ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার জাকাত

Author Topic: ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার জাকাত  (Read 515 times)

Offline Khan Ehsanul Hoque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 549
  • Test
    • View Profile
ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার জাকাত

ইসলামের অন্যতম ফরজ ইবাদত জাকাত। সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে জাকাতের বিকল্প নেই। ধনীদের উদ্বৃত্ত সম্পদ থেকে অভাবীদের জন্য একটি অংশ আল্লাহতায়ালাই নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

জাকাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে

ইসলাম ধর্ম যে পাঁচটি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার তৃতীয়টি হলো জাকাত। নামাজের পরই কুরআনে জাকাতের কথা বলেছেন আল্লাহতায়ালা। এ ক্রমবিন্যাসের একটি তাৎপর্য এ রকম হতে পারে-ইমানদার নামাজি ব্যক্তির অলস বসে থাকার সুযোগ নেই। আগামী এক বছরে সে নিজে সাবলম্বী হবে এবং সমাজের দুস্থ-অসহায় মানুষকে সাবলম্বী করার ব্রত গ্রহণ করবে। সংক্ষেপে এই হলো জাকাতের মর্মকথা। মুজামুল ওয়াসিত প্রণেতার মতে, জাকাত শব্দের অর্থ ক্রমশ বাড়তে থাকা ও পরিমাণে বেশি হওয়া, প্রবৃদ্ধি লাভ করা, পরিচ্ছন্ন হওয়া, পবিত্র ও শুদ্ধ হওয়া। বিখ্যাত আরবি অভিধান লিসানুল আরবের লেখক বলেন, ‘জাকাত অর্থ পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ও প্রশংসা। এ চারটি অর্থেই কুরআন ও হাদিসে জাকাত শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়।’ জাকাত শব্দের ভেতর দুটি অর্থ পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে, অনবরত বাড়তে থাকা। আরেকটি হচ্ছে শুদ্ধ ও পবিত্র হওয়া। আরবি ভাষা বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে জিনিস ক্রমশ বাড়তে থাকে সে জিনিস অবশ্যই শুদ্ধ ও পবিত্র হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। জাকাতের এত অর্থ থাকা সত্ত্বেও শরিয়েতের দৃষ্টিতে শব্দটি ধন-সম্পদে আল্লাহ কতৃক নির্দিষ্ট ফরজ অংশ বোঝানোর জন্য ব্যবহার হয়েছে। আর হকদারকে সে সম্পদ দেওয়ার প্রক্রিয়াকে জাকাত বলা হয়।

ইমান নববী (রহ.) বলেন, ‘ধন-সম্পদ থেকে আল্লাহর নির্ধারিত সম্পদ বের করে দেওয়াকে জাকাত বলার কারণ হলো-এর বিনিময়ে সম্পদ ক্রমশ বাড়তে থাকে আর জাকাতদাতা অনেক বিপদ আপদ থেকে পবিত্র থাকে।’

জাকাত কীভাবে মানুষকে পরিশুদ্ধ করে

জাকাত মানুষকে দুই ধরনের বিপদ থেকে সুরক্ষা দেয়। প্রথমত আখেরাতের জবাবদিহি থেকে। দ্বিতীয়ত দুনিয়ার বালা মুসিবত থেকে। এ কারণেই জাকাতের দ্বিতীয় অর্থ হলো পবিত্রতা বা শুদ্ধতা। অন্য একজন ইসলামিক স্কলার লিখেছেন, ‘জাকাতের মাধ্যমে ব্যক্তি দুই ধরনের পবিত্রতা অর্জন করে। প্রথমত সে তার সম্পদ পবিত্র করে। দ্বিতীয়ত তার মন-মনন কৃপণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা বিদ্বেষ মুক্ত হয়ে যায়।’ বিষয়টি ইমাম ইবনে তাইমিয়া আরও চমৎকার করে বলেছেন-‘জাকাত দেওয়ার ফলে দাতার মন আত্মা নির্মল-পবিত্র হওয়ার কারণে তার ধন-সম্পদে আল্লাহ বরকত দেন এবং তা দিন দিন বাড়তে থাকে।’ কারজাভি বলেন, ‘এই বৃদ্ধি কেবল ধনসম্পদে নয়, ব্যক্তির মন-মানসিকতা, ধ্যান-ধারণায়ও প্রভাবিত হয়। ফলে জাকাতদাতা দিন দিন উন্নত রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ হয়ে ওঠেন।’

দারিদ্র্যমুক্ত অর্থনীতি গড়তে জাকাতের ভূমিকা সম্পর্কে

জাকাতের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। ইসলামে সম্পদ বণ্টনব্যবস্থায় ধনীরা তাদের সম্পদের কিছু অংশ জাকাত দিলে গরিবদের সম্পদ কিছুটা বেড়ে যায় এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হয়। জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা মহানবি (সা.)-এর আদর্শ মদিনা রাষ্ট্র, খোলাফায়ে রাশেদিনের শাসনামলে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য বিমোচন করে মুসলিম উম্মাহকে সমকালীন বিশ্বে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত জাতিতে পরিণত করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) সব সময় আল্লাহর কাছে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির প্রার্থনা করতেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করতেন। জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সমাজকে দারিদ্র্য থেকে উদ্ধার করতে চায়। কিন্তু দেশে যেভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টন করা হয়, এতে জাকাতগ্রহীতা স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের পেশা বা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে না। দেশের আদায়যোগ্য জাকাতের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকারও বেশি হতে পারে; যা দিয়ে প্রতিবছর পাঁচ লাখ লোকের পুনর্বাসন সম্ভব। পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে এভাবে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। তাই সমবেত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী জাকাত আদায় ও তার যথাযথ বণ্টন করা প্রয়োজন।

ইসলামি শরিয়ত মতে কার কার ওপর জাকাত ফরজ?

জাকাতের নেসাব হলো, সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ব্যাংকে জমাকৃত যে কোনো ধরনের টাকা, ফিক্সড ডিপোজিট হলে মূল জমা টাকা অথবা সমমূল্যের ব্যবসার পণ্য থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে। স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও বুদ্ধিসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী যার কাছে ঋণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও প্রয়োজনীয় খাদ্য-বস্ত্রের অতিরিক্ত সোনা, রুপা, নগদ টাকা, প্রাইজবন্ড, সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, শেয়ার ও ব্যবসায়িক সম্পত্তির কোনো একটি বা সবকটি রয়েছে, যার সমষ্টির মূল্য উল্লিখিত নেসাব পরিমাণ হয়, তিনিই সম্পদশালী। এ পরিমাণ সম্পদ এক বছর স্থায়ী হলে বা বছরের শুরু ও শেষে থাকলে বছর শেষে জাকাত দিতে হবে।

কাকে জাকাত দিতে হবে?

পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতে জাকাতের খাত হিসাবে আট শ্রেণির লোকের কথা বলা হয়েছে। যথা : ফকির-যার মালিকানায় জাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, যদিও সে কর্মক্ষম বা কর্মরত হয়। মিসকিন-যার মালিকানায় কোনো ধরনের সম্পদই নেই। আমিল বা জাকাত উসুলকারী-ইসলামি রাষ্ট্রের বায়তুল মাল কর্তৃক জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত কর্মকর্তা। নওমুসলিমদের পুনর্বাসনের জন্য জাকাত দেওয়া যায়। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যার এ পরিমাণ ঋণ রয়েছে যে, ঋণ আদায় করার পর তার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে না। আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তি। যেসব মুসলমান যুদ্ধে, জ্ঞানার্জনে কিংবা হজের পথে রয়েছেন এবং তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থসম্পদ নেই। মুসাফির-কোনো ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও কোথাও সফরে এসে সম্পদশূন্য হয়ে পড়লে, সে বাড়িতে পৌঁছাতে পারে-এমন পরিমাণ জাকাত প্রদান করা যাবে। এ আট খাতের সব খাতে অথবা যে কোনো একটি খাতে জাকাত প্রদান করলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে।

কাকে জাকাত দেওয়া যাবে না?

নির্ধারিত আটটি খাতের বাইরে অন্য কোনো খাতে জাকাত দেওয়া যাবে না। কেউ যদি দিয়েও ফেলে তবুও জাকাত আদায় হবে না। নিকটাত্মীয়দের জাকাত দেওয়া উত্তম। তবে সন্তান বা তার অধস্তনকে, মা-বাবা বা তাদের ঊর্ধ্বতনকে এবং স্বামী-স্ত্রীকে জাকাত দেওয়া যায় না। মহানবি (সা.)-এর বংশের কাউকে জাকাত দেওয়া যায় না। জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে টাকা বা সম্পদের পূর্ণ মালিকানা জাকাতগ্রহীতাকে দিতে হবে। তাই যেসব ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিমালিকানা হয় না, যেমন-মসজিদ, রাস্তাঘাট, মাদ্রাসার স্থাপনা, কবরস্থান, এতিমখানার বিল্ডিং-এসব তৈরির কাজে জাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে না।

আমরা সব সময় বলি, জাকাতের মাধ্যমে ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করে দিন। যেন কয়েক বছর পর সে আর অভাবী না থাকে। বরং সে নিজে জাকাতদাতা হয়ে যায়। এভাবে জাকাত দিলে জাকাতের সুফল দ্রুত দৃশ্যমান হবে।

Source: https://www.jugantor.com/todays-paper/features/islam-and-life/662975/%E0%A6%A7%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A4
Khan Ehsanul Hoque

Daffodil International University
01847334702
fd@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd