‘তোমরা সাহ্‌রি খাও, যদি তা এক ঢোঁক পানিও হয়’

Author Topic: ‘তোমরা সাহ্‌রি খাও, যদি তা এক ঢোঁক পানিও হয়’  (Read 440 times)

Offline Khan Ehsanul Hoque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 549
  • Test
    • View Profile
‘তোমরা সাহ্‌রি খাও, যদি তা এক ঢোঁক পানিও হয়’

পবিত্র রমজানের অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রথম অনুষঙ্গটি হলো সাহ্‌রি। সাহ্‌রি শব্দের অর্থ শেষরাতের খাবার। ইসলামি পরিভাষায় রোজা বা সাওম পালনের উদ্দেশ্যে ভোররাতে সুবহে সাদিকের আগে যে আহার গ্রহণ করা হয়, তা–ই সাহ্‌রি। সাহ্‌রি একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ সুন্নত। ইসলামি বিধানগুলো সহজ, সাবলীল, যৌক্তিক ও মানবিক। আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন, ‘আল্লাহ কোনো সত্তাকে তার সামর্থ্যের বেশি দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৮৬)

আগের যুগের উম্মতের প্রতিও রোজার বিধান ছিল; কিন্তু সেখানে সাহ্‌রির বিধান ছিল না। ওই সময় নিয়ম ছিল—সন্ধ্যারাতে এশার ওয়াক্তের মধ্যে ঘুমানোর আগেই পানাহার শেষ করতে হতো। ইসলামের প্রথম যুগে এই নিয়ম বিদ্যমান ছিল। সাহাবি হজরত বারা ইবনে আজেব (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত কয়েস ইবনে সারমাহ আনসারি (রা.) সারা দিন পরিশ্রমের পর ইফতার করে আহারের আগেই ঘুমিয়ে পড়েন এবং পরদিন রোজা রেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এই বিষয়টি নবী করিম (সা.)–এর সমীপে পেশ করা হলে সাহ্‌রির নতুন বিধানসংবলিত আয়াত নাজিল হয়। ‘সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী মিলন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদস্বরূপ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদস্বরূপ। আল্লাহ জানেন যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে।

অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হলেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, তা কামনা করো। আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা হতে উষার শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।

তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সঙ্গে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ তাঁর বিধানাবলি মানবজাতির জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা মুত্তাকি হতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭; তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১০৯-১২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন; তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, পৃষ্ঠা: ৯৪-৯৬, সৌদি সংস্করণ)

তাকওয়া অর্জন এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য সাহ্‌রির গুরুত্ব অপরিসীম। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহ্‌রি খাও, কেননা সাহ্‌রিতে রয়েছে বরকত।’ (বুখারি, হাদিস: ১৮০১) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আমাদের রোজা আর আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহ্‌রি খাওয়া আর না খাওয়া।’ (মুসলিম, আলফিয়াতুল হাদিস, পৃষ্ঠা: ১৩১)

‘সাহ্‌রির সময় শুরু হয় অর্ধরাত্রির পর থেকে।’ (মোল্লা আলী কারি, মিরকাত শরহে মিশকাত)। ইমাম জামাখশারি (রহ.) ও ফকিহ আবুল লাইস ছমরকন্দি (রহ.)–এর মতে সাহ্‌রির সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সাহ্‌রি বিলম্বে খাওয়া সুন্নত। তবে সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না, তার আগেই সাহ্‌রির নিরাপদ সময়সীমার মধ্যে পানাহার শেষ করতে হবে।

রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহ্‌রি খাও, যদি তা এক ঢোঁক পানিও হয়।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা সাহ্‌রি খাও, যদি এক লোকমা খাদ্যও হয়।’ (মুসলিম) অর্থাৎ যেকোনো প্রকার ও যেকোনো পরিমাণ খাদ্য বা পানীয় দ্বারাই সাহ্‌রির সুন্নত পালন হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে সাহ্‌রি না করলে সুন্নত তরক হবে।

যদি কখনো এমন হয় যে ফরজ গোসল করে সাহ্‌রি খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় না থাকে; তখন অজু করে বা হাত–মুখ ধুয়ে আগে সাহ্‌রি খেয়ে নিতে হবে। তারপর গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ, সাহ্‌রি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয় বরং সুন্নত; আর নামাজ আদায় করার জন্য পবিত্রতা ফরজ।

Source: https://www.prothomalo.com/opinion/column/cmmxaq3awv
Khan Ehsanul Hoque

Daffodil International University
01847334702
fd@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd