza)

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 253
    • View Profile

করোনার সঙ্গে লড়ার ৪ উপায় বাতলে দিলেন বিশেষজ্ঞ :

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে এর মধ্যে ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। করোনাভাইরাস ঠেকানোর কৌশল নিয়ে কাজ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথের চেয়ারম্যান অধ্যাপক দেবী শ্রীধর করোনাভাইরাস সমস্যা মোকাবিলায় চারটি উপায়ের কথা বলেছেন।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক সহযোগিতা, একযোগে লকডাউন ও যোগাযোগ শনাক্ত করার প্রক্রিয়া ও চিকিৎসা। এ পদ্ধতিগুলো যথাযথ প্রয়োগ করা গেলে তা মহামারি ঠেকানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলেই মনে করছেন দেবী শ্রীধর। দ্য গার্ডিয়ান–এ লেখা এক মতামতে ওই বিশেষ চারটি পদ্ধতি তুলে ধরেছেন তিনি।


দেবী শ্রীধরের ভাষ্য, গত ডিসেম্বরে চীনের উহানে নতুন ভাইরাস হিসেবে একটি ভাইরাসের উৎপত্তির পর তা দ্রুত শনাক্ত করে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় দেশটি। ভাইরাস নির্মূলের জন্য অভূতপূর্ব অভিযান চালানোর পাশাপাশি দেশ থেকে যাতে কেউ বের হতে না পারে, এর চেষ্টা চালায়। দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং ও সিঙ্গাপুর তাদের দেশেও ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিল।

Lifebuoy Soap
এ দেশগুলোতে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সংক্রমিত ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বের করা, তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে পৃথক করে ফেলার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এতে দেখা যায় পরীক্ষা, শনাক্ত ও পৃথককরণ—এ তিনটি কৌশল ঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যায়। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন হয়ে দেখা দেয়।

সার্স-কোভ-২ নামের নভেল করোনাভাইরাসটি চীন সরকারের জনস্বাস্থ্য হস্তক্ষেপ রক্ষাকৌশল থেকে বেরিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক দেশের সরকার প্রাথমিক ব্যবস্থা নিতে বিভ্রান্ত হওয়ায় ভাইরাসটি কমিউনিটি পর্যায়ে নীরবে ছড়িয় গেছে। অনেকে এতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছেন।

এডিনবরা ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞের মতে, ভাইরাসটি লক্ষণীয়ভাবে বিপজ্জনক। এটি ঠান্ডা বা ফ্লুর মতো সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি যেসব ব্যক্তির মধ্যেও কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ নেই, তার মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে।

সর্বশেষ তথ্য থেকে দেখা যায়, সংক্রমিত প্রায় ৫ শতাংশ লোককে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে আবার ৩০ শতাংশকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে হয়। এ ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর হার ০.৬ থেকে ১.৪ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের শিকার ব্যক্তির সংখ্যা ১০ লাখের বেশি পার হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখের বেশি আক্রান্ত ও ১৩ হাজারের বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হিসাবে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনে ৮২ হাজারের মতো সংক্রমণ ও তিন হাজারের মতো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশ্বজুড়ে মোট সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি ঘটেছে ইউরোপে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে অবশ্য সংক্রমণের ঘটনা কিছুটা কম। তবে সেনেগাল, লাইবেরিয়া ও নাইজেরিয়ার মতো দেশ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগ্রাসী প্রস্তুতি দেখিয়েছে। কারণ, তাদের এ ধরনের ভাইরাস মোকাবিলায় সম্পদ ও পরীক্ষার সামর্থ্য কম। অন্যদিকে ব্রাজিল, ভারত ও মেক্সিকোর মতো দেশ কী ঘটবে, তা অস্বীকার করে।

দেবী শ্রীধর তাঁর মতামতে লিখেছেন, এখন পর্যন্ত আমরা জানি না যে এ ভাইরাসে কী পরিমাণ জনসংখ্যা ইতিমধ্যে উন্মুক্ত হয়ে গেছে। নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষা ছাড়া কারও মধ্যে ভাইরাস রয়েছে কি না বা কেউ প্রতিরোধক্ষমতা অর্জন করেছেন কি না, তা জানা সম্ভব নয়। কোনো উপসর্গ দেখানো ছাড়াই কতজন এ ভাইরাস বহন করছে, তা–ও পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া শিশুদের সংক্রমণের ভূমিকা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।

করোনা প্রতিরোধ নিয়ে শ্রীধরের ভাষ্য, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে গৃহীত মডেল ও বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চারটি সম্ভাব্য প্রতিরোধের বিষয়টি সামনে তুলে আনা যেতে পারে। প্রথমটি হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের সরকারকে একত্রে এ ভাইরাস নির্মূলের একটি পরিকল্পনা নিয়ে একযোগে পরিকল্পনা করতে হবে। দ্রুত ও সাশ্রয়ী চিকিৎসার মাধ্যমে এটি দূর করার পরিকল্পনা করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সব দেশ তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিতে রাজি হওয়ার পাশাপাশি ভাইরাস বাহকদের শনাক্তে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়ে সংক্রমণ রোধ করতে হবে। রোগের একাধিক তরঙ্গ যাতে আঘাত না করে, সে জন্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের উদাহরণ টানা যায়। দেশটি তাদের সীমান্ত বন্ধ করে লকডাউন দিয়েছে। এরপর কমিউনিটি পর্যায়ে পরীক্ষা করে ভাইরাস নির্মূলের চেষ্টা করছে।

দ্বিতীয় পদ্ধতি হতে পারে ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টিকে দেরি করিয়ে দেওয়া। যেহেতু বিশ্বজুড়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে এবং কিছুদিন পরেই হয়তো তা পাওয়া যাবে। সে পর্যন্ত ভাইরাসের বিস্তার যতটা সম্ভব সীমিত রাখতে হবে। ইতিমধ্যে অনেক ভ্যাকসিন আশা দেখাচ্ছে। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হয়তো ভ্যাকসিন চলে আসতে পারে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে লকডাউনসহ চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিন সপ্তাহ আগ থেকেই যথেষ্ট বেড, ভেন্টিলেটর ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুত রাখতে হবে। এসব ব্যবস্থার ভিত্তিতে সরকার কোয়ারেন্টিন–ব্যবস্থা শিথিল করবে নাকি বাড়াবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। লকডাউন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মূল্য অনেক বেশি দিতে হবে। বারবার লকডাউন দিয়ে বেকারত্ব বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি ও সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে। দরিদ্র দেশগুলোতে অপুষ্টি, সুপেয় পানির অভাবে সৃষ্ট রোগে অনেকে মারা যেতে পারে।

তৃতীয় সম্ভাব্য উপায় হতে পারে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো যত বেশি সম্ভব করোনাবাহী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে পৃথক করে ফেলা। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে রাখা। এ জন্য বিশাল পরিকল্পনা, দ্রুত বাস্তবায়ন ও সংস্পর্শ শনাক্তকারী অ্যাপ প্রয়োজন। এর বাইরে হাজারো স্বেচ্ছাসেবী কাজে লাগিয়ে নমুনা সংগ্রহ, ফলপ্রক্রিয়া ও কোয়ারেন্টিন নজরদারিতে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পদক্ষেপ করে ভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে পারলে স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমের ওপর চাপ কমে।

চতুর্থ উপায় হিসেবে দ্রুত একটি কার্যকর টিকার অনুপস্থিতিতে করোনার লক্ষণগুলোর চিকিৎসা করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীরা অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি পরিচালনা করতে পারে, যাতে রোগীর অবস্থার অবনতি না হয়। এর চেয়েও ভালো সমাধান হতে পারে কোভিড-১৯ শুরু হওয়া রোধ করতে প্রোফিল্যাকটিক থেরাপি ব্যবহার করা। এ ছাড়া সংক্রমণের বিষয়টি শনাক্ত করতে দ্রুত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যেসব দেশে যথেষ্ট সম্পদ আছে, তাদের জন্য এটি টেকসই হতে পারে। তবে দরিদ্র দেশগুলোতে এটা করা কঠিন।

তবে দেবী শ্রীধর বলছেন, করোনাভাইরাস ঠেকানোর সহজ কোনো সমাধান নেই। আগামী দিনগুলোতে জনস্বাস্থ্য, সমাজ ও অর্থনীতির স্বার্থের মধ্যে একটি নাজুক ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ রাখতে হবে, যাতে সরকার একে অপরের ওপর আগের চেয়ে বেশি নির্ভরশীল থাকবে। এ লড়াইয়ের অর্ধেকটা হবে ভাইরাসটির চিকিৎসার সরঞ্জাম উন্নয়নের যেখানে ভ্যাকসিন, অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি এবং দ্রুত পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়গুলো থাকবে আর বাকি অর্ধেক লড়াই হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডোজ উৎপাদন, এগুলো ন্যায্য ও সমতার ভিত্তিতে বিতরণ, যাতে পৃথিবীর সমগ্র অঞ্চলে ব্যক্তির কাছে তা পৌঁছাতে পারে।


https://www.prothomalo.com/international/article
MD. SIDDIQUL ALAM (REZA)
Senior Assistant Director
(Counseling & Admission)
Employee ID: 710000295
Daffodil International University
Cell: 01713493050, 48111639, 9128705 Ext-555
Email: counselor@daffodilvarsity.edu.bd