প্রতি দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল

Author Topic: প্রতি দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল  (Read 704 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 162
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS
প্রতি দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল


১। ফরজ নামাযঃ (৫ ওয়াক্ত) আর কিচ্ছু না করলেও ফরজ নামায বাদ দেয়ার কোনো সুযোগই নেই। [প্রতি ফরয নামাজের শেষে একবার আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন]

২। সুন্নাত নামাযঃ (দিনে ১২ রাকাত) (ফজর এর আগে ২ রাকাত ; জোহরের আগে ৪ এবং পরে ২ ;মাগরিবের পরে ২;এশার পরে ২ রাকাত)।

৩। তাহাজ্জুদঃ [তাহাজ্জুদ দুয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়। এসময় আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন (বুখারীঃ ১১৪৫ দ্রষ্টব্য)

৪। কুরআন পড়াঃ [নিয়মিত কুরআন পাঠ কিয়ামতের দিন নূর স্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে। ফজরের পর চাইলেই ৫ মিনিট হলেও অন্তত মুখস্ত সুরাগুলোই রিপিট করে তিলাওয়াত করা যায়, বড় সুরা যদি মুখস্ত না থাকে বা দেখে তিলাওয়াতের সুযোগ নাও হয়] ২৪ ঘন্টার দিনে নামায ব্যতীত কমপক্ষে ৩০ আয়াত পড়তে হবে। সুরা ইখলাস দশবার কিংবা শুধু সুরা মুলক(৩০ আয়াত)।

৫। আয়াতুল কুরসীঃ [ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকে না। -(নাসাঈ) ]... সুবহান আল্লাহ!

৬। 'ঘুমানোর আগে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়াঃ [রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পড়বে সেটা তার জন্য যথেষ্ঠ হবে।”]- বুখারি ৫০১০, মুসলিম ৮০৭।

৭। সাইয়্যেদুল ইসতিগফারঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’। - দিনে দুইবার পড়তে হবে। (মিশকাত হা/২৩৩৫)]

৮। ওযুর দু’আ; কালেমা শাহাদাতঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করার পর ‘আশহাদু আন লা~ ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা~ শারী-কা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান 'আবদুহু ওয়া রাসূ-লু-হু’ বলবে-- তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে- (সহীহ মুসলিম ১/১২২)]

৯। তাহিয়াতুল ওযুঃ (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে মুসলমান সুন্দররুপে অজু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি তার প্রতি নিবদ্ধ রেখে দুই রাকআত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।” - (সহিহ মুসলিমঃ ২৩৪, আবু দাউদঃ৩০৪)

ওযুর পরে দুই রাকাত নফল নামাযের এতই সাওয়াব! আলহামুদুলিল্লাহ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে বেলাল রাঃ এর পদধ্বনি শুনে এসেছেন, যিনি নিয়মিত এই নামায পড়তেন)।

১০। দরুদঃ (৫ ওয়াক্ত আযানের জবাব দেয়ার পর একবার করে মোট ৫ বার পড়বেন। শুক্রবার আরো বেশি করে পড়বেন) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে। আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করেন, এবং তার দশটি গোনাহ (সগীরা) মাফ করা হয়, ও তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।’- (নাসাঈ)

“আল্লাহুম্মা সল্লি 'আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সল্লাইতা 'আলা ইব্রহী-মা ওয়া ’আলা আলি ইব্রহী-মা ইন্নাকা হামীদুম মাজী-দ। আল্লাহুম্মা বারিক 'আলা মুহাম্মাদ ওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বা-রাকতা 'আলা ইব্রহী-মা ওয়া ’আলা আলি ইব্রহী-মা ইন্নাকা হামী-দুম মাজী-দ”। সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত দরুদঃ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম’।

১১। দৈনিক ৭০ বার ইস্তিগফারঃ (নিয়মিত ইস্তিগফারে দুয়া কবুল বেশি হয়, অনেক গুনাহ মাফ হয়, আল্লাহর শাস্তি ও বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, রিযিক প্রশস্ত হয়। প্রতিটিই সহীহ সনদে বর্ণিত হাদীস থেকে নেয়া) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তওবা ও ইস্তিগফার করতেন। আমরা নাহয় ৭০ বার অন্তত নিয়মিত করি??

১২।সুবহানআল্লাহ্ ... আলহামদুলিল্লাহ্... আল্লাহু আকবার। প্রতি ফরজ নামাযের পর এই তিনটি যিকির ৩৩ বার অথবা ১০ বার করে পড়তে হবে। দুইটাই হাদীসে এসেছে। ৩৩ বা ১০ যেটাই হোক, নিয়মিত আমল করতে হবে। অনিয়মিত ৩৩ এর চেয়ে নিয়মিত ১০ অনেক ভালো।

১৩। ২৪ ঘন্টার দিনে ১০০ বার সুবহানআল্লাহ্ঃ প্রতিদিন ১০০ বার সুবহান আল্লাহ্ পাঠ করলে ১০০০ সাওয়াব লিখা হয় এবং ১০০০ গুনাহ মাফ করা হয় । [সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৩]

১৪। ২৪ ঘণ্টার দিনে ১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহিঃ যে ব্যক্তি প্রতিদিন ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ ১০০ বার পাঠ করবে সমুদ্রের ফেনা পরিমান (সগীরা) গুনাহ থাকলেও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। [সহীহ আল-বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলি।

১৫। সাদাকাঃ (দান-সাদাকার গুরুত্ব নিয়েঅসংখ্য সহীহ হাদিস রয়েছে। একটা খেজুরের অর্ধেক হলেও দান করে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে বলা হয়েছে- এটাই কি যথেষ্ট নয় সাদাকার গুরুত্ব বোঝাতে?) ২৪ ঘণ্টার দিনে অন্তত এক টাকা হলেও হিসাব করে দান করতে হবে। প্রতিদিন হয়ত বের হয়ে দেয়ার সুযোগ নাও হতে পারে সেক্ষেত্রে, একটা জায়গায় নিয়ত করে জমা করতে হবে আর নিজে বের হলে বা অন্য কেউ বের হলে তাকে দিয়ে দেওয়াতে হবে।

১৬। ঘুমের আগে ওযু + আয়াতুল কুরসীঃ (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করবে, তখন সালাতের ন্যায় অজু করে ডান কাত হয়ে শয়ন করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (অজু অবস্থায়) ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে। অতঃপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ্র সমীপে ফেরেশতাটি প্রার্থনায় বলে থাকে, হে আল্লাহ্! তোমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল।’ (সহীহ ইবনে হিব্বান)

১৭। তিন কূলঃ (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। -সহিহ বুখারি ৫০১৭, সুনানে আবু দাউদঃ ৫০৫৮)

১৮। সুরা তাওবার শেষ আয়াতঃ (ফজর ও মাগরিবের পর ৭ বার করে) (উচ্চারণঃ হাসবি আল্লাহু লা~ ইলাহা ইল্লা হু, 'আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রব্বুল 'আরশিল 'আজী-ম)"যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় ৭ বার এই আয়াতটি পাঠ করবে আল্লাহ্ তার সকল চিন্তা, উৎকণ্ঠা ও সমস্যা মিটিয়ে দেবেন। (হিসনুল মুসলিম ১৩২-১৩৩পৃঃ, সুনান আবূ দাউদঃ ৫০৮১

১৯। সাপ্তাহিক রোজা/ আইয়্যামে বীজঃ (রাসূল সঃ এর নিয়মিত আমল) একই দিনে সোম/বৃহস্পতিবার এবং সাথে আইয়ামে বীজ অর্থাৎ চাঁদের ১৩,১৪,১৫ তারিখ।

২০। সুরা মূলকঃ (রাতে ঘুমানোর আগে) (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ " কোরআন শরীফে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে, যা তার তেলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে না দেয়া পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে।” (আবু দাউদ-১৪০২, তিরমিজি-২৮৯১; সুরাটি হলো সুরা মূলক, যেটা রাসূল(সঃ) ঘুমানোর আগে কখনোই বাদ দিতেন না।

২১। রাতে ঘুমানোর পর যখন ঘুম ভেঙ্গে যাবে, তখন উঠে এই দু’আ পড়ে দু’আ করলে দু’আ কবুল হয়। (বুখারী ১/৩৮৭)

লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা- শারী-কা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা~ হাওলা ওয়া লা~ কুওওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল 'আলিয়্যিল আযীম, রব্বিগফিরলী।

২২। আযানের জবাব+ আযানের পরের দুয়াঃ [বিশুদ্ধচিত্তে আযানের জবাব দিলে তা জান্নাতে নিয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। মুসলিম, নাসাঈ ও আবু দাউদ] [রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজানের পর আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ...’ এ দোয়াটি পাঠ করবে, তার জন্য আখিরাতে আমার সুপারিশ অবধারিত।’ (বুখারিঃ ৬১৪)]

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা'ওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াস সলাতিল ক্ক-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসী-লাতা ওয়াল ফা দ্বী-লাহ, ওয়াব 'আসহু মা ক্কামাম মাহমুদানিল্লাযী ওয়া 'আদতাহ"

২৩। প্রতি ফরজ নামাযের পর একবার ‘আল্লাহুম্মা আ ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা’। মুয়াজ(রাঃ) কে রাসূল (স) এর অসিয়ত করে গেছেন এটা কখনো বাদ না দিতে। (আহমাদ , আবু দাউদ , মিশকাত হা/৮৮৮) পড়লে = ৫*১= +৫ (প্রতি ওয়াক্তে +১ করে) না পড়লে= নেগেটিভ নেই।

২৪। ‘ রদ্বী-তু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়া বিল ইসলা-মি দী-নান, ওয়া বি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যান’ সকাল ও সন্ধ্যায় ৩ বার করে। যে ব্যক্তি তা করবে, আল্লাহর কাছে তার অধিকার হয়ে যায় তাকে কিয়ামাতের দিন সন্তুষ্ট করা। (আহমাদ ৪/৩৩৭)
Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Ethics Education Teacher, DISS
Khatib, Central Mosque, Daffodil Smart City
Ashuli , Savar, Dhaka