মেয়েদের লং কোভিডের হার পুরুষের তুলনায় বেশি।
পোস্ট-কোভিড সিনড্রোম বা লং কোভিড কেন হয়, তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। এ বিষয়ে গবেষণা চলছে।
করোনায় বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ছাড়া দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, অপ্রতুল মানসিক শক্তি, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস, পরিবার বা কাছের লোকদের সহযোগিতা না পাওয়াও দায়ী।
লেখা
ডা. রওশন আরা খানম
কোভিড-পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যায় করণীয় কী
আমরা কোভিড-১৯–এর সঙ্গে একটা লম্বা সময় পার করেছি। কেউ কেউ কোভিড-১৯ মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু অনেকেই ফুসফুসজনিত ও ফুসফুস–বহির্ভূত নানা উপসর্গ থেকে মুক্ত হচ্ছেন না, আবার কেউ কেউ পুরোপুরি ভালো হয়ে আবারও এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসছেন। একে পোস্ট-কোভিড সিনড্রোম বা লং কোভিড বলা হচ্ছে।
পোস্ট-কোভিড সিনড্রোম উপসর্গগুলোর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্ট; বিশেষত অল্প কাজেই হাঁপিয়ে ওঠা, দুর্বলতা, অহেতুক দুশ্চিন্তা, অবসন্নতা, নিদ্রাহীনতা, বুক ধড়ফড় করা, গায়ে ব্যথা, মনোযোগের ঘাটতি, চুল পড়ে যাওয়া অন্যতম।
যারা অন্যান্য অসুখে ভুগছেন, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বয়স্ক (৫০–এর বেশি বয়স), স্থূলতা, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সপ্তাহে যাদের পাঁচ বা ততোধিক উপসর্গ ছিল, যারা লম্বা সময় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাদের লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তবে এটা যে কারও হতে পারে, এমনকি যারা মৃদু উপসর্গে ভুগেছেন, তাদেরও। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে ২-১০ শতাংশ রোগী, যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের এটা হতে পারে। এ সময় রোগীরা কিন্তু অন্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
লং কোভিড কেন হয়, তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। এ বিষয়ে গবেষণা চলছে। তবে করোনায় বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ছাড়া দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, অপ্রতুল মানসিক শক্তি, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস, পরিবার বা কাছের লোকদের সহযোগিতা না পাওয়াও দায়ী। মেয়েদের লং কোভিডের হার পুরুষের তুলনায় বেশি।
লং কোভিডের বিশেষ কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা এখনো আসেনি। অনেকেই পর্যাপ্ত বিশ্রাম, উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ধীরে ধীরে আগের অবস্থানে ফিরে আসছেন। তবে অবশ্যই পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে শারীরিক বড় ধরনের সমস্যা থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরামর্শ
নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের চেষ্টা করতে হবে।
দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে হবে। পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস থেকে বের হতে আপনার পূর্ণ ইচ্ছাশক্তি আপনাকে এগিয়ে নেবে। এখানে পরিবারের সবার সহযোগিতা দরকার।
শ্বাসকষ্টের রোগীদের নিয়মিত পালস অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বসে থাকা অবস্থায় অক্সিজেন ভালো থাকলে, সমান্তরালে নিয়মিত হাঁটুন, ৪০ ধাপ হেঁটে আবারও অক্সিজেনের মাত্রা দেখুন। মাত্রা ৯২ শতাংশের কম হলে বাসায় অক্সিজেন নিতে হতে পারে (কিছু কিছু ফুসফুসের নির্দিষ্ট সমস্যা ছাড়া)। প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
নিয়মিত ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হবে। আরামদায়ক পজিশনে বসে ধীরে ধীরে লম্বা করে পেট ফুলিয়ে শ্বাস নিন, নাক দিয়ে নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়ুন। এতে আপনার ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়বে। শ্বাসকষ্ট, কাশি কমবে।
ফুসফুসের পুনর্বাসন—যারা অনেক বেশি সমস্যায় ভুগছেন, বিশেষত শ্বাসকষ্টে, তারা বেশি উপকৃত হবেন। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা আপনাকে একসঙ্গে কিছু ব্যবস্থাপনা দেবেন। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম, মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ, পুষ্টিবিদের দেওয়া খাদ্যতালিকা ও ওষুধ আপনাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া আপনার নির্দিষ্ট কোনো সমস্যা থাকলে তারও সমাধান হয়ে যাবে।
সর্বোপরি করোনামুক্ত থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। কারণ প্রতিরোধই উত্তম উপায়।
কোভিড-১৯–এর টিকা নিন, নিরাপদে থাকুন।
লেখক: কনসালট্যান্ট, বক্ষব্যাধি, ইউনাইটেড হাসপাতাল
Ref:
https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A1-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%80-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%80%E0%A7%9F-%E0%A6%95%E0%A7%80