মাছ খাবেন ভালো থাকবেন

Author Topic: মাছ খাবেন ভালো থাকবেন  (Read 1702 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
মাছ খাবেন ভালো থাকবেন
« on: January 04, 2012, 07:36:58 AM »
তবু মাছ খেতে বলব।
ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
মানুষ না চাইলে কোনো ব্যবসা চলতে পারে না। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সম্প্রতি দেখেছেন, যাঁরা প্রতি সপ্তায় তৈলাক্ত মাছ খান, যেসব মাছে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ মেদ অম্ল—এদের করোনারি হূদেরাগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে ৩৬ শতাংশ। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের স্ট্রোক, বিষণ্নতা, বয়সের কারণে মগজের অধোগতি ঝুঁকি কম। অনেক ক্রনিক অবক্ষয়ী রোগের শঙ্কাও তাঁদের কম।
শীতল পানির মাছের কথাই বেশি বলা হয়, যেমন—স্যামন, ট্রাউট, টুনা, তেলাপিয়া। আবার এসব মাছ খামারেও হয়।
বিশেষজ্ঞরা দেখছেন, খামারে চাষ করা এসব মাছের মধ্যে কোন মাছটি কম হূদ্স্বাস্থ্যকর। বলছেন তেলাপিয়া মাছের কথা। এতে নাকি ওমেগা-৩ মেদ অম্ল কম, সে জন্য কম হূদ্স্বাস্থ্যকর টুনা, স্যামন, ট্রাউট মাছের চেয়ে। তেলাপিয়ায় বেশি আছে ওমেগা-৬ মেদ অম্ল—এই অম্লও স্বাস্থ্যকর বটে।
মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যকর কেন? বিশেষ করে হূদ্স্বাস্থ্যকর?
কারণ এতে রয়েছে ওমেগা-৩ মেদ অম্ল। মাছ ও মাছের তেলে যে ধরনের ওমেগা-৩ মেদ অম্ল রয়েছে, এর নাম হলো ইপিএ ও ডিএইচএ। মাছে আছে ওমেগা-৬ মেদ অম্লও। স্বাস্থ্যের জন্য এও ভালো।
ওমেগা-৩ শরীরে বিশেষ তৈরি হয় না, তাই এর জোগান লাগে। ওমেগা-৬ শরীরে আসে মাছ ছাড়াও অন্যান্য উ ৎস থেকে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলে, হূদ্সুখের জন্য সপ্তাহে মাছের অন্তত দুটো সার্ভিং অবশ্য চাই। প্রতিটি সার্ভিং মানে ৩ দশমিক ৫ আউন্স রান্না করা মাছ বা ৩/৪ কাপ (এক কাপের চার ভাগের তিন ভাগ) মাছ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডিএর পরামর্শ, সপ্তাহে ৮ আউন্স মাছ। মিষ্টি পানি বা লোনা পানি—দুটোরই মাছ।
শামুকজাতীয় মাছে চর্বি সবচেয়ে কম। থাইল্যান্ডে দেখেছি, মানুষ শামুক খায় অবলীলায়, খুঁটে খুঁটে।
সেলফিশ—এমনকি কাঁকড়া, গলদাচিংড়ি, শামুক—এসব মাছ। অবশ্য চিংড়ি মাছের মগজে খুব কোলেস্টেরল। সেলফিশে আনস্যাচুরেটেড চর্বি বেশি, স্যাচুরেটেড চর্বি কম। প্রোটিনও আছে।
আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছে ওমেগা-৩ মেদ অম্ল সবচেয়ে বেশি। ৪ আউন্স স্যামন মাছে ১২০০-২৪০০ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ মেদ অম্ল আছে।
নদী আর সমুদ্রের মাছের চেয়ে খামারে চাষ করা মাছে ওমেগা-৩ মেদ অম্ল কম—এ কথাও ঠিক নয় পুরোপুরি।
কিছু প্রজাতি যেমন স্যামন, ম্যাকবিল, হেরিং, ট্রাউট—এরা খামারে হোক বা খরস্রোতা নদীতে বা সাগরে হোক, ওমেগা-৩ বেশি থাকে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, মাছ থেকে ওমেগা-৩ মেদ অম্ল আহরণ করাই শ্রেষ্ঠ। তবে যাঁরা হূদেরাগের রোগী বা যাঁরা কোনো কারণে যথাযথ পরিমাণ ওমেগা-৩ পাচ্ছেন না খাবারে, মাছের তেল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণই ভালো। তবে চিকি ৎসককে জিজ্ঞেস করে নেবেন। মাছকে কেমিক্যাল দিয়ে দূষিত করে বাজারজাত করা যেমন একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকির ব্যাপারে জলজ প্রাণী মাছও নানা কারণে জলাশয়ে ডায়োক্সিন, পিসিবি, পারদ ও কীটনাশক অন্যগুলো দ্বারা দূষিত হতে পারে। তাহলে মাছ খাব না? তা কেন? জঙ্গলে সাপ আছে বলে জঙ্গলে যাবে না? পথে যন্ত্রদানব আছে বলে, পথে নামব না? পথে নামব। প্রতিরোধও করব। মাছে মাঝেমধ্যে কৃমি, পরজীবী—এসব থাকতে পারে। তবে মাছ ভালো করে যথাযথ রান্না করলে এসব থাকে না। কাঁচা মাছ বা আধা সেদ্ধ মাছ খাওয়া ঠিক নয়। ফিতা কৃমির আশঙ্কা বেশি। মাছকে ১৪০০ ডিগ্রি তাপে যথাযথ রান্না করলে কীট, পরজীবী ধ্বংস হয়ে যায়। সঠিক হিমায়িত না থাকলে কাঁচা মাছ খাওয়া ঠিক নয়, রান্না করেও। পারদ বা কীটনাশকের জন্য গর্ভবতী মহিলা বা দুগ্ধবতী মহিলাকে মাছ থেকে বারণ করা ঠিক নয়—বলেছে ইউএসডিএ।
মাছের ছাল ছাড়িয়ে ফেললে কীটনাশক যেমন পিসিবি বা ডায়োক্সিন দূষণ অনেক কমে যায়। সামুদ্রিক মাছ বেশ স্বাস্থ্যকর; তবে অনেকের অ্যালার্জি হয়। চিংড়ি, শামুক, কাঁকড়াতে অনেকের অ্যালার্জি। মাছ ভাজা স্বাস্থ্যকর নয় বলে জানায় হূদেরাগ সমিতি। সেঁকা, ভাপে সেদ্ধ ও ঝলসানো মাছ ভালো।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল,
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ৩০, ২০১১