অকারণে হাত কাঁপাকে বলা হয় ট্রেমর। এটি যেমন বিরক্তিকর, তেমনি এর জন্য লেখা বা জামার বোতাম লাগানোর মতো অনেক সহজ কাজও কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। হাতের মাংসপেশির অনিয়ন্ত্রিত কম্পনের ফলেই হাত কাঁপে।
হাত কেন কাঁপে
হাত কাঁপার অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে অন্যতম চারটি হলো— ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, অ্যাসেনসিয়াল ট্রেমর এবং পারকিনসন’স রোগ
শ্বাসকষ্টের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ (সালবিউটামল, থিওফাইলিন) সেবনের কারণে হাত-পা কাঁপতে পারে। থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য বা হাইপারথাইরয়েডিজম রোগে রোগীর হাত কাঁপে। তবে এ ক্ষেত্রে রোগীর অন্য কিছু উপসর্গও থাকে। যেমন: ওজন কমে যাওয়া, ডায়রিয়া, গরম লাগা বা ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি। অ্যাসেনসিয়াল ট্রেমর একটি বংশগত রোগ, যেখানে হাত-পা কাঁপার সঙ্গে রোগীর মাথাও কাঁপে। পারকিনসন’স একধরনের স্নায়ুরোগ। এ রোগে রোগীর হাত কাঁপার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটাচলার গতিও ধীর হয়ে যায়, চলাফেরায় সমস্যা হয়।
হাত কাঁপা রোগের কারণ নির্ণয়ের জন্য রোগীর ইতিহাস ভালো করে জানতে হবে। প্রয়োজনে থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষা করা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু স্নায়ুরোগ নির্ণয়ের জন্য মাথার এমআরআই পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা
চিকিৎসার শুরুতেই হাঁত কাপার কারণ নির্ণয় করতে হবে। কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হাত কাঁপছে কি না, বের করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সেই ওষুধ বন্ধ করলেই হবে। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন ও ভালো ঘুম, হাত কাঁপার অন্যতম চিকিৎসা।
প্রোপ্রানলল–জাতীয় ওষুধ হাত-পা ও মাথা কাঁপার চিকিৎসায় কার্যকর। হরমোনের রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পারকিনসন’স রোগে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাত কাঁপার সমস্যা চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। যেসব হাত-পা কাঁপা রোগী ওষুধে ভালো হয় না, তাদের জন্য বর্তমানে দেশেই ডিবিএস নামের একধরনের শল্যচিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। হরমোন বা স্নায়ুরোগের জন্য হাত কাঁপলে অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. নাজমুল হক মুন্না, সহকারী অধ্যাপক, নিউরোলজি, মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা