ইবলিস বেঁচে থাকার এবং মানবজাতিকে বিপথগামী করার অনুমতি চেয়েছিল
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন যখন ইবলিস শয়তানের উপর নারাজ হয়ে তাকে জান্নাত থেকে বহিস্কার করে দিলেন তখন তার উচিত ছিল নিজের অপরাধ স্বীকার করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা কিন্তু শয়তান তা করল না। তাফসীরে জুমাল, তাফসীরে ছাবী ও যখীরায়ে মা’লুমাত নামক কিতাবের মধ্যে এসেছে, সে দাবি করল, হে আল্লাহ! আমি আশি হাজার বৎসর পর্যন্ত তোমার জান্নাত দেখা-শোনা করেছি। ত্রিশ হাজার বৎসর পর্যন্ত আরশে আজীম বহনকারী ফেরেশতাদের সরদারী করেছি। বিশ হাজার বৎসর পর্যন্ত ফেরেশতাদেরকে শিক্ষা দিয়েছি। চৌদ্দ হাজার বৎসর পর্যন্ত আরশে আজীম তাওয়াফ করেছি। এছাড়া আরো যত ইবাদত-বন্দেগী, নামায-রোযা, তাসবীহ-তাহলীল আদায় করেছি তার বিনিময়ে আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত হায়াত দাও যাতে আমি আদম জাতির রক্তের সাথে চলে তাদেরকে ধোকা দিতে পারি। আল্লাহ বললেন, তুই যদি আখেরাত না চাস তাহলে তোর ইবাদত-বন্দেগীর বিনিময়ে তোকে কিয়ামত পর্যন্ত হায়াত দান করলাম। এ সুযোগ পেয়ে ইবলিস শয়তান বলল, হে মাবুদ! তোমার ইজ্জতের কসম করে বলছি, আমি মানব জাতিকে এমনভাবে ধোকা দিব যে, কিছু সংখ্যক মুখলিছ বান্দা ব্যতীত অন্যান্য সকল বান্দা-বান্দীকে একদিন তোমার অবাধ্য করে ফেলব ফলে তারা তোমার কথা আর শুনবে না। তখন আল্লাহ পাক বললেন------
قَالَ فَالۡحَقُّ ۫ وَالۡحَقَّ اَقُوۡلُ ۚ - لَاَمۡلَـَٔنَّ جَہَنَّمَ مِنۡکَ وَمِمَّنۡ تَبِعَکَ مِنۡہُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ
আল্লাহ বললেনঃ তাই ঠিক, আর আমি সত্য বলছি, তোর দ্বারা আর তাদের মধ্যে যারা তোর অনুসরণ করবে তাদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব। {সুরা ছোয়াদঃ আয়াত ৮৪ - ৮৫}
ইবলিস তখন কিয়ামত পর্যন্ত তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আল্লাহ তা’আলার কাছে অনুরোধ করে। তাকে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত বেঁচে থাকার অনুমতি দেয়া হয়। তিনি তার অস্বীকারকে ন্যায্যতার বন্ধনে বাঁধার চেষ্টায় বলেছিল যে, কাদামাটি থেকে সৃষ্ট এই নতুন সৃষ্টি (যাকে ইবলিসের চাইতেও সম্মানিত করা হয়েছে) তার পক্ষে এই মানুষকে খুব সহজেই বিভ্রান্ত এবং বিপথগামী করা সম্ভব।
ইবলিসের এই চ্যালেঞ্জটিকে সর্বদা আমাদের মাথায় রাখতে হবে:
قَالَ اَرَءَیۡتَکَ ہٰذَا الَّذِیۡ کَرَّمۡتَ عَلَیَّ ۫ لَئِنۡ اَخَّرۡتَنِ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ لَاَحۡتَنِکَنَّ ذُرِّیَّتَہٗۤ اِلَّا قَلِیۡلً
সে বললঃ দেখুন তো, এনা সে ব্যক্তি, যাকে আপনি আমার চাইতেও উচ্চ মর্যাদা দিয়ে দিয়েছেন। যদি আপনি আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত সময় দেন, তবে আমি সামান্য সংখ্যক ছাড়া তার বংশধরদেরকে সমূলে নষ্ট করে দেব। {সূরা আল-বনী ইসরাইল: আয়াত ৬২}
قَالَ رَبِّ فَاَنۡظِرۡنِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ - قَالَ فَاِنَّکَ مِنَ الۡمُنۡظَرِیۡنَ
সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেনঃ তোমাকে অবকাশ দেয়া হল। {সূরা আল-হিজর: আয়াত ৩৬-৩৭; সূরা আল-আরাফ: আয়াত ১৪-১৫; সূরা সাদ: ৭৯-৮০}