করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত পুরো পৃথিবী। শুরুতে এই রোগ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা না থাকলেও ধীরে ধীরে চিকিৎসকেরা এর গতি-প্রকৃতি নির্ণয়ে কিছুটা সক্ষম হয়েছেন। ফলে চিকিৎসাব্যবস্থাও তরান্বিত হয়েছে। যেমন সংক্রমিত রোগীদের কারও কারও রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে জটিল সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হয়। করোনামুক্ত হওয়ার পরও এ ধরনের জটিলতা কারও কারও মধ্যে দেখা যায়।
ডা. বিলকিস ফাতেমার সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির মহাসচিব এবং জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ সাফি মজুমদার
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের রক্ত জমাট বাঁধা ও এর প্রতিকার নিয়ে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ের সুরক্ষা’। অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্বে ডা. বিলকিস ফাতেমার সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির মহাসচিব এবং জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ সাফি মজুমদার।
করোনা চিকিৎসার অগ্রগতি–সম্পর্কিত আলোচনা দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ সাফি মজুমদার। তিনি বলেন, শুরুতে করোনার গতি–প্রকৃতি সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা না থাকলেও এত দিনের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ থেকে কিছু বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়েছে। যেমন আগে আমরা জানতাম না যে করোনা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এ কারণে অনেক রোগীর জটিল সমস্যা দেখা যায়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। মহামারির শুরুতে ধারণা করা হতো ফুসফুসে সংক্রমণের কারণেই মৃত্যু বেশি হচ্ছে। পরে নানা ধরনের পর্যবেক্ষণ ও করোনা রোগীদের ময়নাতদন্ত দেখে বোঝা গেল, করোনা মানুষের শরীরের বিভিন্ন জায়গায়, যেমন পায়ে ও ফুসফুসে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধছে। এ বিষয়ে জানার পর চিকিৎসকেরা রক্ত তরল করার যে ওষুধগুলো প্রচলিত ছিল, সেগুলো প্রয়োগ করেন এবং ভালো ফল পান।
করোনায় রক্ত জমাট বাঁধা ও প্রতিকার
এরপর মেডিকেল গাইডলাইনগুলোতে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। যেসব করোনা রোগীর সংক্রমণ মাঝারি ও জরুরি পর্যায়ে, তাঁদের অবশ্যই রক্ত তরল করার ওষুধ প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সংক্রমিত রোগীদেরও এ ধরনের ওষুধ প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রচুর রোগীর মৃত্যুঝুঁকি যেমন কমেছে, তেমনই মৃত্যুহারও কমেছে।
রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গ সম্পর্কে চিকিৎসক আবদুল্লাহ সাফি মজুমদার বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রক্ত জমাট বাঁধার তেমন কোনো উপসর্গ নেই। আবার যখন বোঝা যায় যে রোগীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধছে, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই রক্ত তরল করার ওষুধ প্রয়োগ করতে বলা হয়। তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। রোগী নিজে নিজে এই ওষুধ গ্রহণ করলে অন্য জটিলতা দেখার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আবদুল্লাহ সাফি মজুমদার বলেন, এগুলো খুবই স্বল্পমাত্রার ওষুধ। তাই সাধারণত এর কোনো দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।
করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ সাফি মজুমদার বলেন, করোনা নিয়ে এমনিতেই সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখা যাচ্ছে। তাই এর খারাপ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা যত কম করা যায়, ততই ভালো। তারপরও কিছু বিষয় না জানলেই নয়। যেমন যেকোনো ধরনের ভাইরাস মানুষের শরীরে তেমন কোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে না। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেখা গেছে। যদিও এ নিয়ে তেমন ভয়ের কিছু নেই। কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করলেই চলবে। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এর মধ্যে হার্টের বা ফুসফুসের কিছু সমস্যা দুই বা তিন মাস পরও দেখা গেছে। একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত খেলোয়াড়েরা সুস্থ হয়ে খেলায় ফেরার আগে ফিটনেস পরীক্ষায় তাঁদের হার্ট ও ফুসফুস আগের চেয়ে কিছুটা কম কার্যকর দেখা গেছে। আবার সম্প্রতি আমি একটি গবেষণাপত্র হাতে পেয়েছি, যেখানে এ বিষয়ে ভালো খবর দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে পুরোপুরি সেরে যায়। সুতরাং ভয়ের তেমন কিছু নেই। শুধু প্রয়োজন কিছুটা সর্তকতা।
করোনা কাদের ক্ষেত্রে বেশি ঝুকিপূর্ণ এবং দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ সাফি মজুমদার বলেন, যাঁরা আগে থেকে অন্য কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে করোনার প্রভাব মারাত্মক। বিশেষ করে যাঁদের হৃদ্রোগ বা ফুসফুসের সমস্যা ছিল। আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আক্রান্তের পর নতুন করে হৃদ্রোগে ভুগছেন তাঁরা। তাই যাঁরা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, তাঁদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে গুরুত্বসহকারে হৃদ্রোগের ওষুধ সেবন করতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসক দিয়ে ফলোআপ করতে হবে। আর করোনায় দ্বিতীয়বার আক্রান্তের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো এখনো এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা দেয়নি। তাঁরা বলছেন, ‘আমরা জানি না। তবে আমরা দেখেছি বিশেষ করে চিকিৎসকের ক্ষেত্রে, যাঁরা একবার আক্রান্ত ছিলেন, তাঁরা দ্বিতীয়বারও আক্রান্ত হয়েছেন। সুতরাং যাঁরা একবার আক্রান্ত ছিলেন, তাঁদেরও সর্তক থাকতে হবে।’
Video Link:
https://www.facebook.com/watch/?v=380340293197429Ref:
https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%9C%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9F-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%A7%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0