« on: June 30, 2021, 04:07:13 PM »
জামাতে নামাজ আদায়ের প্রতিদান
ইসলামের প্রতিটি বিধানেই দুনিয়া-আখেরাতের অসংখ্য কল্যাণ নিহিত আছে। ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত প্রতিটি হৃদয় সেসব কল্যাণ উপলব্ধি ও অবলোকন করে। মুমিনের জীবনে ঈমানের পর আবশ্যকীয় একটি বিধান হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। নামাজ আদায়ের পদ্ধতিগত বিধান হচ্ছে জামাতে আদায় করা। এই বিধানটিরও তাগিদের সঙ্গে বহুবিধ প্রতিদানের কথা হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে। জামাতে নামাজ আদায়ের তাগিদ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু কর।’ (সুরা বাকারা : ৪৩)।
অর্থাৎ জামাতে নামাজ আদায়কারীদের সঙ্গে নামাজ আদায় কর। নবীজি (সা.) সারা জীবন জামাতে নামাজ আদায় করে দেখিয়েছেন, নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সারা জীবন জামাতের সঙ্গেই নামাজ আদায় করেছেন। এমনকি ইন্তেকালপূর্ব অসুস্থতার সময়ও জামাত ছাড়েননি। সাহাবায়ে কেরামের পুরো জীবনও সেভাবে অতিবাহিত হয়েছে। (বুখারি : ৬৪৪)।
পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই জামাতে আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা, যা ওয়াজিবের সঙ্গে তুলনীয়। অর্থাৎ এটি ওয়াজিবের কাছাকাছি। (মুসলিম : ১০৯৩)।
শরিয়ত অনুমোদিত কোনো ওজর বা অপারগতা ছাড়া জামাতে শরিক না হওয়া বৈধ নয়। যে ব্যক্তি জামাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায়, সে গুনাহগার হবে। (আবু দাউদ : ৪৬৪)
নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায়ের অভূতপূর্ব প্রতিদানের সুসংবাদ রয়েছে হাদিস ভান্ডারে। জামাতে নামাজ আদায়ে প্রতি রাকাতে ২৭ রাকাতের সওয়াব লাভ হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।’ (মুসলিম : ১৪৭৭)।
জামাতে নামাজ আদায় করলে প্রতি কদমে নেকি লাভ হয় এবং গুনাহ মাফ হয়। সঙ্গে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা লাভ করে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে তার প্রতি কদমে একটি নেকি দেওয়া হয়। একটি করে গুনাহ মাফ করা হয়। একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। (মুসলিম : ১০৯৩)।
জামাতে নামাজ আদায় করলে সারা দিন আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সে আল্লাহর হেফাজতে থাকে। আল্লাহর হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে যে কষ্ট দেবে, আল্লাহ তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ২/২৯)।
জাহান্নাম ও মুনাফেকি থেকে মুক্তির সনদ লাভ করে জামাতে নামাজ আদায়কারী। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত প্রথম তাকবিরের সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে দুটি পুরস্কার দান করবেন। এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। দুই. মুনাফিকের তালিকা থেকে তার নাম কেটে দেবেন। (তিরমিজি : ২৪১)
বিনা ওজরে জামাত পরিত্যাগকারীর নিন্দায় নবীজি কঠোর কথা বলেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার প্রাণ যার হাতে, তার শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দেই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে মুসল্লিদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।’ (বুখারি : ৬১৮)
তবে কিছু কিছু অপারগতার কারণে জামাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি আছে। যথা মুষলধারে বৃষ্টি হলে। রাস্তায় বেশি কাদা হলে। অতি আঁধার হলে। রাতে যদি অতিমাত্রায় মেঘ হয়। অসুস্থ হলে। দৃষ্টিহীন ব্যক্তির জন্য। এমন বৃদ্ধ, যিনি মসজিদে আসতে সক্ষম নন। কোনো রোগীর সেবাই আত্মনিয়োজিত থাকলে। ঘন ঘন প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হলে। এক পা বা উভয় পা কর্তিত হলে। এমন রোগ হওয়া, যার কারণে চলতে অক্ষম, যেমন অর্ধাঙ্গ রোগ ইত্যাদি। প্রচণ্ড ঠান্ডা, ঘর থেকে বের হলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকলে জামাতে শরিক না হওয়ার অবকাশ আছে। খাবার সামনে, সেও ক্ষুধার্ত, মনের আকর্ষণ খাবারের দিকে এমন অবস্থায় জামাতে না গেলেও চলবে। সফরের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়। জামাতে নামাজ আদায় করতে গেলে কোনো সম্পদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জামাত ত্যাগ করতে পারবে। জামাতে যাওয়ার কারণে ট্রেন, ফ্লাইট বা গাড়ি চলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে জামাতে শরিক না হওয়ার অনুমতি আছে। (বুখারি : ১১২৬, ৬২৬, ৬২৭; বদরুল মুনির : ৪/৪১৯; জমউল জাওয়ামে : ১/৩০৫৮; মুসনাদে আহমাদ : ৫৩০২; আবু দাউদ : ৪৬৪)
নারীদের জন্য সর্বোতভাবে মসজিদের চেয়ে ঘরে নামাজ আদায় করাই উত্তম। আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল আনসারী (রা.) তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদীর স্ত্রী রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো আপনার সঙ্গে নামাজ পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজি (সা.) বললেন, আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সঙ্গে নামাজ পড়তে পছন্দ কর। অথচ তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামাজ পড়ার চেয়ে তোমার একান্ত রুমে নামাজ পড়া উত্তম। আর তোমার বাড়িতে নামাজ পড়ার চেয়ে তোমার বসবাসের গৃহে নামাজ পড়া উত্তম । আর তোমার এলাকার মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে তোমার বাড়িতে নামাজ পড়া উত্তম। আর আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) নামাজ পড়ার চেয়ে তোমার এলাকার মসজিদে নামাজ পড়া উত্তম। তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামাজ পড়েন মৃত্যু পর্যন্ত। (ইবনে খুজাইমা : ১৬৮৯; ইলাউস সুনান : ৩/২৬)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সহিত আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
« Last Edit: September 15, 2021, 02:33:07 PM by ashraful.diss »
Logged
Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Ethics Education Teacher, DISS
Khatib, Central Mosque, Daffodil Smart City
Ashuli , Savar, Dhaka