প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা বিপদের কারণ
আমাদের জীবনটা যেন প্রতিযোগিতাময়। সম্পদের প্রতিযোগিতা, টাকা-পয়সার প্রতিযোগিতা, বাড়ি-গাড়ির প্রতিযোগিতা। আমরা প্রতিযোগিতা করি, একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার, একে অন্যের চেয়ে বড় হওয়ার, একে অন্যের চেয়ে উঁচুতে যাওয়ার।
অমুকে এক কোটি টাকার মালিক, আমি তো একহাজার টাকার মালিকও নই। অমুকে দশতলা ভবনের মালিক, আমার তো একতলা ভবনও নেই। অমুকের ছেলে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে, আমার ছেলে কেন হতে পারল না? অমুকের মেয়ে গানের প্রতিযোগিতায় সেরা পুরস্কার জিতেছে, আমার মেয়ে কেন বাছাই পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ল? এসব নিয়ে আমরা ভাবতে ভাবতে রাতের ঘুম হারাম করে ফেলি। বিচ্যুত হয়ে পড়ি আমাদের জীবনের আসল উদ্দেশ্য থেকে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে, (পরকাল থেকে) যতক্ষণ না তোমরা কবরে যাও।’ (সূরা তাকাসুর : ১-২)
প্রাচুর্য দ্বারা উদ্দেশ্য ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, সন্তানসন্ততি, ক্ষমতা ইত্যাদির প্রতিযোগিতা। এগুলো আমাদের ভুলিয়ে রেখেছে। গাফিল করে রেখেছে আখিরাত থেকে। আমাদের জন্য অন্য একটা জগৎ অপেক্ষা করছে এবং সেখানে জবাবদিহিতার একটি মঞ্চ অপেক্ষা করে আছে-তা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। অথচ আল্লাহতায়ালা আমাদের এসব প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের সন্তান ও সম্পদ যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ হতে গাফিল করে না দেয়’ (সূরা মুনাফিকুন : ৯)।
চলার জন্য অর্থকড়ির প্রয়োজন রয়েছে। অর্থ না থাকলে চলা যে কত কঠিন তা বলার অপেক্ষা রাখে না! তবে এ অর্থের কারণে অনেক সময় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। ভুগতে হয় নানা মুসিবতে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক উম্মতের জন্যই একটি পরীক্ষার বস্তু থাকে, আর আমার উম্মতের পরীক্ষার বস্তু হচ্ছে অর্থ-সম্পদ।’ (সুনানে তিরমিজি : ২৩৩৬)।
অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্র্যের ভয় করি না। কিন্তু তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, তোমাদের ওপর দুনিয়া এরূপ প্রসারিত হয়ে পড়বে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে।’ (সহিহ বুখারি : ৩১৫৮)।
ধন-সম্পদের প্রতি অত্যধিক লোভ দ্বীনকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর এ ক্ষতি নেকড়ের ছাগলের পালের ওপর আক্রমণের চেয়েও ভয়াবহ। এ অর্থেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এই বাণী-দুটি ক্ষুধার্ত বাঘ কোনো ছাগলের পালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে যে ক্ষতি করে, তার চেয়েও ক্ষতিকারক হলো কোনো ব্যক্তির ধন-সম্পদ এবং প্রতাপ-প্রতিপত্তির প্রতি অত্যধিক মোহ।’ (সুনানে তিরমিজি : ২৩৭৬)।
তবে ইসলামে বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই। বৈধভাবে উপার্জন করাও একটি ইবাদত। কেননা নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ ইসলামে যত বিধিবিধান আছে, সবই যথার্থভাবে পালনের জন্য সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তা ছাড়া জীবনের সীমাহীন প্রয়োজন পূরণে অর্থের যে চাহিদা রয়েছে, ইসলাম কখনো তা অস্বীকার করে না। তবে পরকালের অনন্ত অসীম জীবনের কথা ভুলে কেবল দুনিয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতে নিষেধ করেছে ইসলাম। আল্লাহ আমাদের বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন।
Source: https://www.jugantor.com/todays-paper/features/islam-and-life/607646/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3