ইতিহাস ঐতিহ্যে দুর্গা পুঁজা

Author Topic: ইতিহাস ঐতিহ্যে দুর্গা পুঁজা  (Read 867 times)

Offline Mohammad Nazrul Islam

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 178
  • Test
    • View Profile
আসছে ২২শে অক্টোবর ২০২০ সাল, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পুঁজা। ‘ঈশ্বর, আরাধনার গুরুত্বপূর্ন দিন। হিন্দু শাস্ত্রে, ঈম্বর সর্বশক্তিমান। ইচ্ছা করলে তিনি যে কোন সময়, যে কোন রুপ ধারন করতে পারেন। সকারে তিনি দেবতা, নিরাকারে তিনি বহ্মা। দেবী দুর্গা তার সকারের রুপ।

শাস্ত্রমতে, রুপ বা আকারই স্বর্ভূত নয়; ভক্তের ভক্তিই সর্ব উত্তম। ভগবানের সাথে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রেমের সর্ম্পক বিদ্যমান। এই প্রেমের রুপ চার প্রকার-যথা, দাস্য- প্রেম, ও বাৎস্য প্রেম, শান্ত প্রেম এবং মধুর প্রেম। দাস্য-প্রেম মূলত; দাস প্রভুর প্রেম; আর বাৎস প্রেম হল; মাতৃ-সন্তান রুপ। নিজেকে সন্তানরুপে সজ্জিত করে দেবী দুর্গাকে মায়ের আসনে স্থান দিয়ে তার আরাধনা করাই দুর্গা পুঁজার সচিত্র রুপ্।

আগেই বলা হয়েছে ঈশ্বরের মাতৃরুপের নাম দুর্গা। বহ্মাকে রক্ষা করার জন্য জীবের দুগর্তি হরণ করার নিমিত্ত দুর্গা রুপ ধারন করে আর্বিভুত হন বলে তিনি দুর্গা। দুর্গা সকল দেব-দেবীর  সমন্বিতা, পরমাশক্তি। তিনি সাক্ষাৎ লক্ষ্ণী  স্বরুপিনী, সিদ্ধিপ্রদারিনী, জগন্ময়ী মা; সকল শক্তির আধাঁর। যিনি দুর্গা তিনিই পাবর্তী বা উমা। দুর্গা দেবী এইরুপ ১০৮টি বিশেষনে ভূষিত। জ্ঞানশক্তি, ধনশক্তি ও পেশীশক্তির নিয়ন্ত্রা দেবী দুর্গা। তাই তিনি ত্রিভূবন জয়ী। দেবী দুর্গা কিভাবে দুগর্তিনাশিনী, মহিষাসুর মর্দিনী হলেন সেই মাহামায়া দেবীদুর্গার  ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক পুরানো।


হিন্দুশাস্ত্র মতে, পুরাকালে রম্ভা অসুর নামে এক অসুর ছিল। তার পুত্র মহিষাসুর ছিলেন অসুরদের রাজা। মহিষাসুর বহ্মার ভক্ত ছিলেন। অমরত্ব বর লাভের আশায় বহ্মার কঠোর তপস্যা করতেন। তপস্যারত অবস্থায় একদিন বহ্মা এসে মহিষাসুরের কাছে হাজির হলেন এবং বললেন, মহিষাসুর তুমি কি চাও? মহিষাসুর উত্তরে বললেন, ‘আমি অমরত্ব চাই,। বহ্মা বললেন, ‘না মহিষাসুর ; এই বর তুমি চেও না; এই বর শুধু দেবতারা লাভ করতে পারে, কোন অসুর নয়।

এইভাবে অমরত্ব লাভে কয়েক বার ব্যর্থ হয়ে শেষে মহিষাসুর কঠিন থেকে কঠিনতর তপস্যায় লিপ্ত হলেন। বহ্মা তার তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে বলেন, ‘তুমার কঠিন তপস্যায় আমি মুগ্ধ হয়েছি, বল তুমার আকাঙ্খা কি? মহিষাসুর বললেন, ‘হে দেবকর্তা আপনি আমাকে এমন বর দিন-যাতে আমি ত্রিভূবন জয় করতে পারি,। বহ্মা বললেন-‘তথাস্ত, সবর্ত্র অপরাজেয় থাকবে; শুধু নারী ছাড়া। উত্তরে মহিষাসুর বললেন, ‘হে দেবকর্তা আপনাকে ধন্যবাদ; আমি নারীর ভয়ে ভীত নই,।

বর লাভের পর অসুরদের রাজা মহিষাসুর ঘোর অত্যাচারি হয়ে উঠলেন। স্বর্গের রাজা ইন্দ্রের সাথে যুদেধ লিপ্ত হলেন। দীর্ঘ দিন যুদ্ধ চলল। অবশেষে দেবতারা হেরে গেলেন। অসুর স্বর্গ রাজ্য দখল করে দেবতাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলেন এবং সবর্ত্র অন্যায়-অত্যাচারের রাজ্য কায়েম করলেন। তার অত্যাচার-অনাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রাজ্য হারা দেবতারা একদিন ‘এক সভায়, একত্রিত হলেন।

তারা বহ্মাকে অগ্রদূত করে মহাদেব ও বিষ্ণুর কাছে  অসুরের নানাবিধ অত্যাচার-অনাচারের কাহিনী  বনর্না করলেন। সে কাহিনী শুনে মহাদেবও বিষ্ণু ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। বহ্মাও ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেন। ক্রোধের মাত্রা এত বেশী ছিল যে, ক্রোধে বহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও অন্যান্য দেবতাদের শরীর থেকে আগুনের মত তেজ বের হতে লাগল। তেজরাশ্মি একত্রিত হয়ে বিশাল আলোকপুঞ্জে পরিনত হল। এই আলোকপুঞ্জ থেকেই আর্বিভুত হলেন এক নারী দেবীরমুর্তি- দেবী দুর্গা। তখন দেবতারা জপ করতে লাগলেন,

‘জাগো জাগো মহাশক্তি দুর্গতিনাশিনী
  অসুরকে বিনাশে জাগো মহিষাসুর মর্দিনী।


এখানে উল্লেখ্য যে, শিবের তেজে দেবীর মুখ। বিষ্ণুর তেজে তার বাহুসমূহ, যমের তেজে কেশপাশ, ইন্দ্রের তেজে শরীরের মধ্যভাগ, বহ্মার তেজে তার ত্রিনের উৎপন্ন হয়। দেবগন নিজ নিজ অস্ত্র থেকে একটি করে নতুন অস্ত্র তৈরী করে মহামায়া দুর্গাদেবীর দশ হাতের সুভাবর্ধন করেন।
শিব তার কালাম্ভর ত্রিশূল, বিষ্ণু তার অমোঘচক্র, বরুন তার ভীমনার্দ শঙ্খ, অগ্নি তার অব্যর্থ শক্তি, বায়ু তার ত্রিদিক বিজয়ী ধন এবং বানপূর্ন দুইটি অক্ষয় তুনীর, ইন্দ্র তার দুনিৃবার  বজ্র, বিশ্বকর্মা তার খরশাস কুঠার ও অভেদ্যবর্ম এবং হিমালয় বাহন রুপ কালানন্স সুদৃশ্য সিংহ দিলেন।
দশহাতে দেবী মহাশক্তি নিয়ে অসুর বধে বাহির হলেন। দেবতারা স্তব করতে লাগলেন, ‘যা দেবী স্বর্ভূতেষু শক্তিরুপেন সংস্থিতা- নমস্তসৈা, নমস্তসৈা, নমস্তসৈা নমো নম;।

দুর্গা দেবীর বিকট অট্টহাসিঁ ও জয়-ধ্বনি, দূতের মাধ্যমে অসুরের কাছে পৌছিয়ে গেল। অসুর পতি রাগে গর্জে উঠলেন। সেনাপতি চিক্ষু ও চামারকে আদেশ দিলেন, ‘অসুর রাজ্যে এই রমনী কে? কিসে তার এতো অট্টহাসিঁ! আদেশ করছি ‘এই রমনীর চুলের মুঠি ধরে আমার কাছে নিয়ে এসো,।

সেনাপতিদ্বয় ও অসুরা দেবীকে আক্রমনের জন্য ছুটে গেল এবং বলল, ‘ওরে সুন্দরী রমনী তুমি কে? অট্টহাসিঁতে দেবী দুর্গা বললেন, ‘আমি দুগর্তিনাশিনী; আমি তুমাদের মৃত্যুর দূত। কথাশুনে সেনাপতিদ্বয় ও অসুরা দেবীকে আক্রমন করলে দেবীরর শূলের আঘাতে তারা সকলেই নিহত হলেন।

সেনাপতিদ্বয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে অসুর বিচলিত হয়ে, নিজেই যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহন করলেন। মহিষাসুরের স্ত্রী অনুনয়-বিনয় করেও অসুরকে যুদ্ধ যাত্রা থেকে ফিরাতে পারলেন না। যুদ্ধ আরম্ভ হল। মহিষাসুর ক্ষনে ক্ষনেই নিজের রুপ পবির্বতন করে দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে থাকলেন।

এক সময় দেবীর এক খড়গের আঘাতে অসুরের মস্তক ধর থেকে আলাদা হয়ে গেল। দেবতাগন তখন আনন্দে মেতে উঠলেন। স্বর্গ রাজ্য অসুর মুক্ত হল। দেবীর জয় গানে চারিদিক মূখরিত হয়ে উঠল, ‘ মা যে আমার মহামায়া আনন্দমযী জগৎ মাঝে- এক হাতে তার শানিত কৃপাণ আর এক হাতে শঙ্খ বাজে।

সেই থেকে দেবী হলেন, মহিষাসুর মর্দিনী /মাতৃরুপিনী। তাই মায়ের কাছে প্রার্থনা-‘মা জগন্ময়ী , আনন্দময়ী , অসুরনাশিনী যেন অ-শুভ শক্তি দুর করে জগতের কল্যাণ করেন।

সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সবার্থ সাথিকে,
শরন্যে ত্র্যন্মকে গৌরী নারায়নী  নমোহস্ততে;।

মনতব্য: অসুরী শক্তি নিহিত আছে প্রতিটি মানুষের ষড়রিপুর মধ্যে। কু-প্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষ যেমন অধ:পতনের দিকে ধাপিত হয় তেমনী প্রভাবিত করে সমাজকেও। সমাজে অনেক অসুররুপি মানুষ আছে যারা দিনের আলোয় সিদ্ধ সেবক সেজে রাতের অন্ধকারে মানুষের সম্ভ্রভ হরণ করে, এদের বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। এই দিক থেকে হিন্দুদের দুর্গা পুজাঁ সকল জাতির জন্য দৃষ্টান্ত মূলক।

https://banglatopnews24.com/ethas-otijja-dorgapuja/

-মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সম্পাদক, বাংলাটপনিউজ২৪.কম ।
« Last Edit: October 20, 2020, 11:35:49 AM by Mohammad Nazrul Islam »