নবিজি যেভাবে রমজান কাটাতেন

Author Topic: নবিজি যেভাবে রমজান কাটাতেন  (Read 436 times)

Offline Khan Ehsanul Hoque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 549
  • Test
    • View Profile
নবিজি যেভাবে রমজান কাটাতেন

রমজান মাস ঘিরে মুমিনের মনোহৃদয় নতুন সাজে সজ্জিত হয়, চোখের তারায় চিরসবুজ জান্নাতের ছবি ফুটে ওঠে। শুদ্ধতা আর শুভ্রতার ফুল ফোটে মুমিনের হৃদবাগে। আকুলপ্রাণে অনেকেই জানতে চায়-আচ্ছা! কেমন ছিল আমাদের প্রিয় নবিজির রমজান? কীভাবে কেটেছিল তার দিনরাত? রমজানে প্রিয় নবি (সা.) যেভাবে রমজান কাটাতেন তার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন- ইসমাঈল সিদ্দিকী

নবিজির সেহরি

সাদাসিধে ও সরল জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন আমাদের প্রিয় নবিজি। জীবনে সবকিছুতেই তিনি ছিলেন অনাড়ম্বর। সীমাহীন প্রাচুর্যের হাতছানি উপেক্ষা করে তিনি বেছে নিয়েছিলেন সাধারণ জীবন। খাবারের ব্যাপারেও ছিল এ সারল্যের ছাপ। তিনি সাধারণ খাবার দিয়ে সেহরি করতেন। ঘরে যখন যা থাকত তাই সেহরি হিসাবে গ্রহণ করতেন। সেহরির খাবার হিসাবে তার বিশেষ কোনো পছন্দের কথা জানা যায় না। তবে হ্যাঁ, তিনি অন্য সব সময়ের মতো সেহরিতেও খেজুর পছন্দ করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘উত্তম সেহরি খেজুর এবং উত্তম তরকারি সিরকা। আল্লাহতায়ালা সেহরি গ্রহণকারীদের প্রতি দয়া করুন।’ কানজুল উম্মাল : ২৩৯৮৩।

নবি কারিম (সা.) সেহরি খেতেন রাতের শেষ ভাগে সুবহে সাদিকের আগ মুহূর্তে। হজরত যায়েদ বিন সাবেত (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে সেহরি খেতাম, এরপর তিনি সালাতের জন্য দাঁড়াতেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ফজরের আজান ও সেহরির মাঝে কতটুকু ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত (পাঠ করা) পরিমাণ। (বুখারি, হাদিস : ১৯২১)।

রমজানের দিন

সেহরির পর যখন ফজরের আজান হতো, নবি কারিম (সা.) নামাজ আদায় করে নিতেন। দিনের আলো ফুটলে সাহাবিদের রমজান ও রোজাসংক্রান্ত মাসআলা শিক্ষা দিতেন। হজরত লাকিত বিন সাবিরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি কারিম (সা.) বলেন, তোমরা ভালোভাবে নাকে পানি পৌঁছাও, তবে রোজা অবস্থায় নয়। অর্থাৎ রোজা অবস্থায় হালকাভাবে পানি পৌঁছাও, অতিরঞ্জন করো না। (আবু দাউদ ২৩৬৩)। সাহাবিদের রমজান সম্পর্কে সতর্কবাণীও শোনাতেন। যেমন আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূল (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি ধুলোয় ধূসরিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লিখিত হলো; কিন্তু সে আমার ওপর দরুদ পাঠ করেনি। ওই ব্যক্তি ধুলোয় ধূসরিত হোক, যার কাছে রমজান মাস এলো অথচ তার গুনাহ মাফ হওয়ার আগেই তা অতিবাহিত হয়ে গেল। ওই ব্যক্তি ধুলোয় ধূসরিত হোক, যার কাছে তার বাবা-মা বৃদ্ধে উপনীত হলো; কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করায়নি (সে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে জান্নাত অর্জন করেনি)। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)।

ইফতার

রোজাদারের জন্য ইফতার বড় আনন্দের। ইফতার সারা দিনের রোজার ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে মনে অপার্থিব আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে আসে। রোজাদার কেমন আনন্দানুভব করে তা কেবল যারা রোজা রাখে তারাই অনুধাবন করতে পারেন। হাদিসে বলা হয়েছে, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ-একটি ইফতারের সময় ও অপরটি যখন আল্লাহর সঙ্গে মিলবে তখন। (বুখারি, ১৯০৪)। স্বাভাবিকতই ইফতারে খেজুর অত্যন্ত উপযোগী উপকরণ। এটি শর্করা ও পুষ্টি উপাদানের উৎস হিসাবে কাজ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা রাসূল (সা.)-এর অভ্যাস ছিল। আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘নবি (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (সুনানে তিরমিজি; রোজা অধ্যায় : ৬৩২)। অনতিবিলম্বে ইফতার করা মহানবি (সা.)-এর সুন্নত। রাসূল (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিস থেকে ও সাহাবিদের আমল থেকে এমনটাই প্রমাণ হয়। সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘যতদিন মানুষ অনতিবিলম্বে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি, ১৮২১)।

তাহাজ্জুদ

রাসূল (সা.) সব সময় তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। রমজানে তাহাজ্জুদের নামাজে আরও বেশি মগ্ন হয়ে যেতেন। রমজানে কখনো তার তাহাজ্জুদ ছুটত না। রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদের জন্য তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) রমজান মাসে ও অন্য সব মাসের রাতে ১১ রাকাতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন। এ চার রাকাত আদায়ের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর তিন রাকাত আদায় করতেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি বেতর নামাজ আদায়ের আগে ঘুমিয়ে পড়েন? নবি (সা.) বললেন, আমার চোখ ঘুমায়, আমার অন্তর ঘুমায় না।’ (বুখারি : ৩৫৬৯)।

তারাবি

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রমজানের দিবসের রোজাকে ফরজ করেছেন। আর তার হাবিব (সা.) ‘কিয়ামে রমজান’-এর ঘোষণার মাধ্যমে তারাবির মতো মূল্যবান এ তোহফা দান করেছেন। তারাবিতে কালামুল্লাহ সঙ্গে বান্দার বিশেষ সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং এর মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ হয়। নবিজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও সওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে কিয়ামে রমজান আদায় করবে তার বিগত গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি, ২০০৯)।

দান-সদকা

ইসলামে দান-সদকা ও অন্যকে সহযোগিতার গুরুত্ব অনেক বেশি। আর রমজানে দানের গুরুত্ব আরও বেশি। এ মাসকে দানের মাস বলা হয়, কেননা এ মাসে একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজের সমান সওয়াব। আর একটি ফরজ ইবাদত করলে ৭০টি ফরজের সওয়াব দেওয়া হয়। প্রিয় নবিজি (সা.) স্বভাবগতভাবেই মানবকুলের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ছিলেন। রমজান মাস এলে তার দানের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যেত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। রমজান মাসে জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে কল্যাণবহ মুক্ত বায়ুর চেয়েও বেশি দানশীল হয়ে যেতেন। (বুখারি, ৩২২০)।

কুরআন তেলাওয়াত

নবি কারিম (সা.) সব সময়ই কুরআন তেলাওয়াত করতেন। কয়েকটি প্রিয় জিনিসের মধ্যে কুরআন মাজিদের তেলাওয়াত ছিল অন্যতম। আর রমজান এলে তিনি তেলাওয়াত আরও বাড়িয়ে দিতেন। কারণ রমজান মাসেই আল্লাহতায়ালা কুরআন নাজিল করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য হেদায়েতের দিশারী, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। অতএব, তোমাদের যে এ মাস লাভ করবে, সে যেন তাতে অবশ্যই রোজা রাখে। বাকারা (২) : ১৮৫ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজান এলে প্রতি রাতে নবিজি (সা.)-এর কাছে জিবরাইল (আ.) আগমন করতেন। একে অপরকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন।’ (বুখারি : ৩৫৫৪)।

ইতেকাফ

ইতেকাফ তাকওয়া অর্জনের বড় মাধ্যম। নির্জনতায় প্রভুকে স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায়। প্রভুর দরবারে নিজেকে মেলে ধরার অবারিত সুযোগ। নবিজি প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। আম্মাজান হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন, নবি কারিম (সা.) ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। নবিজির পর তার স্ত্রীরাও ইতেকাফ করতেন। (সহিহ মুসলিম, ১১৭২)।

Source: https://www.jugantor.com/todays-paper/features/islam-and-life/660348/%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%A8
Khan Ehsanul Hoque

Daffodil International University
01847334702
fd@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd