নবী করীম ﷺ এর জন্মপূর্ব অলৌকিক ঘটনাবলী

Author Topic: নবী করীম ﷺ এর জন্মপূর্ব অলৌকিক ঘটনাবলী  (Read 606 times)

Offline Khan Ehsanul Hoque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 549
  • Test
    • View Profile
নবী করীম ﷺ এর জন্মপূর্ব অলৌকিক ঘটনাবলী

ইরহাস আরবী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে মূল ভিত্তি, প্রাথমিক স্তর, যার উপর কোনো বস্তুর বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠিত (Foundation) হয় । তাই অভিধানসমূহে এর অর্থ বর্ণিত হয়েছে দেয়ালের প্রাথমিক স্তর। যেহেতু প্রাথমিক স্তরের উপর ভিত্তি করে কোনো ভবনের ব্যাপকতা ও বিশালতা সাব্যস্ত হয়। পরিভাষায় ইরহাস হলো, কোনো বস্তু ও বিষয়ের আত্মপ্রকাশ বা সুদূরপ্রসারী কোনো ঘটনা সংগঠিত হওয়ার পূর্বলক্ষণ, পূর্বাভাস বা কুদরতি সুসংবাদ। কারো মতে অচিরেই ঘটতে যাচ্ছে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভূমিকা বা পূর্ব শুভলক্ষণ। অর্থাৎ, মানব সভ্যতার আমূল পরিবর্তনসূচক কোনো বিষয়ের সুসংবাদমূলক অলৌলিক ঘটনাবলি।
الوسيط المعجم গ্রন্থে ইরহাসের অর্থ করা হয়েছে-
هو الامر الخارق للعادة يظهر للنبي قبل بعثته-
অর্থাৎ, নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াত প্রকাশের পূর্বে যে সকল অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে তাই ইরহাস। এ অর্থে ইরহাস খুবই ব্যাপক ও বিশাল বিষয়।

মানব সভ্যতার উৎকর্ষ সাধন এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বজাহানে নবী রাসূলগণের আগমন ঘটেছে। তাই সকল নবীর আগমনের পূর্বে সুসংবাদমূলক কোনো না কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে, যা পরবর্তী নবীর আগমনের সংবাদ বহন করে। উদাহরণ স্বরূপ ইবরাহীম (আ.) এর জন্মের পূর্বে নমরূদের স্বপ্ন, মূসা (আ.) জন্মকালীন ফেরাউনের স্বপ্ন। ইবরাহীম (আ.) ও মূসা (আ.) আগমনের প্রতি ইঙ্গিত বহন করেছিল। ঈসা (আ.) এর জন্মের প্রাক্কালে মরা খেজুর বৃক্ষ পত্র-পল্লবে আর পাকা খেজুরে ভরপুর হয়ে যাওয়া, মরিয়ম (আ.) এর অবস্থানস্থলের পার্শ্ব দিয়ে কুদরতী নহর প্রবাহিত হওয়া এবং শিশুকালীন অবস্থায় মা মরিয়ম (আ.) এর পবিত্রতা ও নিজের নবুওয়াত ঘোষণা দেয়া ছিল ঈসা (আ.) এর জন্মকালীন ইরহাস বা নবুওয়াতের পূর্ব শুভলক্ষণ।
কুল কায়েনাতের সরদার, সাইয়্যিদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার মাধ্যমে যেহেতু বিশ্ব মানবতার ইহ ও পারলৌকিক মুক্তি সাধিত হলো, প্রজ্ঞাহীনতা আর গোমরাহীর ঘোর অমানিশায় নিমজ্জিত মানবজাতি প্রকৃত হিদায়াতের আলোতে উদ্ভাসিত হলো, কুফরী আর শিরকের মতো পঙ্কিলতায় মুহ্যমান মানবজাতি এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের সুবর্ণ সুযোগ লাভ করলো। যার ওসীলায় আল্লাহ পাক এ বিশ্ব জাহান সৃষ্টি করেছেন, যাকে আল্লাহ পাক কুল মাখলুকাতের রহমত বানিয়ে এ দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। সেই মহান পুতপবিত্র সত্তা, খোদা প্রদত্ত অপূর্ব নিয়ামত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুনিয়ায় শুভাগমনের পূর্বে, জন্মের সময় এমনকি তাঁর নবুওয়াত প্রকাশের পূর্বে কুদরতি ব্যবস্থাপনায় পূর্বাভাস, শুভলক্ষণ ও সুসংবাদ হিসেবে অলৌকিক ঘটনা সংগঠিত হওয়াটা স্বাভাবিক। নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনীকার সিয়রবিদদের মতে ইরহাস হিসেবে ঘটে যাওয়া ঘটনার সংখ্যা অনেক।
মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে, নবীজির জন্মের দিনক্ষণ ও মাস বিশ্লেষণে একটি বিষয় প্রতীয়মান হয় যে, নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো শুভবস্তু বা শুভক্ষণের কারণে সৌভাগ্যমন্ডিত হননি; বরং তাঁর কারণে স্থান, কাল, পাত্র সবই সৌভাগ্যমন্ডিত হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায় নবীর জন্মের দিন না ছিল শুক্রবার, যা কুরায়শদের নিকট কাব বিন মালিক এর যুগ থেকে পবিত্র দিন হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। সেদিন না ছিল শনিবার, যা ইয়াহুদীদের নিকট পবিত্র দিন ছিল, আর সেদিন না ছিল রবিবার, যা ছিল খ্রিষ্টানদের নিকট পবিত্র। আল্লাহ তাআলা নবীজির জন্মের দিনকে সোমবার ধার্য করে প্রমাণ করেছেন শুক্র, শনি ও রবিবারের পবিত্রতার কারণে নবীজি সৌভাগ্যবান হননি। বরং সোমবারই ফযীলতপূর্ণ হয়েছে নবীজির জন্মের কারণে।
জন্মের মাস বিবেচনায়ও এরূপ একটি কুদরতি ব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হয়। নবীজির জন্ম রামাদ্বান মাসের মতো বরকতময় মাসে বা হজ্জের মাস তথা শাওয়াল যিলকদ আর যিলহজ্জে হয়নি। ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল পবিত্র আশুরার দিন সম্বলিত মুহাররাম মাস বা যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ রজব মাসেও হয়নি। বরং আরবদের কাছে এক গুরুত্বহীন মাস রবিউল আউয়ালে নবীজির জন্ম হওয়া এ কথাই প্রমাণ করে, আশহুরে হুরুম (যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ পবিত্র মাসসমূহ) পবিত্র রামাদ্বান মাস বা আশহুরে হজ্জ (হজ্জের মাস) এর মাসের কারণে নবীজি সম্মানিত হননি বরং রবিউল আউয়াল মাসই নবীজির জন্মের কারণে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ও সম্মানিত হলো।
ربيع- نور فوق نور فوق نور .
অতএব, ইরহাস বা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে নবীজির আগমনের সুসংবাদ নিয়ে। এসব অলৌকিক ঘটনার কারণে নবীজি আসেননি।
পবিত্র কুরআন হাদীস ও ঐতিহাসিক বর্ণনামতে আদম (আ.) সৃষ্টির পূর্ব হতে নবীজির নবুওয়াত প্রকাশিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাবলি কয়ভাগে ভাগ করা যায়। (১) আলমে আরওয়াহে সংঘটিত ঘটনাসমূহ। (২) আদম (আ.) থেকে খাজা আবদুল মুত্তালিব পর্যন্ত নবীজির আগমন সংক্রান্ত সংঘটিত অলৌকিক বিষয়াদি। (৩) নবীজির জন্মকালীন সংঘঠিত অলৌকিক ঘটনাবলি। (৪) জন্ম থেকে নবুওয়াত প্রকাশের পূর্ব পযর্ন্ত সংঘটিত ঘটনাবলি।

আলমে আরওয়াহে নবীজির নবুওয়াতের নিদর্শনাবলি:
কায়েনাত সৃষ্টির শুরু থেকে সায়্যিদুল কাওনাইন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী। তখন থেকেই তামাম মাখলুকাতের বিশেষত মানবজাতির উপর তাঁর কর্তৃত্ব বিরাজমান। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।

১। নবীগণের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ:
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
وَإِذْ أَخَذَ اللهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّيْنَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ- )سورة آل عمران)
অর্থাৎ, স্মরণ করো, যখন আল্লাহ নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, আমি তোমাদের কিতাব ও হিকমাত যা কিছু দিয়েছি, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়নকারীরূপে যখন একজন রাসূল আসবেন তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সহযোগিতা করবে।”
যতো নবী রাসূল এ পৃথিবীতে আগমন করেছেন তাদের সকলের কাছ থেকে আল্লাহ পাক এ মর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন যে, তোমাদের যামানায় যদি আমার প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবির্ভূত হন, তবে তোমরা তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করবে এবং তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করবে। তোমাদের নবুওয়াত ও ইলমের কারণে তাঁর আনুগত্য ও সাহায্য সহযোগিতা থেকে বিরত থাকবে না। অনুরূপভাবে আল্লাহ পাক প্রত্যেক নবী-রাসূলকে তাঁদের নিজ নিজ উম্মত থেকে এরূপ অঙ্গীকার গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে বুঝা গেলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাত সার্বজনীন, বিশ্বজনীন ও চিরন্তন স্থায়িত্বের অধিকারী।

২। আদম সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ পাক নবীজিকে নবুওয়াতের মুকুট পরিয়ে সৌভাগ্যমন্ডিত করেন:
মহান আল্লাহ তাআলা নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রূহ সৃষ্টি করতঃ নবুওয়াত প্রদান করে সৌভাগ্যমন্ডিত করনে এবং পৃথবিীতে খাতামুল মুরসালীন (সর্বশেষ নবী) হসিবেে প্ররেণ করনে।
হাদীস শরীফে এসেছে,
عن ابي هريرة (رض) قالوا يا رسول الله صلي الله عليه وسلم متي وجبت لك النبوة؟ قالوا وادم بين الروح والجسد- (ترمذي)
র্অথাৎ, হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) বলনে, সাহাবায়ে করোম আরয করলনে, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখন থকেে আপনি নবুওয়াতরে মর্যাদায় অভিষিক্ত হন? তদুত্তরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তখন থেকেও নবী যখন আদম আ. এর রূহ শরীর থেকে আলাদা ছিল। অর্থাৎ, যখন আদম (আ.) সৃষ্টি হননি।
৩। আলমে আরওয়াহে যখন আল্লাহপাক বনী আদমের রূহ থেকে নিজ স্বীকারোক্তি গ্রহণস্বরূপ الست بربكم (আমি কি তোমাদের রব নই) বলে প্রশ্ন করেছিলেন তখন রূহ জগতে সেই বরকতময় অনুষ্ঠানে সব রূহের আগে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম بلي (হ্যাঁ) বলে উত্তর দিয়েছেন। বাকী রূহ পরবর্তীতে بلي (হ্যাঁ) বলেছিল। উপরোক্ত তিনটি বিষয়ে প্রতীয়মান হয় যে, রুহ জগতে আল্লাহপাক তাঁর হাবীবের মর্যাদা প্রকাশের জন্য কুদরতিভাবে ব্যবস্থা করেছিলেন।

আদম (আ.) থেকে নবীজির জন্মের পূর্ব পর্যন্ত সংগঠিত ঘটনাবলি
মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম (আ.) থেকে নবীজির জন্মের পূর্ব পর্যন্ত যতো নবী-রাসূল, জ্ঞানী-গুণী ও বিজ্ঞজনের আগমন ঘটেছে সকলেই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন।

নিম্নে প্রসঙ্গে কয়েকটি ঘটনার বর্ণনার প্রতি আলোকপাত করা হলো:
১। ইবরাহীম (আ.) এর দুআ: হযরত ইবরাহীম (আ.) যখন তাঁর শিশু পুত্র ইসমাইল (আ.) কে কুরবানী দেওয়ার মতো কঠিন, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন, তখন আল্লাহর ইবাদতের জন্য হযরত আদম (আ.) কতৃক নির্মিত সর্বপ্রথম ঘর কা’বা শরীফ, যা নূহ (আ:) এর প্লাবনের প্রক্কালে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল তা পুননির্মাণের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হন। জিবরাঈল (আ.) পূর্বস্থিত কা’বা শরীফের অবস্থান ও মূল ভিত্তি দেখিয়ে দিলেন। ইবরাহীম (আ.) ইসমাঈল (আ.) কে নিয়ে কা’বা শরীফ পুননির্মাণ করেন। বিনায়ে কা’বা বা কা’বা শরীফ নির্মাণ ছিল নবীজির আগমনের ইঙ্গিতবাহী একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কা’বা শরীফ নির্মাণের পর ইবরাহীম (আ.) দুআ করেছিলেন-
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنتَ العَزِيزُ الحَكِيمُ – )سورة البقرة)
-হে আমাদের প্রতিপালক, তাদের মধ্য হতে (মক্কাবাসী) তাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করো, যিনি তোমার আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করবেন তাদেরকে কিতাবও হিকামত শিক্ষা দিবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
এ দুআটি থেকে প্রত্যক্ষভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মক্কা নগরীতে বনী ইসমাঈল থেকে সর্বশেষ নবী আভির্ভূত হবেন। আর তা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমনের প্রতি প্রত্যক্ষ ইঙ্গিত বহন করেছিল।
২। হিমইয়ারের বাদশাহ তুব্বা এর ঘটনা
তুব্বা হিময়ারি তার দলবল, সৈন্য সামন্ত ও সে যুগের কয়েকজন আলিমদের নিয়ে মক্কায় আগমন করেছিলেন। কিন্তু মক্কাবাসী তাঁকে সমাদর করেনি বা কোনো প্রকার অভ্যর্থনা জানায়নি। বাদশাহ তার কারণ হিসেবে জানতে পারলেন যে, মক্কাবাসী কা’বা শরীফের পরিচর্যা ও তাদের মূর্তিগুলোর অর্চনায় ব্যস্ত থাকার কারণে তারা তুব্বা এর অভ্যর্থনায় আসতে পারেনি। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে কা’বা শরীফ ধ্বংস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তার সঙ্গী আলিমগণ এ বলে নিষেধ করলেন, এ ঘরটি (কা’বা শরীফ) আল্লাহর ঘর, যারা এ ঘরের অবমাননা করবে তাদের বংশ বুনিয়াদ ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন বাদশাহ চাইলেন মক্কাবাসী যে মূর্তিগুলোর পূজা করছে, সেগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে। তাও আলিমগণ এই বলে বারণ করলেন যে, যার হাতে এ প্রতিমাগুলো ধ্বংস করা হবে, তিনি এখনো দুনিয়া আসেননি। আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মূর্তিগুলো ধ্বংস করবেন। আপনার দ্বারা তা সম্ভব হবে না। পরক্ষণে তিনি মক্কায় সমস্ত লোককে হত্যা করার মনস্ত করলেন, এতেও আলিমগণ নিষেধ করলেন। কারণ মক্কাবাসীদের মধ্যেই নবীপাক জন্মগ্রহণ করবেন, যদি তাদের হত্যা করা হয় তবে নবীর পিতৃপুরুষের বংশধারা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বাদশাহ আলেমগণকে বললেন আমি কা’বা শরীফের সাথে কী ব্যবহার করতে পারি? তখন তারা বললেন, আপনি কা’বা শরীফের তাওয়াফ করুন।
এর পরই তুব্বা স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে কা’বা শরীফের গিলাফ পরিয়েছিলেন। তাই বলা হয়-
اول من كسى الكعبة التبع الحميري-
তুব্বা হিমইয়ারী আলিমগণের কাছ থেকে নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনা শুনে নবী প্রেমে আসক্ত হয়ে তাঁর হিজরতস্থল মদীনা দিকে রওয়ানা হন। মদীনায় পৌঁছে তিনি মসজিদে নববী ও আবূ আইয়ুব আনসারীর বাড়ির জায়গা খরিদ করে সেখানে আবূ আইয়ুব আনসারী (রা.) এর পিতৃপুরুষদের আবাসন দিয়ে স্বর্ণের ফলকে নবীজির প্রতি ঈমান ও শাফাআতের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করে একটি পত্র লিখে রেখে যান। যা বংশ পরম্পরায় আবূ আইয়ুব আনসারী (রা.) পর্যন্ত পৌঁছে ছিলো এবং তিনিই নবীজির দস্ত মুবারকে বাদশাহ তুব্বা এর পত্রখানা হস্তান্তর করেছিলেন।
হিময়ারের বাদশাহ তুব্বা এর এ ঘটনাটি নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুনিয়ায় শুভাগমনের পূর্বাভাসের স্বাক্ষর বহন করে।

৩। হযরত ঈসা (আ.) এর সুসংবাদ
হযরত ঈসা (আ.) তাঁর কওম বনী ইসরাইল কে নিজের রিসালতের ঘোষণা দেয়ার প্রাক্কালে নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের সুসংবাদ প্রদান করেন। পবিত্র কুরআনে এ ঘটনা নিম্নে বর্ণিত হয়েছে-
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّراً بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُّ- فَلَمَّا جَاءهُم بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ – )سورة الصف)
-স্মরণ করুন, মারইয়াম-তনয় ঈসা (আ.) বলেছিলেন, হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সমর্থক এবং আমার পরে আহমদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তার সুসংবাদদাতা। পরে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ তাদের নিকট আসলো, তখন তারা বলতে লাগলো এ তো এক স্পষ্ট যাদু।
প্রসঙ্গত বলা যায়, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র নাম আহমদ ছিল। কোনো বর্ণনা মতে, সে যুগে কোনো ব্যক্তির নাম আহমদ রাখা হয়নি।

৪। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতৃপুরুষদের সুসংবাদ
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতৃপুরুষের সকলেই নিজ নিজ যুগের সর্বাপেক্ষা বিচক্ষণ, বিজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী এবং নেতৃত্বের উপযুক্ত ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যারা নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন। তাদের সকলেরই ললাটে নূরে মুহাম্মাদীর চমক একটি বিস্ময়কর বিষয় ছিল। তাদের কারো পৃষ্ঠদেশে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তালবিয়াহ পাঠের বিবরণ পাওয়া যায়। যেমন নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন ঊর্ধ্বতন পিতৃপুরুষ ইলিয়াসের পৃষ্ঠদেশে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আল্লাহর যিকির ও তালবিয়াহ পাঠের শব্দ শুনা যেতো।
وسمع في صلبه (الياس) النبي الاكرم صلي الله عليه وسلم ذكر الله تعالٰي ولباه-

৫। যমযম কুপ পুনঃখনন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভাগমনের একটি পূর্বাভাষ
হযরত ইসমাইল (আ.) ও স্বীয় পুণ্যবতী মাতা বিবি হাজেরা (আ.) এর কারামত হিসেবে কুদরতিভাবে প্রবাহিত যমযম ক‚প। কুরায়শ ও যুরহম গোত্রের লোকেরা এ কুপ থেকে পানি সরবরাহ করতো। কুরায়শ ও যুরহমের মধ্যকার বিবাদে যুরহম গোত্র মক্কা শরীফ ত্যাগে বাধ্য হয়। তারা মক্কা শরীফ থেকে চলে যাওয়ার সময় কা’বা শরীফে রক্ষিত মূল্যবান সম্পদগুলো যমযম কুপে ফেলে দেয়। ফলে কুপটি একবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। বহুদিন পর্যন্ত যমযম কুপ নাম নিশানাহীন অবস্থায় থাকে।
যমযমের পানির পবিত্রতা ও উপকারিতা ঘোষণাকারী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। যার মাধ্যমে প্রচারিত দ্বীন ইসলামের বিধান হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজীগণ কা’বা তওয়াফে আসবে। তাদের পানীয়ের সুব্যবস্থা প্রয়োজন, তাই আল্লাহ তাআলা যমযম কুপ পুনখননের ব্যবস্থা করলেন। আর এ গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব পড়লো নবীজির দাদা আবদুল মুত্তালিবের ওপর।
যমযম কুপ খননের জন্য আবদুল মুত্তালিব স্বপ্নে আদিষ্ট হন। পরপর তিনি চার দিন স্বপ্নে দেখেন তিনি হাতীমে কা’বায় ঘুমন্ত ছিলেন, কে যেনো এসে বললো احفر البرة (তুমি বাররাহ খনন করো)। তিনি বলেন বাররাহ কী? লোকটি চলে গেলো। দ্বিতীয় দিন একই অবস্থা স্বপ্নে দেখেন একজন এসে বলছে احفر المضنونه (তুমি মাদ্বনুনা খনন করো)। তিনি বলেন, মাদ্বনুনা কী? লোকটি চলে গেলো। তৃতীয় দিন একই অবস্থা স্বপ্নে দেখেন কে যেনো এসে বললো احفر طيبه (তুমি তাইয়্যিবা খনন করো)। তিনি বললেন, তাইয়্যিবা কী? লোকটি চলে গেলো। চতুর্থ দিন একই জায়গায় স্বপ্নে দেখেন, সেই আগের দিনের লোকটি এসে বলছে احفر زمزم (তুমি যমযম খনন করো)। তিনি বললেন, যমযম কী? তখন লোকটি বললো, এটি এমন একটি কুপ যার পানি কখনো শুকায়না বা কমও হয়না। যা থেকে অগণিত হাজী পানি পান করবেন।
এরপর ঐ ব্যক্তি যমযম কুপের অবস্থান ও নিদর্শন দেখিয়ে এখানে খননের জন্য বলে যান। উল্লেখ্য যে বাররাহ, মাদ্বনুনা, তাইয়্যেবা এগুলো যমযম কুপের বিভিন্ন নাম বা উপাধি।

৪। আসহাবে ফীল বা আবরাহা বাহিনীর ঘটনা
বাদশাহ আবরাহা ইয়ামনের রাজধানী সানআ’য় একটি সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণ করে এ ইচ্ছা পোষণ করে যে, মানুষ কা’বা শরীফের তাওয়াফ ছেড়ে দিয়ে যেন তাঁর এ ঘরের তাওয়াফ করে। এতদ্বশ্রবণে মক্কাবাসী চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়। মক্কার জনৈক ব্যক্তি আবরাহার ঐ গীর্জায় মল-মূত্র ত্যাগ করে। কোনো বর্ণনায় আছে, আরব যুবকরা ঐ গীর্জার পার্শ্বে আগুন জ্বালায় এবং স্ফূলিঙ্গ গিয়ে তার গীর্জায় পড়ে এবং তা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে আবরাহা ক্রোধান্বিত হয়ে কা’বা শরীফ ধ্বংস করার মানসে বিশাল হস্তিবাহিনী নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হয়। মক্কার অদূরে অবস্থান নেয়। যখনই সে হাতি বাহিনী নিয়ে কা’বার দিকে অগ্রসর হয় তখন আল্লাহ পাক পাখি (আবাবীল) দ্বারা তাকে ও তার বাহিনীকে ধ্বংস করে দেন। পবিত্র কুরআনে সূরা ফীলের মধ্যে এ ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি খুবই প্রসিদ্ধ আসহাবে ফীল বা আবরাহা বাহিনীর ধ্বংস হওয়া, পবিত্র কা’বা শরীফ ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পাওয়া ও কুরায়শদের জয় লাভ করা নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় শুভাগমনের একটি পূর্বাভাস হিসেবে পরিগণিত। এ ঘটনার ৫০ দিন মতান্তরে ৫৫ দিন পর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় তাশরীফ আনেন। তাফসীরে বায়যাভীতে আছে,
لان المراد تذكير ما فيها من وجوه الدلالة علي كمال علم الله تعالى و قدرته وعزة بيته وشرف رسوله عليه الصلاة والسلام فانها من الارهاصات (بيضاوي ২/৭১৬)

জন্মকালীন অলৌকিক ঘটনাবলি
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভ জন্মকালে অনেক অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়। মাতৃগর্ভে থাকাকালে মা আমিনা অনেক শুভ স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নযোগে তাঁকে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র নাম মুবারক বলে দেয়া হয়। এমনকি এও বলা হয় যে, হে আমিনা তোমার গর্ভে আমানত রয়েছেন দু’জাহানের সরদার ও সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আরবে বহুদিন ধরে দুর্ভিক্ষ চলে আসছিল। অনাবৃষ্টি ও খাদ্যাভাবে আরবের সর্বত্রই হাহাকার চলছিল। নবীজির বরকতময় জন্মের বছর আরবের গাছপালা ফলে-ফুলে, পত্র-পল্লবে ভরপুর হয়ে উঠে। দুর্ভিক্ষ কাটিয়ে আরবে এক শুভ দিগন্তের সূচনা হয়। আরবের ঘরে ঘরে আনন্দের লহর বইতে থাকে। যেহেতু এ বছর কুরায়শরা আবরাহার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিল এবং দুর্ভিক্ষ থেকে পরিত্রাণ পেয়েছিল, তাই নবীজির শুভজন্মের এ বছর কে তারা ‘সানাতুল ফাত্হ ওয়াল ইবতিহাজ’ (বিজয় ও আনন্দের বছর) হিসেবে নামকরণ করেছিল।
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মগ্রহণ মুহূর্তে বিবি আমিনার গৃহ এক স্বর্গীয় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিলো যার দ্বারা সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ দৃশ্যমান হয়ে উঠে। আকাশের তারকারাজি জমিনের দিকে নিম্মমুখী হয়ে ঝুঁকে পড়েছিল। কা’বা ঘরে সাজানো মূর্তিগুলো উপুড় হয়ে পড়েছিল। জিনেরা অদৃশ্য থেকে নবীজির আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিল।
মক্কা নগরীতে ব্যবসা উপলক্ষে অবস্থানরত এক ইয়াহুদী কুরায়শদেরকে ঐ দিন বলেছিল আজ কি তোমাদের ঘরে কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করেছেন? অবশেষে সে নবীজিকে খুঁজে বের করলো। মহরে নবুওয়াত দেখে তাতে চুমু খেয়ে বেহুশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল এবং আফসোস করে বলেছিলো আজ থেকে বনী ইসরাঈল থেকে নবুওয়াতের ধারা বন্ধ হয়ে গেল।
উল্লেখ্য, তারকারাজির নিম্মমুখী হয়ে ঝুঁকে পড়ার দ্বারা এই ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে যে, অচিরেই পৃথিবী থেকে কুফর ও শিরকের অমানিশা দূরীভূত হবে এবং হিদায়াতের উজ্জ্বল আলোকে এ ধরাধাম আলোকিত হয়ে উঠবে।
তাছাড়া উজ্জ্বল আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ দৃশ্যমান হয়ে যাওয়া এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, মক্কা হতে সিরিয়া পর্যন্ত সমগ্র এলাকা তাঁর জীবদ্দশায়ই ইসলামের পতাকাতলে এসে যাবে। বাস্তবেই তাই হয়েছে।
সীরাত গ্রন্থসমূহে দলীল প্রমাণসহ এরূপ অনেক অলৌকিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো না। তবে নিম্নে একটি অলৌকিক ঘটনার প্রতি একটু বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কিসরা রাজ প্রাসাদে ১৪টি গম্বুজের অবলোকন এবং সাওয়াহ নদীর শুকিয়ে যাওয়া ও প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ড নিভে যাওয়া
যে পুণ্য রজনীতে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ পৃথিবীতে শুভাগমন ঘটে সে রাতেই পারস্য সম্রাট কিসরা রাজপ্রাসাদে ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়। যার ফলে রাজপ্রাসাদের চৌদ্দটি স্বর্ণ চূড়া ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায়। হাজার বছর ধরে বিরতিহীনভাবে প্রজ্জ¦লিত পারস্যের অগ্নিকুন্ড সেই শুভ মুহূর্তে ধপ করে নিভে যায়। যথারীতি প্রবাহমান সাওয়াহ নদী নবীজির আগমন মুহূর্তে হঠাৎ করে শুকিয়ে যায়।
রাত নিশীথে রাজপ্রাসাদে ভূমিকম্প ও চৌদ্দটি স্বর্ণচূড়ার অবলোকন এই আকষ্মিক ঘটনায় পারস্য সম্রাট ঘাবড়ে যান এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। হঠাৎ করে প্রজ্জ¦লিত অগ্নিকুন্ড নিভে যাওয়ায় রাজার দুশ্চিন্তার মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। তাছাড়া রাজা ঐ রাত্রে একটি স্বপ্ন দেখেন যে, একটি শক্তিশালী উট আরবী ঘোড়ার পাল টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং দজলা নদী অতিক্রম করে সমগ্র আরব ভূমিতে ছুটতে লাগল। রাতে রাজপ্রাসাদের বিপর্যয় ও তার স্বপ্নের বিষয়ে রাজপন্ডিতের সাথে মত বিনিময় করলে রাজপন্ডিত জানান, সম্ভবত আরবের দিক থেকে কোনো মহামানবের অভ্যূদয়-আগমন ঘটতে পারে। অজানা আতঙ্কে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ পারস্যরাজ নুমান ইবনে মুনযিরকে লিখে পাঠান আমার নিকট কোনো মহাপন্ডিত অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রেরণ করো, যে আমাকে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করবে। নুমান ইবনে মুনযির আবদুল মসীহ গাসসানী নামক এক পন্ডিতকে পারস্য রাজার নিকট পাঠান। রাজা আবদুল মসীহ গাসসানীকে রাজ প্রাসাদের দুরাবস্থা, অগ্নিকুন্ড নিভে যাওয়া ও তার স্বপ্নের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থানরত আমার মামা সতীহ এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। রাজা আবদুল মসীহকে বললেন, তুমি নিজে গিয়ে তাড়াতাড়ি সতীহের কাছ থেকে বিষয়গুলোর সঠিক ব্যাখ্যা নিয়ে আসো। আবদুল মসীহ দ্রুতগামী উটে চড়ে সিরিয়ায় সতীহের নিকট উপস্থিত হন। তখন সতীহ মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন, তবে জ্ঞান বুদ্ধি ছিল। আবদুল মসীহ তার আগমনের বিষয়টি কবিতা আকারে শুনান। কবিতা শুনে সতীহ আবদুল মসীহ কে বললেন, তুমি এমন সময় এসেছো যখন আমি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। তবে হে আবদুল মসীহ, মনযোগ দিয়ে শুনো! যখন আল্লাহ্র কালাম অধিক হারে হতে থাকবে, সামওয়াহ উপত্যকা প্লাবিত হয়ে যাবে, সাওয়াহ নদী শুকিয়ে যাবে আর পারস্যের হাজার বছরের অগ্নিকুন্ড নিভে যাবে, তখন সতীহের জন্য সিরিয়া আর সিরিয়া থাকবে না। অর্থাৎ আমি সতীহের আর কোনো মান-সম্মান থাকবে না, বিলীন হয়ে যাবে। সাসান গোত্রের চৌদ্দজন (ভূলুণ্ঠিত গম্বুজের সমপরিমাণ) বাদশাহী করবে। এরপর তাদের শাসনের অবসান ঘটবে। হে আবদুল মসীহ, ধরে নাও এ সময় এসে গেছে।

Source: https://tasneembd.org/%e0%a6%a8%e0%a6%ac%e0%a7%80-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%ae-%e0%a6%b8%e0%a6%be-%e0%a6%8f%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%aa%e0%a7%82%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%85/
« Last Edit: October 19, 2022, 04:34:04 PM by Kakuly Akter »
Khan Ehsanul Hoque

Daffodil International University
01847334702
fd@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd